ওড়িশাকে যদি জলপ্রপাতের স্বর্গরাজ্য বলা হয় তাহলেও খুব ভুল বলা হবে না..পাহাড় জঙ্গল আর সুন্দরীঝর্ণার সহযোগে ওড়িশার নৈসর্গিক সৌন্দর্য সহজেই মনিকোঠায় স্থান করে নেয়। আগের একটি ব্লগে বলেছিলাম পঞ্চলিঙ্গেস্বর মন্দিরের কথা। আজ বলবো ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার সিমলিপাল জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত দেবকুন্ড অম্বিকা সতীপীঠ এর কথা কুন্ড।এই দেব কুন্ড নামের উৎস খুঁজতে গিয়ে কিছু গল্পকথা ও বিশ্বাস কানে আসে। শোনা যায় স্বর্গের দেব দেবীরা নাকি এই কুণ্ডে জলকেলী করতেন সেই থেকেই এই নামের সূত্রপাত।প্রায় ৫৫ ফুট উঁচু থেকে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসছে জলধারা । চারিদিকে সবুজ জঙ্গলে ঘেরা পরিবেশ যেন পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ। ঝর্নার মাথায় রয়েছে দেবী অম্বিকার মন্দির। প্রায় ৪০০ সিঁড়ি অতিক্রম করে পৌঁছানো যায় ঝর্ণার উৎসস্থল অর্থাৎ অম্বিকা মন্দিরে। সিঁড়ি গুলি বেশ খাড়া এবং দুই পাশে কোনো রেলিং নেই। ওঠার সময় দু ধারে চোখ গেলেই দেখা যায় ছোটবড় নানা আকারের পাথর ও পাহাড়ি খাদ। বয়স্ক পর্যটকদের পক্ষে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা কস্টকর। জলপ্রপাত আর এর জাগ্রত সতীপীঠের জন্যই ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলাটি বিখ্যাত। তবে বনবিভাগের এন্ট্রি গেট থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার অত্যন্ত করুন ও বেহাল দশা পর্যটকদের পক্ষে খুবই অসুবিধাজনক।ওড়িশা সরকারের উদাসীনতা ও পরিকাঠামোর অভাব যে স্পষ্ট সেটা অনুমান করা যায়। পথের এইটুকু বিড়ম্বনা বাদ দিলে বাকি রাস্তা প্রকৃতির অঙ্গের নানা রূপ চাক্ষুস করেই কেটে যাবে। কুন্ড যাওয়ার পথের রাস্তা
আপন গতিতে উচ্ছল উজ্জ্বল পাষানের স্নেহধারা গিরিবক্ষে প্রশান্তির সৃষ্টি করেছে। দু ধারে বিচিত্র গাছের সারি , শুস্ক পাহাড়ের বুকে “তনু ভরি যৌবন” চঞ্চল ঝর্ণা দুরন্ত কিশোরীর মতো ছুটে চলেছে। ঝর্ণার শীতলজল পাহাড়ের রুক্ষ শুকনো দেহকে সিক্ত করে চলেছে।পর্য্যতক ছারাও বহু লোক শুধু মাত্র বনভোজন করতেও এখানে আসে। তবে মা অম্বিকা মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্যই বিশেষ বিশেষ তিথিতে অনেক পুণ্যার্থীরা এখানে আসেন মানত করেন ও মনস্কামনা পূরণ করতে পুজো দেন । কুলডিহা থেকে ৬৯ কিলোমিটার ও বালাসোর থেকে ৮৭ কিমি দূরে সিমলিপাল ফরেস্টের ডিভিশন দেবকুন্ড।বালাসোর থেকে নিয়মিত বাস চলাচল করে এখানে। তবে ভ্রমনার্থী হিসেবে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে যাওয়াই শ্রেয়।দু তিন দিনের ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে একাত্ম সুযোগ করে দেবে ওড়িশার এই নির্জন ভ্রমনস্থল।পাহাড় মন্দিরের সাথে সমুদ্রের স্বাদ পেতে গেলে ভ্রমণের ঝুলিতে যোগ করতে পারেন পঞ্চলিঙ্গেস্বর ও চাঁদি পুরের ভ্যানিসিং সি বিচ।

Facebook Comments Box

By Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *