আজও মাটির প্রদীপ গুলো নিয়ে বসেছিল রাস্তার মোড়ে। বৃদ্ধ মানুষটি ঠিক মতো হাঁটতেও পারে না। তবুও, তবুও মনের মধ্যে জোর এনে অনেক আশা নিয়ে বসেছিল পথের ধারে। যদি পথের পথিকেরা কেউ কেউ কিনে নিয়ে যায় তার হাতের তৈরি এই মাটির প্রদীপ। আর তো দুইদিন পরেই দীপাবলি উৎসব। শহরের বুকে প্রতিটি বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, গলির মোড় সেজে উঠবে আলোর রোশনায়। তার মাটির প্রদীপ গুলোও কারো ঘর আলো করবে। আলোর উৎসবে ভাসবে গোটা শহর। বিনিময়ে তার জুটবে কিছু টাকা। যা দিয়ে সে তার বৃদ্ধা রুগ্ন স্ত্রীর জন্য কিনবে ওষুধপত্র। কিছু পথ্য কিনবে। কতদিন এ দুটি বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ‘ভালো-মন্দ’ কিছু খায় নি। একটু মাছ ভাতে একটা দুপুর হবে। এই সব ভাবছিল বৃদ্ধ। রোজই বসে সে। কেউ কেনে, কেউ বা কেনে না তার প্রদীপ। তবুও আশায় বুক বাঁধে। দুটি মাছ-ভাতের স্বপ্ন দেখে।

দেখতে দেখতে এলো সেই দিনটি। আজ বৃদ্ধ দারুন খুশি। বেশ কয়েকটা টাকা হয়েছে, দুটো বেশ কড়কড়ে নোটও জুটেছে। মনে মনে ভাবে বাড়ি গিয়ে গিন্নীকে হাতে দিয়ে দেখাবে। ভীষণ খুশি হবে নিশ্চয়ই।
ঘরে ফিরতে বেশ দেরি হলো বৃদ্ধর। রাস্তার দু-পাশে কত্তো লাইট। তাদের বস্তির ঘর গুলোও সেজে উঠেছে আলোর রঙে। ঘর বলতে ঝুপড়ির মতো ওই এক-টুকরো আশ্রয়। তবুও তো ঘর।
এসে দেখে তার বৃদ্ধা স্ত্রী বাইরে বারবার তাকাচ্ছে। বৃদ্ধকে দেখতে পেয়েই বৃদ্ধা বলে উঠলো- “ও গো, সবার ঘরে আলো জ্বলছে, আমাদের ঘরেও দুটো প্রদীপ জ্বেলে দাও না!”
বৃদ্ধ তো সবই বেচে এসেছে। আর সেই টাকা কটায় তার রুগ্ন স্ত্রী এর জন্যে কিছু ওষুধপত্র আর পথ্য কিনে এনেছে।

এবার? কি জবাব দেবে সে তার স্ত্রী কে। সত্যিই তো আজ ঘর আলো দিয়ে ভরিয়ে দিতে হয়।
হঠাৎ বৃদ্ধর খেয়াল হলো ঘরের এক-কোণে পড়ে থাকা সন্ধ্যে দেওয়ার পাথরের প্রদীপের কথা। তৎক্ষনাৎ সে সেই প্রদীপ টি, সাথে করে দোকান থেকে কিনে আনা সামান্য তেল দিয়ে জ্বালিয়ে দিলো।
এক-কালে বৃদ্ধা এই প্রদীপ হাতে রোজ সন্ধ্যেবেলায় তুলসীতলায় সন্ধ্যে দিত।
মনে পড়তেই চোখের কোন চিকচিক করে উঠলো তার।
নাহ, দুটি ভাত ফুটাতে হবে তাকে এবার।
দীপাবলির আলো তাদের এক-ফালি ঘরেও এসে ধরা দিল।
উৎসবের আলোয় আলোকিত হোক প্রতিটি হৃদয়।

Facebook Comments Box

By Bhagyasree Singha Arunima

লিখতে ভালোবাসি, বই পড়তে ভালোবাসি ভীষণ। লেখার মধ্যে মনের কথা, কখনো আবার কল্প কথা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *