LaughaLaughi

You Create, We Nurture

Emotional

শহরের অন্তরালে পর্ব – ৩

শহরের কোণায় কোণায় লেগে থাকা চিরপরিচিত এক গল্প―

‘বরখ্যাদানো দিদি, দু’টা বুন, একটো ভাই…’ এই একটাই কথা পলাশের মুখে। বাঁকুড়ার ছেলে পলাশ, সেই দশ বছর বয়স থেকে এই কলকাতা শহরে ওর বাস। না, বাকিদের মতো পড়াশোনার তাগিদে নয়, বরং পেট চালানোর জন্যই এই শহরে আসা।

ছোটোবেলায় বলত, ‘বাপটো নেশা করে এসে মাটোরে দমে পেটা…’। এখন আর বলে না। বলবে যে তার সময়ই বা কই! হাজরা মোড়ে বিট্টুদার দোকানের ওই তো ভরসা। মাস গেলে বাড়িতে টাকা পাঠালে তবেই তো বাঁঁচবে ওর পরিবার।

তবে ওর পরিবার কোনটা? সেই বাঁকুড়ার ভিতরকার পিছিয়ে পড়া অন্ধকার গ্রামে, নাকি এই সোনা ঝকঝকে কলকাতায় শহরে? পলাশ নিজেও বুঝে পায় না এর উত্তর।

তার পরিবারের মানুষগুলো বছরে একবার হয়তো খোঁজ নেয়, তাও বা কখনো টাকা পাঠাতে দেরি হলে। যে দিদিকে ও টাকা পাঠায় পুজোয় শাড়ি কিনতে, সে এখন ওই টাকা সরিয়ে রাখে বরের হাতে তুলে দেবে বলে। যে মায়ের জন্য ও নিজের দেশ ছেড়ে এসে উঠেছে এই শহরে, সে এখন পড়ে পড়ে মার খায় ওই নেশাখোর বাপটোর কাছে। যে ভাইবোন আজ দাদার মুখটাও ভুলতে বসেছে, তারাই কি পরিবার?

নাকি এই শহরের বাবুগুলা, যারা একদিন পলাশের দেখা না পেলে তার খোঁজ নেয়, যে বিট্টুদা পুজোতে দুটো করে জামা দেয়, আর যে ‘পলাশ’রা আজও খাবার সময়, শোবার সময় তার খোঁজ করে তারা? এরাই কি নয় আসল পরিবার?

এই শহরটা সত্যিই হয়তো সোনা ঝকঝকে। তাই এই শহরটাই আজও পলাশদের জায়গা দেয়, তাদের একটা পরিবার দেয়…

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Editorial Team of LaughaLaughi