পাড়াগ্রামের মেয়ে কল্পনা। ছোটবেলায় কল্পনা খুব দুরন্ত ছিল। তিন ভাইয়ের একটি মাত্র বোন, খুব আদরে মানুষ হয়েছে। যখন যা চাইতো সেটাই দিতে হতো। তার বাবার আর্থিক অবস্থা ভালোই ছিল। বলতে গেলে কল্পনা ছিল এক রাজকুমারী। পাড়াগ্রামে কল্পনার বাবার অনেক জমি জায়গা ছিল। তাই কিছুটা জায়গা দিয়েছিল স্কুল করার জন্য। সেখানে গ্রামের সব বাচ্চারা পড়তে যেত। সেই স্কুলেরই এক মাস্টারমশাই ছিলেন, নাম ‘সন্তোষ, তাকে কল্পনার বাবা খুব পছন্দ করতেন এবং তার সাথেই কল্পনার বিয়ে ঠিক করেন। কিন্তু কল্পনা সন্তোষকে একটুও পছন্দ করতো না।

যদিও আগে মেয়েদের মতামতের কোনো গুরুত্ব দেওয়া হতো না। খুব ধুমধাম করে বিয়ে হল কল্পনার। পাড়াগ্রামের সমস্ত লোক বিয়েতে নিমন্ত্রিত ছিল। সন্তোষের বাড়ির অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। সন্তোষের বাবা ছিল অন্ধ। কোনো কাজ করতে পারতেন না। সন্তোষের চাকরি হবার পর, সংসারে একটু স্বচ্ছলতা এসেছিল। কল্পনা শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর থেকেই শ্বাশুড়ী তার উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করে।

সারাদিন কাজ করতো তবুও তাকে ঠিকঠাক খেতে দিত না। কল্পনা দুধ খেতে খুব ভালোবাসতো, বাড়িতে দুধ থাকা সত্বেও তাকে দুধ দিত না। কল্পনা মুখ বুজে সব সহ্য করত, কেননা সে মনে করতো বিয়ের পর বাবার বাড়ি গিয়ে থাকলে, পাড়াগ্রামের লোক তার বাবাকে মান্য গণ্য করবে না। কল্পনার উপর তার শ্বশুরবাড়ির লোক এতো অত্যাচার যে করতো, সেকথা সে তার বাবা- মাকে বলতো না। একবার কল্পনার খুব শরীর খারাপ হয়েছিল। কাজ করতে পারতো না তখন। চিকিৎসার দরকার, কিন্তু চিকিৎসা করাতে টাকা লাগবে তাই শ্বশুর-শ্বাশুড়ী কল্পনাকে পাড়াগ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছিল।

তখন কল্পনার বাবা,মা লোকমুখে শুনতে পায় কল্পনার উপর হয়ে যাওয়া আচ্যাচারের কথা, মা মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে বলে, “মা রে, তুই এত কষ্টে আছিস তবু একবারও আমাদের বলিসনি কেন?” কল্পনা তখন কাঁদতে কাঁদতে তার মাকে বলে, “বললে তোমরাও যে কষ্ট পেতে ‘মা, তাই বলিনি” মা মেয়ের কথোপকথন শুনে বাবাও কেঁদে ফেলে।

এটাও পড়ুন-শুধরে নেব

কল্পনার চিকিৎসা শুরু হল। ডাক্তার বললেন, “কল্পনার সেরে উঠতে একটু সময় লাগবে”। এদিকে শ্বাশুড়ী কিছুতেই অসুস্থ বৌমার, সুস্থ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারলো না, সে তার ছেলের আবার বিয়ে ঠিক করলো। কল্পনার স্বামী ও শ্বশুর কোনো প্রতিবাদ করলো না। এই খবর শুনে কল্পনা অসুস্থ শরীর নিয়ে, বাবার বাড়ির কাউকে না জানিয়ে, বেরিয়ে পড়ল শ্বশুরবাড়ির উদ্যেশে। কল্পনা শ্বশুরবাড়ি আসছে এই কথা শুনতে পেয়ে, কল্পনার শ্বশুড়ী গেটের সামনে থাকে। কল্পনা বাড়ি ঢোকার চেষ্টা করলে, শ্বাশুড়ী তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেয় না।

পাশেই ছিল কাকাশ্বশুর বাড়ি, কল্পনা সেই বাড়িতে যায়, কিন্তু কাকা শ্বশুরও তাকে রাখতে রাজি হয় না। কল্পনা তার হাতে পায়ে ধ’রে, একরাত থাকার কথা বলে, ভোর হতেই চলে যাবে কথা দেয়। তারপর ভোর বেলা যখন কল্পনা বেরিয়ে আসবে, তখন কাকাশ্বাশুর বলে, “দাঁড়াও আমি পাড়ার মাতব্বরদের বলে দেখি, কিছু করা যায় কিনা”। পরে পাড়ার মোরলরা এলেন এবং কল্পনার শ্বশুরকে বললেন যে, “বৌমাকে রাখতে হবে” তখন শ্বাশুড়ী বলে উঠে “না,এই মেয়ে অসুস্থ, ডাক্তার বলেছে সহজে ঠিক হবে না, আমার বয়স হয়েছে বাড়ির কাজ কর্ম করতে পারিনা, এই মেয়ে তো কাজ করতে পারবে না, তাই আমি ছেলের আবার বিয়ে দেব”। একথা শুনে কল্পনা বলে, “আমি পারবো কাজ করতে”, তখন মাতব্বররা কল্পনাকে বললেন, “ঠিক আছে তোমাকে সাত দিন সময় দেওয়া হল, তুমি যদি দেখাতে পারো তুমি কাজ করতে সক্ষম, তাহলে তুমি এই বাড়িতেই থাকবে”। এদিকে পাড়াগ্রাম থেকে কল্পনার বাবা, দাদা আসে তাকে নিতে কিন্তু কল্পনা যেতে রাজি হয় না।

সে সাতদিন জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করতে থাকে, সে তার অসুস্থতার কথা ভুলে গিয়েছিল। সে একটা কথাই বলতো “আমার যা খুশি হয়ে যাক, তবু আমি শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়ি গিয়ে থাকবো না।”
সাতদিন পর পাড়ার মাতব্বররা দেখলেন, কল্পনা সব কাজ করতে পারছে। তখন শ্বাশুড়ীকে বললেন যে, “তোমার বৌমা সব কাজ করতে পারছে, অতএব ছেলের দ্বিতীয় বিয়ে দেওয়া যাবে না”।

Facebook Comments Box

By Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *