পাহাড় আমায় দিচ্ছে ডাক,
সব মনখারাপী নিপাত যাক!
জটিল জীবন পিছনে ফেলে,
হারিয়ে যাবো সেথায় গেলে!
সাউথ সিকিমের ছোট্ট পাহাড়ী শহর রাবাংলা। প্রায় ৮০০০ ফুট উঁচুতে শান্ত, কুয়াশামাখা, নিঝুম ভ্রমণক্ষেত্র। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে গাড়িতে কয়েকঘন্টা সময় লাগে। পাকদণ্ডী বেয়ে ওঠার সময়ে পাহাড়ী রাস্তার দুইধারের প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করার অনুভূতি অন্যরকম। ২০১৭এর এপ্রিলে গেছিলাম। আমাদের মুগ্ধ করেছিলো রাবাংলা। ওখানে মাঝেমাঝে ছিপছিপে বৃষ্টি হতেই থাকে। পাহাড়ী লোকজনেরা বড় রঙিন ছাতা ব্যবহার করে, দেখতেও সুন্দর লাগে। ওখানে পৌঁছে আমার অনুভূতি হচ্ছিলো যেন মেঘেদের বাড়িতে এসেছি। সেদিন বিকেলে হোটেলের কাছাকাছি মার্কেটে ঘুরেছিলাম। কাঠের বাড়িগুলো দেখতে অসাধারণ লাগছিলো, দূর থেকে মনে হচ্ছিলো রঙিন খেলনাবাড়ি যেন। ফুলগাছের টব রয়েছে বেশিরভাগ বাড়ির সামনেই। রডোডেনড্রন দেখেছিলাম। ছিলাম যে হোটেলে সেটাও কাঠের, জানালা খুললে ঘরের ভিতরে কুয়াশা ঢুকতো দিনের বেলাতেই। সামনে পাহাড়, সবুজ গাছগাছালি চোখ জুড়িয়ে দেয়। সময়টা এপ্রিল হলেও ভালো ঠান্ডা ছিলো। গরম থুকপা, ফালে, মোমোর অতুলনীয় স্বাদ পেয়েছিলাম।
ফোনের নেটওয়ার্ক ওখানে সক্রিয় নয় (দুয়েকটা কোম্পানি ছাড়া), তাই শহুরে জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কয়েকটা দিন কাটাতে দারুন লাগছিলো। দ্বিতীয়দিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে গাড়ি নিয়ে আমরা গেছিলাম টেমি টি গার্ডেন দেখতে। চা-বাগানের ধূমায়িত চা পানের অভিজ্ঞতা হয়েছিলো।
সাজানোগোছানো বুদ্ধ পার্কের স্বর্গীয় সৌন্দর্য স্মৃতিপটে আজও অমলিন। এটি রাবাংলার অন্যতম একটি আকর্ষণ। পাহাড়ের সামনে ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের বিরাট মূর্তির কাছে যেতে অনেকগুলো সিঁড়ি পার করার পরে এমন একটা প্রশান্তি আসে মনে হয় বারবার ফিরে যাই।
আমরা চারধাম গেছিলাম, বেশ কিছু পর্যটক ছিল, ভালো লেগেছিলো। স্পটগুলোর অসাধারণ মায়াবী পরিবেশ ফটোগ্রাফির জন্য আদৰ্শ। গাড়িতে যাতায়াতের সময়েও জানালার কাঁচ নামালে ক্যান্ডিফ্লসের মতো কুয়াশার আনাগোনা মন ভালো করে দেয়।
ওখানকার অন্যতম বৃহৎ রালং মোনাস্ট্রিতে বুদ্ধসন্ন্যাসীদের পূজাপাঠ দেখার পাশাপাশি দুপুরে লাঞ্চ করার সুযোগ হয়েছিলো, ভাত ও অন্যান্য খাবারের সাথে ছিল প্রত্যেকের জন্য কমলালেবু এবং ন্যুডলস।
এছাড়াও বিভিন্ন মোনাস্ট্রি, গার্ডেন, হট স্প্রিং রয়েছে দেখার জন্য। ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স ঘোরার জন্য রোপওয়ে আছে। একঘেয়ে জীবনযাপন থেকে কয়েকটা দিন বিরতি নিয়ে নিরিবিলিতে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হবার জন্য রাবাংলা উপযুক্ত গন্তব্য হতেই পারে।
সমতলে থাকি বটে, আমার মনটা থাকে পাহাড়েই।
লেখাটি সুন্দর স্মৃতি রোমন্থন করালো। খুব ভালো লাগলো, মনটা খশিতে ভরে গেল ?
ধন্যবাদ ?