LaughaLaughi

You Create, We Nurture

Emotional

রেল লাইনে মৃত্যু নয় -ঘরে ফিরুক ওরা

উঁহু ওরা মোটেই আপনাদের উপর রেগে নেই,ওরা রেগে থাকতে জানে না ,কারন ওরা কৃতজ্ঞ সম্প্রদায়,আপনারা ওদের জন্য অনেক করেছেন,সব থেকে বড় কথা আপনারা ওদের জন্য লাইনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন,তাতেই বর্তে গেছে ওরা ।হ্যাঁ ওরা লাইনে দাঁড়ায়,আগে ওরা লাইনে দাঁড়িয়ে 100 দিনের কাজ পেত ;লাইন দিয়ে ঝান্ডা হাতে ডিমভাত খেতে যেত; লাইনে দাঁড়িয়ে টিপছাপ দিয়ে গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন করত। এখনও ওরা লাইনে দাঁড়ায়,(এ রাজ্যে কিম্বা অন্য রাজ্যে)লাইনে দাঁড়িয়ে 2 কেজি চাল 1 কেজি ডাল নেয়।

এই চরম দুর্ভিক্ষের দিনে আপনি ওদের পশে দাঁড়ান,সাহায্য করেন; আবার প্রচার ও করেন ,নইলে লোকে জানবে কি করে? আপনি কিভাবে আপনার মহাজীবদয়াবান হৃদয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে সমাজসেবা করছেন তার প্রমাণ স্বরূপ ওরা লাইনে দাঁড়িয়ে ফোটো হ্য় ,আপনি ফেসবুক এ 5000 লাইক পান;আরো বেশী সাহায্য করার সামর্থ্য পান,আর ওরা?!ওরা পায় আরো একটা লাইন এ দাঁড়ানোর কুপন ! ওরা লজ্জা পায় না!

পেটে খিদে আর চোখে ভাতের স্বপ্ন নিয়ে বুড়ো বাপ-মা পরিবারকে ছেড়ে ওরা ভিনরাজ্যে খাটতে যায়, বলে যায় ” টাকা পাঠাবো চিন্তা কোরোনা “। তারপর একদিন কোনো high profile আমলার highly qualified germ কিংবা কোনো মহাদায়িত্ববান উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন নমস্য ব্যক্তিরা দায়িত্ব নিয়ে যখন দেশকে একটি নতুন খেল দেখানোর জন্য stage-এ তুলে দেন, তখন ওরা হাততালি ভুলে কেনো জানি না ঘরে ফিরতে চায়। আপনাদের social distancing এর নিষেধাজ্ঞা ভুলে গিয়ে ওই অবোধ গুলো লোটা কম্বল নিয়ে স্টেশনে এসে বিদ্রোহ হাঁকাতে চায়, আপনি ওই মহাদায়িত্ববানদের আটকাতে পারেন নি ঠিকই, কিন্তু এই দায়িত্বজ্ঞানহীন ছোটোলোক দের সহবৎ শেখাতে মুনশিয়ানার পরিচয় দেন। আবার ওদের জন্য লাইনের ব্যবস্থা করেন,যাতে ওরা দুটো hygenic শুকনো রুটি খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে।

ওরা কৃতজ্ঞ হয়, বোধহয় সন্তুষ্টও, তারপরে কখন ঘরে ফিরে মরার চিন্তা প্রকট হলে ওরা ক্যামেরার সামনে, কৃতজ্ঞ দুটো হাত জোড় করে বলে ” ফিরতে দেবেন ? কষ্টে আছি ” , তখন কোনো এক বিকেলে ড্রয়িং রুমে কফি কাপ হাতে আমারা ওদের দেখি,আর  করুন চোখে তাকাই, তারপরে netflix এর নতুন সব web-series এর চাপে ওরা হারিয়ে যায়।

পড়ে দেখুন – মধ্যবিত্ত- রোজ মরে আর রোজ নতুন করে বাঁচে!

আপনারা কাঁচঘরে বসে video conference করেন ওরা ফুটপাতে বসে অপেক্ষা করে, তারপরে আপনাদের গনতান্ত্রিক পথে সমস্যা সমাধানের উপর আস্থা হারিয়ে যখন ওরা সোজা রেল লাইন  ধরে হাঁটা লাগায় তখন আমারা ওদের দেখি না বটে, দেখি ওরা রেললাইনে পড়ে খবর হলে।

তাও আপনাদের যুক্তিবাদী মন জানতে চায়, রেল লাইনে পড়ে থাকা রুটি গুলো ওদেরকে কোন পার্টি দিয়েছিল ? ওরা কি জানতো না যে রেললাইন ওদের ছেঁড়া কাঁথায় মোড়া সস্তা বিছানা নয় ! রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি!

সে যাই হোক এই সব মহা অপরাধের পরও আপনারা ওদের যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে লাইন দিয়ে  সরকারী গাড়িতে সাদা ফুলে সাজিয়ে বাড়ির দোরগড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন, দিনান্তে রুটিরুজি আর বাড়িতে পাঠানোর টাকার চেয়েও বেশী মূল্য দিচ্ছেন ওদের মৃত্যুর! আমাদের দেশের বিদেশবাসী দামী মানুষদের দেশে ফেরাতে গিয়ে, এইটুকু স্বার্থত্যাগ না হয় ওরাও করলো ! কি বলেন আপনারা ?

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Editorial Team of LaughaLaughi