‘পিছুডাক’ নাকি বড্ড বাজে জিনিস! যাত্রার সময় পিছুডাক শোনা মাত্রেই, সে’দিনের সব কাজ নাকি ভন্ডুল হয়ে যায়! সবটাই যদিও শোনা কথা, তবু… যেচে পড়ে কেই বা নিজের কাজ মাটি করতে চায়! তাই ‘পিছুডাক’ ব্যপারটাতে আরব্ধ ঘোষালের বড্ড অ্যালার্জি।
কিন্তু কথায় বলে না, যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যে হয়। আরব্ধর জীবনেও হুবহু সেই নীতিটাই প্রচলিত ছিল যেন।
– “মা, আসছি…”
– “ওহ্ বাবাই, টিফিনটা নিলি না? এতো তাড়াহুড়ো করিস না তো, আস্তে যা।” চারবছর আগের কথা, দিনটা ছিল অফিসের প্রথম দিন। একদিকে আরব্ধ বেশ নার্ভাস, আর বাড়ি থেকে বেরোতেই মায়ের পিছুডাক; সে খানিকটা বিরক্তির সুরেই বলেছিল, “তোমাকে সেই পিছুডাক ডাকতেই হল, তাই না! কী যে করো না মা?” কিন্তু প্রতিমা দেবী! তিনি নাছোড়;
একগাল হেসে বেশ মজা করেই বলেছিলেন, “মায়ের পিছুডাক তো আশীর্বাদ রে পাগল ছেলে, দেখবি সব ভালো হবে।” ঠিকই তাই, প্রথম দিন অফিসে গিয়েই বেশ কিছু ভালো সহকর্মীর সান্নিধ্য পেয়েছিল আরব্ধ; সে এও আবিষ্কার করেছিল যে অফিসের ম্যানেজার বাবু মানুষটিও বড্ড ভালো, মাটির মানুষ। সে’সময় নতুন একটা পরিবেশে গিয়ে মানিয়ে নিতে কোন অসুবিধাই হয়নি তার। দিব্যি কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো, মায়ের পিছুডাক আরব্ধর কাছেও অনেকটা অভ্যাসের মত হয়ে গিয়েছিল।
কয়েক মাস পরের কথা, জরুরি কাজে ক’দিনের জন্য তার শহরের বাইরে যাওয়ার কথা; ওদিকে প্রতিমা দেবী তখন বাপের বাড়িতে। মায়ের সাথে দেখা না করেই তাকে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। পরদিন সকাল আটটা নাগাদ আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে আরব্ধর বাবার কাছে, আরব্ধ তখন হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে।
ছেলের অ্যাক্সিডেন্টের খবর পেয়েই ছুটে গিয়েছিলেন মানুষটা। তারপর প্রায় পনেরো দিন পেরিয়ে গেছে, আরব্ধ বাড়িতে ফিরেছে, দেখা করতে এসেছেন অফিসের অনেকেই। ওদিকে প্রতিমা দেবী রীতিমত অপরাধীর মতো মুখ করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
বাড়ি ফেরার পর আরব্ধর মুখে প্রথম কথাটাই নাকি ছিল, “কেন যে তুমি ছিলে না মা? পিছুডাক শোনা হয়নি, দেখ কী হল!”
Leave a Reply