শাপলা এই ফুলের নাম আমরা অনেকেই শুনেছি কিন্তু খাবার হিসেবে এটি কতটা উপযোগী? খাদ্যগুণ? এগুলো কি আমরা জানি?
শাপলা বাঙালির বেশ পুরোনো হারিয়ে যাওয়া খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম।
দূর্গা পুজোর সময় দশমীর দিন শাপলার নাল (stalk), কচু শাক এবং পান্তা ভাত ভোগ দেওয়া রীতি এখনও প্রচলিত আছে।
ইতিহাস অনুযায়ী পুজোর তিনদিন খুবই ভালো খাবার খাওয়া হতো তাই শেষের দিন পেট ঠান্ডা রাখার জন্য এই বিশেষ ভোগের আয়োজন হতো।
এতো কিছু থাকতে বাঙালির খাদ্যতালিকায় হঠাৎ এই ফুলের সংযুক্তি কেন ঘটলো? ভেবে দেখেছেন?
প্রথমত,
অথনৈতিক দিক থেকে এটি সহজলভ্য এবং সস্তা। শাপলার নাল রান্না করার ঝামেলাও বিশেষ কিছু নেই।
একটু সরষে বাটা, পরিমাণ মতো তেল, নুন, ঝাল আর ইচ্ছে হলে চিংড়ি সাথে নারকেল ব্যাস্ সুস্বাদু শাপলা চচ্চড়ি তৈরি।
দ্বিতীয়ত,
এই সুন্দর ফুলের রয়েছে অসাধারণ কিছু খাদ্যগুণ।
1) ফাইবার থাকার কারণে কলেস্টেরল লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
2) এন্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনল বেশ ভালো মাত্রায় আছে এটিতে। বিজ্ঞানীদের মতে, যা ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখতে এবং রক্ত চলাচলে সাহায্য করে।
3) কিডনির কার্যকারিতা সঠিকভাবে সঞ্চালনে সাহায্য করে।
4) মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যেমন আয়রন যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে এটিতে উপস্থিত ফলস্বরূপ অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্য বেশ উপকারী।
এছাড়াও সোডিয়াম কিছুটা কম এবং পটাশিয়াম বেশি পরিমাণে থাকায় ব্লাড প্রেসারের রোগীদের জন্য কার্যকরী।
5) জলজ উদ্ভিদ তাই জলের পরিমাণও নেহাত কম নয়।
(6) ভিটামিন E (টকোফেরল) যা একপ্রকার প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধী ভিটামিন নামে পরিচিত শাপলায় আছে।
7) এন্টিকারসিনোজেনাস হওয়ায় এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
উপকরণ
1) শাপলা ফুলের ডাটা।
2) সরষে বাটা।
3) চিংড়ি মাছ।
4) নারকেল।
5) কাঁচালঙ্কা।
6) সরষের তেল।
7) নুন, হলুদ পরিমাণমতো।
প্রণালী
শাপলার ডাটা সমান করে কেটে আঁশ ছাড়িয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর কড়াইতে তেল গরম করে শাপলার ডাটা নিয়ে কিছু সময় রাখতে হবে। সেদ্ধ হয়ে গেলে সরষে বাটা, চিংড়ি মাছ ভাজা নারকেল মিশিয়ে দিতে হবে। পরিমাণ মতো নুন, হলুদ আর কাঁচালঙ্কা ছড়িয়ে নিলেই তৈরি শাপলার ডাটা চচ্চড়ি।
বাঙালির রান্নাঘর থেকে হারিয়ে যাওয়া কিছু সহজলভ্য এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবারের মধ্যে অন্যতম এই শাপলা। যা বারবার আমাদের মনে করিয়ে দেয় বাঙালির রন্ধনশৈলী সর্বদাই সেরা।