|| কেপটাউন টেস্টে বল বিকৃতি ||
হার না মানতে পারাটা খুব মারাত্মক আর ভয়ানক। হার না মানার জেদ মানুষকে চরিত্রবিরোধী কাজ করতে বাধ্য করে অনেক সময়, তারই উদাহরণ স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নাররা। এতগুলো ক্যামেরা ফাঁকি দিয়ে তারা যে বল ট্যাম্পারিং করার কথা ভেবেছে এটা ভাবতেই কেমন লাগছে। দুজনের ক্রিকেট প্রতিভা নিয়ে গোটা বিশ্বে কারোর সন্দেহ নেই। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বরাবরই হারতে অপছন্দ করে। তাদের চরিত্রে “জিততেই হবে” একটা মানসিকতা রয়েছে। আর এই মানসিকতায় বিপদ টেনে আনল স্মিথ-ওয়ার্নারের ক্রিকেটীয় জীবনে। স্মিথ-ওয়ার্নার-ব্যানক্রফটের মিলিত বল বিকৃতি নিয়ে তোলপাড় এখন ক্রিকেট বিশ্ব। ব্যাপারটা শুধু অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সীমাবদ্ধ নেই।
এক বছরের জন্য স্মিথ আর ওয়ার্নারকে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত করেছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড। সাথে ২৪ মাস অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দেওয়া থেকে সাসপেন্ড। আইপিএল থেকেও তাদেরকে এবছর সাসপেন্ড করা হয়েছে। ব্যানক্রফটকে ন’মাসের জন্য নির্বাসিত করেছে অস্ট্রেলীয় বোর্ড। সব মিলিয়ে তিনজনের শাস্তির যোগফল ৮১ মাস। এক বছর ক্রিকেট খেলতে না পারার জন্য স্মিথ আর ওয়ার্নার হারালো ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা।
কেপটাউন কেলেঙ্কারির পর অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের পক্ষে সেই পুরনো খ্যাতি, ঔদ্ধত্য ফিরে পাওয়া প্রচণ্ড কঠিন বলে মনে করছেন মাইকেল হাসি। স্মিথ-ওয়ার্নার-ব্যানক্রফটকে যে কঠিন শাস্তি দিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড সেটা নাহয় ছেড়েই দিলাম। তবে মিডিয়া যেভাবে ওদেরকে একের পর এক প্রশ্নের মুখে ফেলছে তা সত্যিই ভীষণ কষ্টদায়ক ও লজ্জার। যতই হোক মানুষগুলো নিজের ভুল স্বীকার করেছে। এরচেয়ে বেশি তারা আর কিই বা করতে পারে! সাংবাদিক বৈঠকে কেঁদেছেন স্মিথ ওয়ার্নার উভয়েই। যে দাগ পড়ে গেল ওদের রঙিন ক্রিকেটীয় জীবনে তা সত্যিই সহজে ওঠার নয়। ওয়ার্নারকে কখনো আর অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে দেখা যাবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। স্মিথ এখন পরিবার সমেত আমেরিকায়।
দেশে টিকে থাকতে পারলো না। একটা ক্রিকেটারের জীবনে এরচেয়ে খারাপ দিন আর কী হতে পারে! ক্রিকেটে বল ট্যাম্পারিং নতুন নয়, আগেও হয়েছে। তবে তার কারণে বিশ্বজুড়ে এমন তোলপাড় কখনো হয়নি। মাইকেল ভন একটা দীর্ঘ টুইট করেছেন, “স্টিভকে আমি ভদ্র মনে করি। যে কিনা একটা বিরাট ভুল করেছে। শাস্তি ওর প্রাপ্য ছিল। তবে ওর জন্য এটা কর্কশ শাস্তি হয়ে গেছে…”
সৌরভ, শচীন, রোহিতরাও তিন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারের পক্ষেই টুইট করেছেন। আসলে ভুল তো প্রত্যেক মানুষেই করে। ভুল করেনি কখনো এমন মানুষ তো নেয়। ওরা তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে, ক্ষমাও চেয়েছে। এখন আমাদের উচিৎ তাদেরকে তাদের মতোই ছেড়ে দেওয়া। জানিনা ওয়ার্নারকে কখনো আর অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে দেখবো কিনা! ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য তাদের এই নিবার্সনটা মেনে নেওয়া সত্যই কষ্টকর। এবছর না হোক আশা করবো পরের বছর জাতীয় দল ও আইপিএল উভয়েই আবার ফেরত পাবো নির্বাসিত ক্রিকেটারদের। স্মিথ, ওয়ার্নার যে মাপের ব্যাটসম্যান তাদেরকে ক্রিকেটে ফেরত আনার জন্য তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত প্রত্যেক ক্রিকেট ভক্তের। যাই হোক ওরা টাকা নিয়ে দেশ বিক্রি করেনি। ওরা যা করেছে সবটাই জেতার লোভে। তার শাস্তি ওরা পেয়েছে।