LaughaLaughi

You Create, We Nurture

Emotional

আপোষ! নাকি মনের দুর্বলতা?

“আপোষ করে তো ভিতু মানুষ, আপোষ করে তো মেরুদন্ড হীন প্রাণী।”

হ্যাঁ, খানিকটা এই ধরনের কথাই বলে গেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের একজন কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি। কিন্তু কথাটা কী আদৌ ঠিক! আপোষ করা, বা মানিয়ে চলাটা কী আদৌ লজ্জার? আদৌ কী আপোষ করা মানেই হেরে যাওয়া? নীচু হয়ে যাওয়া! এই প্রসঙ্গেই একটা ছোট্ট গল্প মনে পড়ে গেল। দুই বন্ধুর গল্প, দুই আত্মসচেতন মানুষের গল্প যাদের পরিণতি যেকোন সংবেদনশীল মানুষের চোখে জল আনতে বাধ্য। গল্পটা ঋষভ আর আদৃতার। ছোটবেলার থেকেই এক পাড়ায় থাকার দৌলতে একসাথেই বড় হয়ে ওঠা ওদের। পাড়ার ডানপিটে মেয়ে হিসেবে পরিচিত আদৃতার বেশিরভাগ সময়টাই কেটে যেত বাড়ির বাইরে। কখনও পাশের বাড়ির ছাদে শুকোতে দেওয়া আচার চুরি, তো কখনও পাড়ার দাদাদের সাথে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বল ড্রেনে পাঠানো, কখনও আবার পথের ধারে পড়ে থাকা বিড়াল ছানাকে কোলে তুলে বাড়ি নিয়ে আসা; এই সব কান্ড করেই পাড়ার পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিল মেয়েটা। ওদিকে ঋষভ! তার কথা বলতে গেলে একটু ভাবতে হবে বৈকি।

ঋষভ ছিল সেন বংশের একমাত্র সন্তান। বাবা রুদ্রনাথ সেনের দাপটে যখন পাড়ার সবাই সেন বাড়িকে একটু এড়িয়েই চলতে পছন্দ করতো, তখন আদৃতাই ছিল একমাত্র যার অবাধ বিচরণ ছিল সেন বাড়ির অন্দরমহলে। আর এই প্রশ্রয়ের কারণ ছিলেন রুদ্রনাথ বাবু নিজেই। আজকালকার দিনে সবাই যখন ছেলে পাওয়ার জন্য হাপিত্যশ করে, ঠিক তখনই এই মানুষটার ভীষণ ইচ্ছে ছিল তার একটা মেয়ে হবে। মেয়ে হিসেবে মা লক্ষ্মীর আগমনের প্রত্যাশী ছিলেন মানুষটা। কিন্তু সময়কালে রুদ্রনাথ বাবুর বংশের প্রদীপ হয়ে আগমন হয় ঋষভের। না, একটু মনখারাপ হলেও ঋষভের ওপর কখনও নিজের সেই অপূর্ণ আশার প্রভাব পড়তে দেননি মানুষটা। তবে আদৃতার প্রতি নিজের বাৎসল্য উজার করে দেওয়ার থেকে নিজেকে আটকাতেও পারেননি। এমনকি মনে মনে আদৃতাকে নিজের হবু পুত্রবধূ হিসেবেও কল্পনা করে রেখেছিলেন মানুষটা। সেই থেকেই সমস্ত রকমের ছক ভেঙে সেন বাড়িতে একরকমের অবাধ আনাগোনা আদৃতার।

ঋষভ সম্পর্কে বলতে গেলে তার স্বভাবের কথাও বলাটা জরুরি। ছোটবেলা থেকেই সে আর আদৃতা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, দুই বিপরীত মেরুর মানুষ। আদৃতা যেমন ছটফটে, গল্পবাগিশ, মিশুক গোছের; ঋষভ ছিল তেমনই রাশ ভারি, গম্ভীর, এবং চুপচাপ স্বভাবের মানুষ। তবুও একসাথে থাকতে থাকতেই হোক, আর বিপরীত স্বভাবের জন্যই হোক; একটা সময় এরা দু’জনেই দু’জনের অভ্যাসে পরিণত হয়। দু’জনের মধ্যে আদৃতা যেমন ছিল সুবক্তা, তেমনই তার সাহচর্যে ঋষভ হয়ে উঠেছিল এক উৎকৃষ্ট মানের শ্রোতা যাকে নিজের মনের কথা বলে শান্তি পাওয়া যায়, যার থেকে যেকোন রকম সমস্যার কথা বলে তার উপযুক্ত সমাধান পাওয়া যায়। এভাবেই ওদের দু’জনের বন্ধুত্ব স্কুলের গণ্ডী পেরিয়ে কলেজের দোরগোড়ায় গিয়ে পৌঁছতেই সম্পর্কের সমীকরণ ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে। ঋষভ ক্রমশ দূরত্ব বাড়িয়ে আদৃতার সাথে। জীবনে প্রথম বারের জন্য প্রেম আসে ঋষভের।

মেয়েটির নাম ছিল দর্শনা। একসময় কলেজের ক্লাসরুম থেকে শুরু করে করিডর পর্যন্ত, সমস্তটা জুড়ে ঋষভ-দর্শনা নামের চর্চা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যেন শরতের আকাশে পেঁজা তুলোর মতো খানিকটা মেঘ, অথবা একফোঁটা জলের স্পর্শে ছড়িয়ে যাওয়া খানিকটা রং। কলেজ জীবন শেষ হওয়ার পর দর্শনা যখন উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক তখনই ঋষভের বাড়ি থেকে ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে উপস্থিত হন স্বয়ং রুদ্রনাথ সেন। বিয়ের ব্যাপারে নিমরাজী হলেও নিজের মা-বাবার কথা সেদিন ফেলতে পারেনি দর্শনা। খানিকটা অনিচ্ছাকৃত হলেও বিয়েটা তখনকার মত হয়ে যায়। এই বিয়ের প্রস্তাব রুদ্রনাথ বাবু নিজে নিয়ে গেলেও পুত্রবধূ হিসেবে দর্শনাকে তেমন পছন্দ ছিল না তাঁর। কিন্তু ছেলের জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছিলেন মানুষটা। আর আদৃতা! ঋষভের বিয়ের প্রায় এক বছর আগেই সে বালুরঘাট শহর ছেড়েছিল। পরিস্থিতির সাথে একরকমের আপোষ করে নিয়েছিল মেয়েটা। নিজের জায়গা দখল হতে দেখে সেদিন ধীর পায়ে সরে আসাটাই ঠিক বলে মনে করেছিল সে। ওদিকে কলেজ জীবনটা পার করেই নিজেদের পারিবারিক ব্যবসার কাজে হাত লাগায় ঋষভ। প্রায় চল্লিশ বছরের পুরোনো হার্ডওয়ারের দোকান। সারাদিনের ব্যস্ততার পর দর্শনার জন্য সময়ই বের করতে পারতো না সে। ওদিকে দর্শনার মতো বইপাগল, ক্যারিয়ার নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী একটা মেয়ের পক্ষেও দিনের পর দিন বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে বন্দি হয়ে থাকাটা অস্বস্তিকর হয়ে উঠছিল।

এরপরেই আসে সেই চরম মুহূর্ত যখন ঋষভের একটা ছোট্ট ভুলের জন্য বদলে যায় গোটা দুটো জীবন। না, দুটো জীবন বললেও ভুল বলা হবে। সেদিন ঋষভের ছোট্ট একটা ভুল তিনজন মানুষকে এক অদ্ভুত জায়গায় এনে দাঁড় করায়। এতে কারো খারাপ বা ভালো হয়েছিল কিনা, তা বলা খুব কঠিন। তবে যা হয়েছিল, তা হয়তো না হলেও পারতো। ঋষভ নিজের স্কুটি করে বাড়ি ফিরছিল সেদিন। স্কুল লাইফ থেকেই স্কুটি চালিয়ে অভ্যস্ত যেই ছেলেটা, তাকে আনকোরা ভাবার কোন কারণই নেই! তবু কপালে দুর্ভোগ থাকলে যা হয়। একে বৃষ্টির সন্ধ্যে, তার ওপর মাথায় নেই হেলমেট। হঠাৎ করেই বাড়ির কাছে বড়রাস্তার মোড়ে বাঁক ঘুরতে গিয়ে স্কুটিটা স্লিপ করে সোজা ধাক্কা মারে পাশের ওয়ালে। কয়েক সেকেন্ডের একটা ঘটনা হঠাৎই শয্যাশায়ী করে দিয়ে যায় একটা সুস্থ সবল ছেলেকে। শিড়দাঁড়ার আঘাত নিয়ে সেদিন নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিল ঋষভ। কিন্তু সামনেই যে এরচেয়েও ভয়ঙ্কর আঘাতটা তার জন্য অপেক্ষা করে ছিল, সে কথা বিন্দুমাত্র বুঝতে পারেনি ছেলেটা। দর্শনার চলে যাওয়ার খবরটা নার্সিংহোমে শুয়ে থাকাকালীনই পৌঁছে যায় ঋষভের কানে।

এবার আসি দর্শনার প্রসঙ্গে। বিয়ের পর থেকেই খানিকটা একাকীত্ব গ্রাস করেছিল মেয়েটাকে। কলেজে পড়ার সময় যে মেয়েটিকে ভালোবেসেছিল ঋষভ, এ যেন শুধুই তার প্রতিচ্ছবি! আসল মানুষটাই নিরুদ্দেশ! শ্বশুর বাড়ির নতুন, অপরিচিত পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার সমস্যা যেমন অস্থির করে তুলছিল দর্শনাকে; তেমনই আবার মনে মনে উচ্চ শিক্ষার এক অদম্য ইচ্ছা, আর আত্মনির্ভর হওয়ার প্রবল তাগিদও তাকে মরিয়া করে তুলেছিল। সেই তাগিদেই বিয়ে ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নেয় দর্শনা। ঋষভ তখনও নার্সিংহোমে। ওদিকে ডিভোর্স চেয়ে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা করে নিজের বাড়িতে চলে যায় দর্শনা। সমস্তটা জানার পর ঋষভও কোনরকম আপত্তি না করেই ডিভোর্স পেপারে সাইন করে মুক্তি দেয় তার স্ত্রীকে। কিন্তু সমস্যাটা শুরু হয় এর পর।

সময় যেতে থাকে, বিলের অঙ্কে একটার পর একটা শূন্য জুড়তে থাকে নির্দিষ্ট সংখ্যার পরে; কিন্তু ঋষভের অবস্থার যেন পরিবর্তন নেই। বরং ভালো হওয়ার বদলে গ্রাফটা হঠাৎ করে খারাপের দিকে এগোতে থাকে। ডাক্তারবাবুরা জানান যে ঋষভের নাকি বাঁচার ইচ্ছেটাই চলে গেছে। মা, বাবা, সবাই হামলে পড়েন একমাত্র ছেলেকে বাঁচানোর তাগিদে। ডাক্তারবাবুর অনুমতি নিয়ে ছেলেকে বাড়ি আনার ব্যবস্থা করেন রুদ্রনাথ সেন। বাড়িতে সর্বক্ষণের নার্স রাখা হয়। রুদ্রনাথ বাবুর স্ত্রী দিনরাত ছেলেকে আগলে পড়ে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু ঋষভের শারীরিক অবস্থার তেমন কোন উন্নতি চোখে পড়ে না কারোরই। এরমধ্যে হঠাৎ করে একদিন সকাল-সকাল হন্তদন্ত হয়ে, আদৃতা এসে উপস্থিত হয় সেন বাড়িতে।
– কাকাই, ও কাকাই; কাকিমা, ওওওওও কাকিমা! কী করছ তোমরা? কোথায় গেলে সব? সবাই কী বলছে এসব?
– কী বলছে সবাই? (রুদ্রনাথ বাবুর গম্ভীর গলার প্রশ্ন)
– কাকাই, ঋষি… ঋষি…
– ওর ঘরেই আছে। তোর কাকিমাও ওখানেই আছে। কিন্তু গিয়ে কী করবি? ঋষভ তো কথা বলবে না মা!
– আমি আসছি কাকাই…

এক ছুটে মেয়েটা চলে যায় সেন বাড়ির অন্দরমহলে, ঋষভ সেনের ঘরে। এক পা, দু’পা করে এগোতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায় একসময়। “এ কী চেহারা হয়েছে মানুষটার!” ভাবতে ভাবতেই কলেজ জীবনের সেই শেষ দেখার দিনটার কথা মনে পড়ে যায় আদৃতার। যেদিন বালুরঘাট শহর ছাড়ে, সেদিন এই মানুষটা নব্য প্রেমিক হিসেবে বড্ড ব্যস্ত। পাঁচ থেকে ছ’মিনিটের শেষ দেখা, সাদা পাঞ্জাবি আর ব্লু ডেনিমে দারুন মানিয়েছিল মানুষটাকে। কিন্তু সেদিনের ব্যস্ততার মাঝে ওই একঝলক ভালোলাগাকে মনের মধ্যে ফিক্সড ডিপোসিট করেই রওনা দিয়েছিল আদৃতা। আশা ছিল আবার কখনও যদি দেখা করার সুযোগ হয়, সেদিন মিলিয়ে দেখবে ঠিক কতখানি সুদ জমা করার ক্ষমতা রাখে প্রেম! কিন্তু বর্তমান যে সব হিসেব গুলিয়ে দিলো! কোথায় সুদ? এ যে আসলটাও আর আগের মত নেই! ডুকরে কেঁদে ফেলে মেয়েটা। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় ঋষভের খাটের দিকে। খাটের একপাশে বসে শান্ত দৃষ্টিতে খানিকক্ষণ ছেলেটাকে দেখার পর যেন নিজের কাছেই বেহায়ার মতো প্রতিজ্ঞা করে বসে, “তোমাকে ভালো না করে যে আমার শান্তি নেই ঋষি! এতদিনের অপেক্ষার পর সুদ নয় নাই হোক, আসলটা যে আমায় ফিরিয়ে দিতে হবে!”

এরপর শুরু হয় এক নতুন লড়াই। একটা আপাত মরে যাওয়া মানুষকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে, জোর করে ফিরিয়ে আনার লড়াই। যে লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনাটা প্রবল, তবু জিতে যাওয়ার জেদ আর মনের জোরটাই সম্বল। আদৃতার চেষ্টায় সাহস ফেরে রুদ্রনাথ সেন ও তাঁর স্ত্রীয়ের মনেও। এই তিনজন মানুষ মিলে রীতিমত দিনরাত এক করে ঋষভকে সুস্থ জীবনে ফেরানোর চেষ্টা করতে থাকেন। কলকাতা এবং হায়দরাবাদের কয়েকজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করার পর ঋষভকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয় ট্রিটমেন্টের জন্য। সেখানে দীর্ঘদিন থাকার পর, সার্জারি এবং অন্যান্য ফিজিওথেরাপি ট্রিটমেন্ট করার পর একটা সময় গিয়ে সাড় আসে ঋষভের দেহে। আর তাতেই আশার আলো দেখে তার পরিবারের সদস্যরা এবং আদৃতা। কিন্তু এই আনন্দের মধ্যেও দুঃসময় যেন সেন পরিবারের সঙ্গ ছাড়ছিলই না। ট্রিটমেন্ট চলাকালীনই প্রমাদ গুণেছিলেন রুদ্রনাথ বাবু। আর্থিক অবস্থা ভালো হলেও বসে খেলে যেমন কুবেরের ভান্ডার ফুরোতে সময় লাগে না, তেমনই ট্রিটমেন্টের খরচ চালাতে গিয়ে একটা সময় পর কপর্দকশূন্য অবস্থা হয় সেন পরিবারের।

একদিকে চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে ক্রমশ সুস্থ হতে থাকা ছেলের পরিচর্যার চিন্তা, অন্যদিকে নিজেদের শূন্য ভাঁড়ারের বিদ্রুপ একরকমের স্বস্তি কেড়ে নিয়েছিল রুদ্রনাথ সেনের। ছেলেকে সুস্থ দেখার লোভ পেয়ে পেয়ে বসেছিল মানুষটাকে। নিজের সমস্ত জমানো টাকার বিনিময়ে তিনি ঋষভের সুস্থতা কিনে নিতে চাইছিলেন। কিন্তু চাইলেই তো সবসময় ইচ্ছেমত সব পরিস্থিতি অনুকূল করে নেওয়া যায় না। তিনিও সেটা পারেননি। শেষমেশ তিনি যখন ছেলের ট্রিটমেন্ট বন্ধ করে তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছেন, ঠিক তখনই বাধা দেয় আদৃতা। এতোদিন যে মেয়েটা দৌড়ঝাঁপ করে একটা মানুষকে নতুন জীবনের পথে এগিয়ে দিয়েছিল, তার সমস্ত চেষ্টা বিফল হয়ে যাবে কিছু টাকার জন্য; এটা মেয়েটা মানতে পারেনি। তাই আর্থিক ভাবেও এবার সেন পরিবারের হাল ধরে আদৃতা। এভাবেই পেরিয়ে যায় প্রায় তিনটে বছর। পরিস্থিতির বদল হতে শুরু করে আবারও। নিজের হাতে ব্যবসার রাশ টেনে ধরে ডুবতে থাকা ব্যবসাটাকে আবার দাঁড় করান রুদ্রনাথ সেন। ওদিকে আদৃতার তত্ত্বাবধানে ঋষভ আবার হাঁটতে শুরু করে। সেন পরিবারে হঠাৎই যেন খুশির আবহ ফেরে।

আদৃতা ফিরে পায় নিজের হারিয়ে যাওয়া পুরোনো বন্ধুটাকে। যদিও অনেকটাই ভাঙাচোরা, তবু আপন। স্বাভাবিক নিয়মেই দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনা শুরু হয় ওদের বিয়ে নিয়ে। কিন্তু এবার আপত্তি জানায় আদৃতা নিজেই। অদ্ভুত ছিল তার যুক্তি। আদৃতা জানায় “বন্ধুত্বটা সহজই থাক না! একসময় যে মানুষটার প্রথম পছন্দ হতে পারিনি, আজ শুধুমাত্র বিপদের দিনে সাথে ছিলাম বলেই যে তার আমাকে বিয়ে করতে হবে, এতোটাও অবিবেচক নই আমি।” আদৃতার ওই একটা প্রত্যাখ্যান সেদিন ঋষভের অপরিণত ধারণাগুলোকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। একদিন ঋষভ শুধুমাত্র মেধা আর বাহ্যিক চাকচিক্যের ভিত্তিতে এমন একজন মানুষকে বেছে নিয়েছিল যার জন্য জীবনটাই হারাতে বসেছিল সে! আর আজ তার জন্যই কিনা আদৃতা ছুটে এসেছে! একসময় নিজে প্রত্যাখ্যাত হয়েও প্রিয় মানুষটার প্রয়োজনে নিজের সবটা উজার করে দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনি মেয়েটা। তবু পরিস্থিতির সুযোগ নিতে নারাজ সে। হয়তো এটাই তার সত্যিকারের মনুষ্যত্বের পরিচয়! বা হয়তো নিখাদ ভালোবাসা… কিন্তু সে যাই হোক, যে আদৃতা একদিন পরিস্থিতির সাথে আপোষ করে নিয়ে সরে দাঁড়িয়েছিল বন্ধুর জীবন থেকে; এবার ঋষভকে একটা সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারই হোক, বা নিজের আত্মসম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে বিয়ের প্রস্তাবটা এড়িয়ে যাওয়াই হোক না কেন, কোনো ক্ষেত্রেই আর আপোষ করতে রাজি নয় সে।

আসলে আপোষ কথাটাই এমন, এটা সবার জন্য করা যায় না। সবাই করতেও পারে না। আপোষ করতে গেলে একটা বিরাট মন লাগে, মানসিক ও চারিত্রিক দৃঢ়তা লাগে। আপোষ করাটা অতোটাও সহজ না, বরঞ্চ অনেক বেশিই কঠিন। তাই হয়তো আপোষ করে নেওয়া মানুষগুলোকে ভীতু ভাবাটা মোটেই কাজের কথা না।

কলমে: সুবর্ণা পঞ্চানন (তক্ষক)
ছবি সৌজন্য: গুগল

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *