করোনার কবলে বিধ্বস্ত বার্লিন থেকে টোকিও, সমস্ত পৃথিবীর সমীকরণ এক ধাক্কায় পাল্টে গেছে। ঘরবন্দি মানুষজন অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। অবসর যেন কাটতেই চায়না।

সময় কাটাতে সাহায্য করছে সিনেমা, গান, গল্প বই, ওয়েবসিরিজ। এমনই একটি বিশ্বে সাড়া ফেলে দেওয়া ওয়েবসিরিজ ‘মানি হাইস্ট’।

‘মানি হাইস্ট’ নেটফ্লিক্সের একটি অরিজিনাল স্প‍্যানিশ ওয়েবসিরিজ। প্রথম সিরিজ বেরোয় ২০১৭ সালে। এই সিরিজটি বেরোনোর সাথে সাথেই জনপ্রিয়তা লাভ করে। সিরিজের প্রধান চরিত্র প্রফেসরের অনস্ক্রিন বুদ্ধিমত্তার প্রেমে পড়ে যায় সকলে। তবে শুধু প্রফেসর নয়, এই সিরিজের বার্লিন, টোকিও, রিও, হেলসিন্কি, নাইরোবি, মস্কো, ডেনভার প্রতিটি চরিত্রই নিজ স্বত্তায় প্রতিষ্ঠিত।

ওয়েবসিরিজটির নামকরণ দেখেই সিরিজের বিষয়বস্তু সম্বন্ধে ধারণা স্পষ্ট হয়ে যায়। আর যারা সিরিজটি এখনও দেখেননি তাঁদের জন‍্য এই ব্লগটি মানি হাইস্টের স্পয়লার এর মতো কাজ করতে পারে।

ওয়েবসিরিজটির মোট চারটি সিজনে দুটি গল্প দেখানো হয়েছে এবং প্রতিটি সিরিজ প্রতিটির সঙ্গে কানেক্টেড। প্রতি সিজনের প্রতিটি পর্ব এমন সুন্দরভাবে সাজানো যে আপনি পুরো গল্প না হজম করে ল‍্যাপটপ বা মোবাইলের স্ক্রিন থেকে চোখ হাঁটাতেই পারবেন না।

গল্পের শুরুতেই স্পেনের রয়‍্যাল মিন্টে চমকে দেওয়া ২৪০০ মিলিয়ন ইউরোর ডাকাতির প্ল‍্যান নিয়ে টিম তৈরি করে প্রফেসর। টিমে সামিল হয় আর ৮ জন। প্রফেসর টিম মেম্বারদের নাম ঠিক করেন বিখ‍্যাত শহরের নামে এবং প্রত‍্যেকের কেউই তাদের আসল নাম জানে না।
কেউ বার্লিন, কেউ মস্কো কেউ বা টোকিও। এই সিরিজের আরও একটি বিখ‍্যাত বৈশিষ্ট্য হল মাস্ক।

 

সিরিজের গল্প চলতে চলতে দেখা যায় প্রফেসরকে সার্জিও নামে চেনে বার্লিন। তবে প্রফেসরের আসল নাম কি তা জানা সম্ভব নয়। কখনোও তিনি প্রফেসর তো কখনোও তিনি ইনস্পেকটর রাকেল মুরিলোর সার্জিও তো কখনোও বার্লিন এর ভাই সার্জিও। এই সিরিজটি যেমন মানি হাইস্টের একটি অন‍্য মাত্রার প্ল‍্যানিং দেখায়। যা আপনাকে এন্টারটেইন করবে এবং তার সঙ্গে ডায়লগ অনেক কিছু শিখিয়ে যায়। গল্পের মধ‍্যে বন্ধুত্ব, প্রেম থেকে শুরু করে যুদ্ধ, বিচ্ছেদ, বিশ্বাস, অবিশ্বাস এর একটা অসাধারণ মিলন দেখা যায়। এই সিরিজ এক সেকেন্ডের জন‍্যও বোরিং নয়। পুরোপুরিভাবে ‘binge watch’, স্ক্রিনে একটানা চোখ রাখতে বাধ‍্য হবেন।

সিরিজটি ট‍্যুইস্ট এন্ড টার্নে পরিপূর্ণ। ব‍্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সিরিজটাকে দারুণভাবে ফ্লোতে রাখে। অভিনয়, পরিচালনা, সিনেমাটোগ্রাফির সঙ্গে রয়েছে নজরকাড়া কিছু ডায়লগ। বার্লিন সিরিজটির একটি অন‍্যতম চরিত্র, যে মৃত‍্যু অবধারিত এমন এক দুরারোগ্য ব‍্যাধিতে ভুগছে আর বলে যাচ্ছে জীবনের কথা।

“Because one day, something will go wrong. It could cost you your life or something worse. And on that day you can’t be thinking is that you are to blame for something you couldn’t control. That’s life. Enojy it until the party is over.”
উপরের ডায়লগটি জীবনকে কত সুন্দর অথচ সহজ কথায় ব‍্যাখ‍্যা করে‌। এই ডায়লগটি শোনা যায় বার্লিন এর কাছে। সিরিজের এক পর্বে জমকালো বিজিএম এর সঙ্গে নাইরোবির মুখ থেকে শোনা যায় “Let the matriarchy begin.” যা এক শিহরণ বয়ে আনে গোটা শরীরে।

এরকম আরোও অনেক ডায়লগ সমৃদ্ধ করেছে সিরিজটিকে। যেমন নাইরোবির “To love, you need courage.” থেকে টোকিওর “Hope is kind of like dominos. Once one falls, the rest follow.”

প্রফেসরের “In this world, everything is governed by balance. There’s what you stand to gain and what you stand to lose. And when you think you’ve got nothing to lose, you become overconfident.” থেকে বার্লিন এর “Betrayal is an inherent part of love.Betrayal doesn’t depend on how much or deeply you love someone.It depends on the magnitude of the dilemma put in front of you.”

এককথায় গোটা সিরিজটা একটা ধামাকা। সিরিজের গল্পের মধ‍্যে আপনি ঢুকে যেতে বাধ‍্য হবেন। তার সঙ্গে অনেক ডায়লগ আপনাকে ভাবাবে। যেমন প্রফেসর যখন বার্লিনকে প্রশ্ন করবে “What you choose between love and death?”. বার্লিন নিখুঁত মুখভঙ্গির সাথে বলে “Life brother, life!” তবে শেষমেশ “bella ciao” এর কথা না বললেই নয়। বার্লিন থেকে টোকিও ছেয়ে গেছে সবজায়গায়।

আপনারা যারা সিরিজ এখনও দেখেননি তার চটপট দেখে ফেলতে পারেন, হতাশ হবেন না গ‍্যারান্টি। আর বেছে নিন আপনার প্রিয় ডায়লগ ও চরিত্র। অবশ‍্যই প্রফেসরের প্রেমে পড়বেন তবে সব চরত্রই আপনার নজর কাড়বে। তাই দেরি না করে চটপট দেখে ফেলুন। করোনা এড়াতে বাড়িতে থাকুন সুস্থ থাকুন। গুজব এড়িয়ে চলুন, এটাই জরুরি।

Facebook Comments Box

By Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *