সকালে বাজার করতে যাওয়ার সময় বর্ষার মা কল্পনা দেবী ওকে ডেকে বলল
-” বর্ষা মা, তোর মাসি খুব অসুস্থ,তাই আমি দেখতে যাছি। বাজার করে নিয়ে এসে তোর ইচ্ছে মতো রান্না করে, ঠাম্মী আর রিমঝিমের সাথে খেয়ে নিস।”
-” আচ্ছা মা ঠিকাচ্ছে, তুমি সাবধানে যেও।”

…কিছুক্ষণ পরে কল্পনা দেবীও রওনা দেয় বর্ষার মাসি বাড়ির যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কল্পনা দেবীর দুই মেয়ে, বড় মেয়ে বর্ষা আর ছোটো মেয়ে রিমঝিম। বর্ষার তুলনায় রিমঝিমের পড়াশোনা খুব ভালো না হলেও, ফ্যাশন ও স্মার্ট বিষয়ে বেশ এগিয়ে ছিল রিমঝিম।

ছুটির দিনের সকালে বিউটি পার্লারে যাওয়াটা ছিল রিমঝিমের প্রধান কাজ, তাই হাতে একটা ছাতা ও পার্সটা সঙ্গে নিয়ে বাড়ির থেকে বেরোতে যাবে, এমন সময়ে ঠাম্মী ডেকে বলল
-“দিদিভাই, আমার সকালের ওষুধটা দিয়ে যা তো।”
-“তুমিও না ঠাম্মী, দেখছো আমি বেরোচ্ছি পেছন থেকে ডাক দিয়ে বসলে।”
-“বাতের ব্যথাটা একটু বেড়েছে, তাই উঠতে পারছি না।ওষুধটা একটু দিয়ে যা না দিদিভাই”

ওষুধটা তাড়াহুড়ো করে ঠাম্মীর হাতে দিয়ে রিমঝিম পার্লারে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে, বাজার থেকে বাড়ি ফিরে এসে বর্ষা বলল
-” ঠাম্মী, ও ঠাম্মী কোথায় তুমি?, আমি বাজার করে নিয়ে এসেছি।”

ঠাম্মীর সাড়া না পেয়ে বর্ষা ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখল, ঠাম্মী সোফার উপর অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ছুটে গিয়ে বর্ষা দেখল, ঠাম্মীর হাতের কাছে রাতের বেশী পাওয়ারের ওষুধটা পড়ে আছে,সেই ওষুধটা প্রতিদিন রাতে অর্ধেক করে খাওয়ার নিয়ম। চোখে অনেক জলের ঝ্যাপটায় ঠাম্মীর জ্ঞান না ফেরায় বর্ষা হাসপাতালে নিয়ে যায়।

…বর্ষার ফোনে কল্পনা দেবী,তার স্বামী অমর বাবু ও রিমঝিম হাসপাতালে চলে আসে। কিছুক্ষণ পরে, ডাক্তারবাবু বর্ষার বাবা অমরবাবুর কাছে গিয়ে বলল
-” এখন কোনো ভয় নেই, আর একটু দেরী হলে বড় কোনো ক্ষতি হতে পারতো। ওষুধের পাওয়ার সহ্য করতে না পেরে আপনার মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।”
-” আচ্ছা ডাক্তারবাবু মাকে বাড়ির নিয়ে যেতে পারি কি?”
-” হুম নিয়ে যেতে পারেন।”

হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে এল সবাই। তারপর কল্পনা দেবীর কাছে অনেক বকাবকি শুনতে হয় রিমঝিমকে। সে মাথা নিচু করে ভাবতে থাকে, প্রত্যেক জন্মদিনের দিন ঠাম্মী তার হাতে কত রূপচর্চার সামগ্রী তুলে দেয়, আর আজ সেই রূপচর্চার জন্য ঠাম্মীর বড় ক্ষতি হতে পারত, এইভেবে এক ভীষণ কষ্টে অনুশোচনায় ঠাম্মীকে জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে বলল
-” ঠাম্মী তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও, সব দোষ আমারই ছিল। আমার জন্যই তোমার বড় ক্ষতি হত।”

রিমঝিমের চোখের জল মুঁছিয়ে দিয়ে ঠাম্মী বলল

-” শোনো দিদিভাই, রুপের চর্চা করার সাথে সাথে তোমার গুন ও মানসিকতাগুলো কখনো ভুলে যাবে না। একটা সময়ের পর রুপের সৌন্দর্য কমে যেতে থাকবে, কিন্তু তোমার গুন ও মানসিকতাগুলো জীবনের অন্তিম নিঃশ্বাসের সাথে জুড়ে থাকবে।।”

~সমাপ্ত~

Facebook Comments Box

By Souvik Sarkar

A mechanic, foodie and creative blogger, striving to enjoy the pleasures of the mind through his own creations.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *