বাঙালির শ্রেষ্ঠ পুজো ‘দুর্গাপুজো’ দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। সাধারণত ল্যাদখোর বাঙালির দল সপ্তাহান্তে ছুটিতে বা আরামে কাটাতে পছন্দ করে, কিন্তু এইবারের সপ্তাহান্তে যেহেতু পুজোর গন্ধে ভরপুর, তাই উৎসাহ ও উদ্দীপনার পারদ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মহালয়ার দিন থেকে কলকাতার সাজ-সাজ রব। মা দুর্গাকে নিয়ে পুজো কমিটির ‘কত্তাদের’ এমন টানা হ্যাঁচড়া, যে এই না মা বলে ওঠেন, ‘ওরে তোরা থাম তো একটু, আরেকটু সাজতে দে আমাকে।’
এরকম অতি-উৎসাহী রাতজাগা পাবলিক ছাড়াও আরো অনেক ধরনের জনতা দেখা যায়। এই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে এরকম পাবলিকের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।
- এখনও shopping! ― এই ধরনের জনতার জন্যই এখনও নিউ মার্কেট চত্বর বা গড়িয়াহাট গমগম করছে। দামদস্তুর করায় বাঙালীদের জুড়ি পাওয়া মুশকিল। দোকানদারের বলা দামকে পি.সি. সরকারের ম্যাজিক করে গায়েব করে দিয়ে নিজেদের দাম দিয়ে জিনিস কেনা― এ এক বিচিত্র জিনিস।
- মিস্ ক্যালকাটা ― আচ্ছা মশাই প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখার জন্য অপেক্ষা করতে আপনার বিরক্তি মনে হয়? তাহলে বিউটি পার্লারের বাইরে লাইনে দাঁড়ানো মহিলাটাকে সম্মান করুন, কারণ তার ধৈর্য্য অপরিসীম। পুজোতে চকচকে হবার জন্য নারী পুরুষ ( নির্বিশেষে!) বিভেদ ঘুচিয়ে পার্লারমুখী হয়।
- ঝোলানোবাজ― এই প্রকার নরাধম, কীটসম প্রাণীরা অফিসের গুঁতানি খেয়ে রোজ অফিস যায় এবং বন্ধু বা পরিবারের বানানো প্ল্যান ভেস্তে দিতে এক্সপার্ট হয়। হে ডেডলাইনে নিজেদেরকে জর্জরিত করে রাখা মানবগণ! তোমাদের ‘ডেড’ বানাতে বন্ধুরাই যথেষ্ট।
- সুন্দরী কমল এবং কমলা ― এই ধরনের জাতকেরা পুজো নিয়ে আশায় আশায় চাষার মত বেঁচে থাকে, আর পুজোর একমাস আগেই কোনদিন কী পরবে, কি সাজবে সব ভেবে রাখে, যদিও সেটা বাতিল হয়ে যায় কারণ যত পুজো এগিয়ে আসে এরা তত সাজপোশাক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট বাড়তে থাকে।
- হা ম্যা আলসি হুঁ― এরা সেই বিরল প্রজাতির জনগণ; এরা যারা পুজোতে ঘোরার থেকে ঘুমোনোটাকে বেশি প্রেফার করে। পুজোতে এদের কোনো উৎসাহ উদ্দীপনা থাকে না, রীতিমত বেজার বদন নিয়ে এরা ঘরে থাকে। হাতে টিভির রিমোট এবং মুখের সামনে খাবার জোগান― এদের কাছে স্বর্গ। যত যাইহোক দুর্গাপুজো বাঙালীর কাছে অনাবিল আনন্দের ডালি নিয়ে হাজির হয়। সমস্ত ভেদাভেদ দূর করে মা দুর্গা আসেন ভালোবাসার বাণী নিয়ে। তাই এই পুজোতে সমস্ত রাগ, ক্ষোভ, অভিমান ভুলে একসাথে মেতে ওঠা যাক আর মনে মনে থাকুক অভয়ার আশ্বাসের বাণী ।