মায়েদের কখনও ভুল হয়না।
হ্যাঁ,হয় নাই তো!
যার হাত ধরে গুটি গুটি পায়ে
জীবনের পথে প্রবেশ করেছি,
যে আমার জীবনের সমস্ত ওঠানামার সাক্ষী।
সব রকম সিদ্ধান্ত নিতে
যে আমায় সাহস জুগিয়েছে,
তার কখনও ভুল হয়নি
আমায় ঠিকটা চিনিয়ে দিতে,
সে কখনও ভুলে যায়নি আমায় ভালবাসতে,
কখনও ভুলে যায়নি আমার পাশে দাঁড়াতে।
ছোটবেলায় যখন সাত সাত্তে
ঊনপঞ্চাশের জায়গায় আটচল্লিশ করে
অঙ্কটা কিছুতেই মেলাতে পারিনি,
মায়ের কাছে ছুটেছি,
জানতাম মায়ের কখনও ভুল হয়না।
মা বারবার ঠিকটা শিখিয়েছে।
এরকম একদিনও হয়নি যে
স্কুল থেকে বেড়িয়ে মাকে দেখতে পাইনি,
মা পৌঁছে গেছে ঠিক সময়
ভুল হয়নি কোনোদিনই।
সারাদিনের এত কাজ সামলে
পরীক্ষার আগে প্রতিটা রাতজাগায় মা
আপদমস্তক এনার্জি নিয়ে পাশে থেকেছে,
চোখটা হালকা লেগে আসতেই দেখি
মা কফি নিয়ে হাজির।
জিজ্ঞাসা করতে বলেছে,
“আমার ঘুম ঘুম পাচ্ছিল তাই করলাম,
তুইও একটু খা, ভাল লাগবে।”
মনে মনে ভেবেছি মা কি করে বোঝে
এতকিছু, কখনও ভুল হয়না!
সারারাত জাগার পর আমি হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছি,
তবে মায়ের সে সুযোগ কোনোদিনই ছিল না।
সকালে ঠিক টাইমে আমায় ডেকে দিয়েছে।
কখনও ভুল হয়নি।
যৌথ পরিবারে এত কাজের মধ্যেও
মা কখনও ভুলে যায়নি প্রত্যেকের
আলাদা আলাদা ভালোলাগা,মন্দলাগাগুলো।
কে কি খেতে ভালবাসে,
কার কি অপচ্ছন্দ
সব ছিল মায়ের নখদর্পনে।
প্রতিবছর জন্মদিনে পায়েস সহ
আমার প্রতিটি পছন্দের খাবার রান্না করেছে।
বাজেটের মধ্যে কেনাকাটা করার পরও
যে জামাটা পচ্ছন্দ হয়েছিল,
কিন্তু কিনে দেওয়ার কথা মুখফুটে বলা হয়নি,
সেটা জন্মদিনের দিন রাংতা মোড়া
প্যাকেটের ভিতর পেয়েছি।
মা কিন্তু ঠিক মনে করে রেখেছিল।
কোনো এক অহেতুক কারণে ঝগড়া করে,
মায়ের ওপর ভীষণ রাগ করেছি,
না খেয়েই অফিস বেড়িয়ে গেছি।
বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে এসে দেখি
টেবিলের ওপরে একবাটি রসমালাই
আর প্রিয় লেখকের একটা বই
যার প্রথম পাতাটায় লেখা,
“মহারানির রাগ ভাঙাতে মায়ের ছোট্ট প্রচেষ্টা”
ভেবেছি, সত্যি ভুলটা আমারই ছিল মায়ের নয়।
এরকমই হাজারও ভুল আমাদেরই থাকে,
আর আমরা শুধু শুধু মাকে দোষের ভাগী করি,
বাইরের অশান্তি, ঝামেলা, রাগ,
সব মায়ের ওপরই উগরে দি।
তাও কিন্তু মা আমাদের ভালবাসতে ভোলে না।
আমরা জানি আর যে যাই করুক
এই মানুষটা আমাদের হাত কিছুতেই ছাড়বে না।
নিজেদের ব্যস্ততায় বারবার
মায়ের ফোন কেটে দি।
কোনো কোনো সময় বলেও দি
এতবার ফোন করার দরকার নেই
কিংবা হাবভাবে প্রকাশ করি যে
আমরা কতটা বিরক্ত হচ্ছি।
রাত করে বাড়ি ফিরে দেখি
মা খাবার টেবিলে বসে আছে,
ঢুকতেই বলে, “বোস,খাবারটা গরম করি?”
মা কিন্তু সবটা বোঝে তবু
আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে ভোলে না।
মায়েদের সত্যিই কিচ্ছু ভুল হয়না।