নিজের ছেলে

স্ত্রী বিয়োগের পর একাই থাকেন নিশিকান্ত বাবু, ছেলে আছে তবে সে বাইরে থাকে, আগে ঘনঘন আসতো কিন্তু এখন আর সময় হয় না, ফোন করে বাবাকে মাঝে মধ্যে খোঁজ নেই এই ব্যাস…

বয়স ওনার বেশ হয়েছে, ধুঁকে ধুঁকে চলেন কাজ-কামের জন্য সুনীতা আছে, নিজের মেয়ে নেই তাই মেয়ের মত স্নেহও করেন। সুনীতা সকালেই চলে আসে, ঘর পরিষ্কার থেকে শুরু করে গোছানো, খাওয়া-দাওয়ার বানানো, সমস্ত হাতের কাছে রেডি করে দিয়ে তারপর একদম দুপুরে বাড়ি ফেরে আবার সন্ধ্যার দিকে চলে আসে কাজে। সময় পেলে গল্প করে জেঠুর সাথে।

একদিন সন্ধ্যাবেলা,

—জেঠু সকালে যে ছেলেটা পেপার দিতে আসে তুমি ওকে প্রত্যেকদিন ডেকে চা খাওয়াও ওর সাথে কী কথা বলো গো?

—তুই কি বুঝবি আর! ও ছেলেটা বড্ড গরীব বাড়ির, বাবা মা বোন ঠিকঠাক দু’বেলা খেতে পায় না।

—তো এই কথা গুলো জানতে চাও?

—নাহ্! আমি ওকে বলি ওদের পরিবার যেনো আমার এ বাড়িতে এসে থাকে, মাথায় পরিপক্ব একটা ছাদ থাকবে তবে।

—মানে!! এ কি কথা? দাদাবাবু শুনলে কি বলবে?

—রমেশ ছেলেমানুষ, ও কিছু ভাববে না। ও ওর বাবাকে চেনে…

—না জেঠু যাই হোক ও তোমার নিজের ছেলে…

—নিজের ছেলেকে তো মানুষ করলাম সে কি আর… ছাড়।

দূরে থাকে নিজের কাজে ব্যস্ত। এই ছেলেটা বেশ ভালো ওকে আমি নিজের মতো করে ভালোবাসতে চাই, ভালো বেশ ও।

দাদাবাবু যতবার এসেছে দেখেছি, কিন্তু জেঠুর কথা মত মনে হয়নি। কি জানি কি ব্যাপার? মনে মনে ভাবতে থাকে সুনীতা।

অনেকবার দেখেছে, জেঠু ছেলেটাকে আসতে বলে কিন্তু ছেলেটা,

—নাহ্ দাদু এটা কি করে হয়, আমি এমনিতেই আসবো তুমি সাবধানে থেকো সুস্থ থেকো আমি তো প্রতিদিন খোঁজ নেবো, আসবো। বলে তারপর ফিরে যেত। কিন্তু জেঠু বারবার বলতো…

 

চলতে থাকে এভাবেই, মাস খানেক পর কাজে যেতে যেতে হঠাৎ সকালে কোলাহল কি ব্যাপার কি হলো?

পাশের বাড়ির দিদি,

—জেঠু কাল রাতে পড়ে, মাথায় ধাক্কা খেয়েছে।

 

নিথর হয়ে পড়ে আছে দেখে, চোখ ভিজে গেলো সুনীতার…

হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখে সেই ছেলেটি, মানে সেই পেপার দিতে আসা ছেলেটিও বুড়ো মানুষটার জন্য কাঁদছে।

—ওই বোধ’য় প্রথম দেখেছে বুঝলি সুনীতা।

কষ্টের মাঝে জেঠুর কথা ভেবে হেসে ফেলল সুনীতা,

—হায় বিধাতা! একি পরিহাস।

 

 

 

Facebook Comments Box

Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *