LaughaLaughi

You Create, We Nurture

Uncategorized

প্রিয় রুদ্র

প্রিয় রুদ্র,

তুমি আর আমি দুই বাংলার মত। যাদের অনেক ভিন্নতার মধ্যেও কোথাও কোন একটা মিল, একটা মিলিত আবেগ, একটা ভালোবাসা থেকেই যায়। কোন বর্ডারের তার দিয়েও আমাদের মধ্যে দূরত্ব আনতে পারে নি কেউই। আমাদের প্রথম দেখায় তুমি, তোমার কাঁপা কাঁপা ভারী কণ্ঠে বলেছিলে নীল রঙটা আমায় বেশ মানায়। সেদিন থেকে আমার প্রিয় রঙ তোমার নামেই লিখে দিয়েছিলাম, ” নীল “। আমি কখনোই ভাবি নি, আমিও খুব মেয়েলী হয়ে যেতে পারি। স্কুলের সেই টম গার্লটা কারো জন্য শাড়ি পরার বায়না করবে। কপালে টিপ আর চোখে কাজল মেখে তোমার হাতে হাত রেখে, পাশাপাশি হাঁটার স্বপ্ন বুনবে। আমার জন্য শাড়ি, টিপ, কাজল বেশ কঠিনই ছিল। তুমি তো জানো ফিজিক্‌স আর সাজগোজ দুটোই আমার দ্বারা সম্ভব না। কবিতায় পড়েছিলাম ভালবাসলে নাকি সব কিছুই করা যায়, সবই সুন্দর আর সম্ভব হয়ে উঠে। ঠিক যখন থেকে অনুভব করতে শুরু করি, তোমাকে ছাড়া আমার দিনগুলো ফিকে পরে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। বুঝেছিলাম এই আবেগটাই বুঝি কবিদের ভাষায়, ভালবাসা। তারপর তোমার আর আমার প্রেম। টক মিষ্টি সম্পর্ক। আমি অনেক বেশি রাগ করতাম, তাই না? আর তুমি আমায় কাছে টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিতে।

জানো প্রথম যেদিন তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়েছিলে, আমার চোখে জল চলে এসেছিল । তুমি তো জানো আমি কাঁদতে জানি না। তাই তোমার বুঝার উপায় ছিল না। প্রতিটা মেয়ে তার সঙ্গীর মধ্যে নিজের বাবা কে খুঁজে। তার বাবা যেমন করে সারাজীবন তাকে আগলে রাখে তেমন করেই সে চায় তার সঙ্গীও যেন তাকে আগলে রাখে। বাবার মত করে। আর সেদিন তোমার মধ্যে আমি আমার বাবাকেই যেন খুঁজে পেয়েছিলাম। ছোটবেলায় মা বকলে বাবা এইভাবেই মাথায় হাত দিয়ে আদর করতেন। বাবা চলে যাবার পর আমাকে কেউ কখনই এইভাবে আদর করে নি। তুমি করেছো। তাই ইচ্ছা করেই আমি বেশি বেশি রাগ করতাম। তুমি কখনই বিরক্ত হও নি। এত ধৈর্য কোথা থেকে পেলে?

তোমাকে ভালবাসতে বাসতে আমি নিজেকে ভালবাসতে শিখেছি। নতুন আমিটাকে খুঁজে পেয়েছি। সংসার করতে শিখেছি। ঘর করতে শিখেছি। তুমি একবার আমাকে জিগ্যেস করেছিলে, আমার জীবনের সব থেকে প্রিয় জিনিস কি? আমি উত্তরে বলেছিলাম জানিনা। কিন্তু আজ তোমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমি যাবো না। আমার জীবনের সব থেকে প্রিয় জিনিস তুমি, আমার জীবনে তোমার অস্তিত্ব। আমি তোমাকে অনেক বিরক্ত করেছি, কাঁদিয়েছি। আর কাঁদাবো না। তোমার কোলে মাথা রেখেই আমি শেষ নিঃশ্বাসটা নিতে চাই।

এই চিঠিটা আমার বালিশের নিচে রেখে দিলাম। আমি জানি , এই চিঠিটা যখন তুমি পাবে তখন আমি থাকবো না। আর তুমি আমাকে মনে করে আমার বালিশটা বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদবে। তোমাকে আমি অনেক ভালবাসি, রুদ্র। আমি যাওয়ার পর আমাকে মনে করে আর কেঁদো না, হাসি মুখে আমায় মনে করো, প্লিজ। আমি কিন্তু কাঁদতে পছন্দ করি না। তুমি কাঁদলে তোমাকে দেখতে ভাল লাগে না। চোখ মুছো। ভালো থেকো রুদ্র ।

ইতি

তোমার স্ত্রী
ঋতুপর্ণা

চিঠিটা ভিজে গেছে জলে । এই বালিশে আর, ঋতুপর্ণা কেশ বিছিয়ে ঘুমাবে না । এই ঘরে তার গুঞ্জন শোনা যাবে না। উপরে যিনি থাকেন তিনি কেন ভালবাসার মানুষটাকে অসময়ে কেড়ে নেন !

রুদ্রর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে- ঋতুপর্ণা , ফিরে আসো। তোমার সাথে আমার অনেক আলাপ এখনো বাকি। হাতে হাত রেখে এখনো অনেক দূর হেঁটে যাওয়া বাকি। তোমাকে এখনো অনেক অনেক বেশি ভালবাসা বাকি।

কেমন লাগলো রুদ্র কে চিঠিটা? আমার অন্য আরেকটা লেখা পড়তে চাইলে, এই লিংকটা ফলো করো: কাবুলিওয়ালা পারলে একটু সঙ্গ দিয়ে যাবি?

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *