ইউটিউব বা সোসাল মিডিয়াতে একটা নাম বার বার ঘোরাফেরা করছে ‘এলে বাট গেলে না’ যা আজকের আলোচনার বিষয়।
বি এম এস বা বাঁকুড়া মিমস্ সটস্, নাম টা মাথাতে আসতেই এতোদিন কমেডি ভিডিও বা ভাইনস-এর কথায় মাথায় আসতো, কিন্তু গত জুন মাসে ‘এলে But গেলে না’ তাদের চ্যানেলের প্রথম ওয়েব সিরিজ টি প্রকাশ করেন, যাতে উন্মেষ গাঙ্গুলি, শ্নেহা চ্যাটার্জী, সৌমিত্র চ্যাটার্জী, শ্রিমন্ত চক্রবর্তী, সম্রাট মুখার্জী এবং উত্রিনা গাঙ্গুলি অভিনয় করেছেন। এই ওয়েব সিরিজটি লিখেছে উন্মেশ গাঙ্গুলি, উদ্দিপ্ত গাঙ্গুলি ও সৌমিত্র চ্যাটার্জী। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে ওয়েব সিরিজটি একটা মজাদার ও হাস্যরসাত্মক কিন্তু ওয়েব সিরিজটির প্রথম এপিসোড থেকেই একটা মৃদু কৌতূহলপরশের এপিসোড বাড়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পাওয়াকে অনুভব করা যায় এবং

শেষ এপিসোডে এই কৌতূহলের বিস্ফোরণ ঘটে। ওয়েব সিরজে যেমন দেখা গেছে দই (শ্নেহা চ্যাটার্জী) ও উমুর(সৌমিত্র চ্যাটার্জী) একটা সুন্দর প্রেমের বন্ধনকে, নকুলদার(উন্মেষ গাঙ্গুলি) ছোটোতেই বাবা মা মারা যায় তাই সে উমুর বাবার (প্রদ্যুত মুখার্জী) কাছেই মানুষ হয় কিন্তু পুরো ওয়েব সিরিজটিতে যদি একবারও এই কথাটা না বলা হতো তাহলে বুঝতে পারার অবকাশ ছিলো না যে নকুলদা উমুর সৎ ভাই যদিও এটা নিয়েও একটা উদ্বেগ আছে যা শেষ এপিসোডে জানা যাবে। তো যাই হোক নকুল দা তার বাবা মানে উমুর বাবার প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ লক্ষ করা যায়, প্রবালকে(কৌশিক মন্ডল) দেখা যায় একজন অসৎ ও খলনায়ক চরিত্রে কিন্তু শেষে সেও প্রমান করে দেয় যে টাকার থেকে মানুষের দাম অনেক বেশি আর তাই সে দয়ের গুলি লাগার খবর শুনে টাকা পয়সার কথা ভুলে ছুটে যায় এবং সাহায্যও করে। আর এই সবকিছুর মধ্যে কমেডির সাথে কোথাও বোঝাপড়া করা হয় নি।

এই সব তো ছিলোই কিন্তু এই ওয়েব সিরিজটিতে চারচাঁদ লাগিয়ে দেওয়া হয় শেষ এপিসোডের শেষের পাঁচ মিনিটে এবং সেটি যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। দুটি চরিত্র বড়দা ( শ্রিমন্ত চক্রবর্তী )যিনি আসলে একটা টাকা ভর্তি ব্যাগকে খুঁজছিলেন পুরো ওয়েব সিরিজে আর তার ফলেই এতো কৌতূহল রস সৃষ্টি করা,আদতে তিনি একজন খলনায়ক কিন্তু এই চরিত্রটির মধ্যে যে একটা ভালোলাগা বা সংবেদনশিল মন লুকিয়ে আছে তা বোঝা যায় শেষের ওই পাঁচটা মিনিটে। প্রথম থেকে শেষ প্রর্যন্ত বড়দার গলা তার অজান্তেই বিকৃত হয়ে যেতো এবং সেটা নিয়ে একটা কমেডি রস সৃষ্টি করা হয়েছে কিন্তু যখন টাকা ভর্তি ব্যাগটা পাগলিটার( উত্রিনা গাঙ্গুলি) কাছ থেকে নিয়ে ফিরে যাওয়ার মুহূর্তে একটু থমকে দাঁড়ায় এবং তার কাছে গিয়ে যখন সে বলে ” আমার সাথে কচুরী খেতে যাবি?’ তখন কিন্তু সে ইচ্ছাকৃত ভাবেই গলাটা বিকৃত করেছিলো।

হয়তো সে ওই পাগলিটাকে কিছুক্ষনের জন্যে একটু হাসাতে চেয়েছিলো বা সে তার মধ্যে একজন সৎ প্রেমিকার সত্তা দেখেছিল কারণ ওই টাকা ভর্তি ব্যাগটা সবাই নিতে চেয়েছি তার জন্যই এতো লাড়াই অন্যদিকে ওই ব্যাগটা হাতে পেয়ে তার প্রতি কোনো লোভ না দেখিয়ে বড়দার এক কথায় সে তাকে ব্যাগটা ফিরিয়ে দেয়। পাগলিটা হয়ত জানে না যে লোভ কাকে বলে।

পুরো গল্পটা লিখেছেন উন্মেষ গাঙ্গুলি, উদ্দিপ্ত গাঙ্গুলি ও সৌমিত্র চ্যাটার্জী। যদিও উদ্দপ্ত গাঙ্গুলি কে আমরা সিরজটিতে দেখিনি কিন্তু ওনার লেখার হাত দক্ষ সেটা মানতেই হবে সাথে এটাও বোঝা যায় যে উন্মেষ গাঙ্গুলি ও সৌমিত্র চ্যাটার্জী একজন সুদক্ষ অভিনেতাই নন, তারা ভালো লেখকও। ওয়েব সিরিজটিতে প্রতিটি চরিত্র সমান ভাবে প্রভাব ফেলেছে পাগলিটা চরিত্রটাও। সকলের অভিনয় দূর্দান্ত এবং ওয়েব সিরিজটি অন্যবদ্য। যেহেতু এটা ইউটিউবে আছে তাই এটা প্রায় সকলের কাছেই সহজলভ্য।

Facebook Comments Box

By Rohit Paramanik

লিখতে আমি ভালোবািস, সাহিত্যের সাথে প্রেম করি। আপনার মনের অজানা কথা, কলম দিয়ে উজাড় করি। যদি জানতে চান আরো, আমার সৃষ্টিগুলো দেখুন, মনে রাখতে আমার নাম ডাইরির পাতায়, 'রোহিত' বলে লিখে রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *