” ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা, যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা” এই আপ্তবাক্যটি আজ ঘরে ঘরে উচ্চারিত হবে। দিদি, বোন সবাই এই মন্ত্রটি আওড়ে নিয়ে যেন ভাইকে বা দাদাকে বর্মের মত রক্ষা করে সবরকম বিপদ থেকে, ওদিকে ভাইগুলোর কপাল আজকের দিনে দই আর চন্দনের ফোঁটাতে পুরো লেপ্টে থাকে। সারাবছর ভাইয়ের দল অপেক্ষায় থাকে কারণ বছরের এই একটি মাত্র সময় যখন বোনেরা তাদের প্রতি একটু সম্মান প্রদর্শন করে। আসনে বসে ফোঁটা নিতে নিতে নিজেকে যখন হোমরা চোমড়া রাজা মনে হয় তখনই বোনের চোখ আর মুখের ফিচেল হাসিটা মনে করিয়ে দেয় কাল সকালেই ভাল কিছু উপহার না দিলে কপালে অশেষ দুর্গতি লেখা আছে। বোনেদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কিন্তু আরও স্পেশাল, ফোঁটাটা কোনোমতে দিতে পারলেই ব্যস কড়কড়ে উপহার তাদের কাছে আসবে যে।
ভাই বোনের সম্পর্ক অবশ্য দেনাপাওনার উপর নির্ভর করে না, বরঞ্চ বলা যেতে পারে তা নির্ভর করে তাদের অন্তরের সম্ভ্রম মিশ্রিত ভালোবাসার উপর। টম্ অ্যান্ড জেরির সম্পর্কের বাস্তবায়িত রূপ হচ্ছে এই ভাই বোন। বছরের তিনশো চৌষট্টি দিন রীতি একে অপরের পিছনে লেগে, আচড়ে কামড়ে, মান-অভিমান করে দিন কাটে কিন্তু আজকের দিনটা একদম আলাদা। সকাল সকাল উঠে চান করে নতুন জামা পরে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার লগ্নের শুরূ হয়ে যায়। বোনটি নতুন চুড়িদার পরে তৈরি হয়ে যায়, সে আসন পাতে, প্রদীপ জ্বালায়, সামনের প্লেটে পাঁচরকমের মিষ্টি সাজিয়ে বসে, চন্দন বা দইয়ের ফোঁটা সঙ্গে ধান, দূর্বা নিয়ে অপেক্ষা করে তার অকর্মণ্য ভাইয়ের। ওদিকে ভাইটি তখন ট্রাডিশনাল পোশাক পরার চক্করে রীতিমত নাজেহাল, শেষ অবধি জয় মা দুগ্গা বলে কোনোরকমে পোষাক পরে হাজির হয়।
এই যে বোনেরা যমের থেকে ভাইকে রক্ষা করে বিনিময়ে ভাইদেরও কিছু দিতে হয় উপহারস্বরূপ। এ প্রসঙ্গে একটা বিখ্যাত চকলেট ব্রান্ডের বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, যেখানে রাখীবন্ধনের সময় বড় দিদিটি বাবার দিকে তাকায় যাতে ছোট ভাইটিকে তিনি কিছু টাকা দিতে পারেন যেটা সে তার দিদিকে দিতে পারে, সবাইকে অবাক করে ছোট ভাইটি দিদিকে চকলেট উপহার দেয়, বিস্ময়ে দিদি জিজ্ঞাসা করে সে এত টাকা কোথা থেকে পেল উত্তরে ভাইটি জানায় ক্রিকেট ব্যাট কেনার টাকা দিয়ে সে এটি কিনেছে। বিজ্ঞাপনটা সত্যি মনে আবেগ উত্তোলন করে, আসলে ভাইয়ের দিদির প্রতি এই যে ভালোবাসা, এটাই তো ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার মূল স্তম্ভ।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনের অবস্থানটা বদলায় আর তার সাথে সাথে সম্পর্কের বাঁধন গুলোও। ভাই বোনের সম্পর্কের উষ্ণতাও যেন কমতে থাকে ধীরে ধীরে, মনের উষ্ণতা হয়তো সেটাই থাকে শুধু বাহ্যিক দম্ভ সেটাকে দমিয়ে রাখে। তবু ভাই বোনের সম্পর্ক চির অমলীন, ভাই যতই বোনের সাথে সহজভাবে মিশুক, বোনকে রক্ষা করার সময় কিন্তু কোনোক্ষেত্রে সে পিছু হটবে না। আবার যতই ভাইয়ের সাথে খিটিমিটি লাগুক ভাইকে আগলে রাখার বেলায় দিদির জুড়ি মেলা ভার।
এই টক ঝাল মিষ্টি ভাই বোনের সম্পর্ক চিরকালের, তাই আজকের দিনে ভাইগুলো মিষ্টি খেয়ে পেটমোটা করুক আর ওদিকে বোনগুলো উপহারের আশায় মিষ্টি খাওয়াক। বছরের বাকি দিনগুলোর মারপিট, আজকের একটা দিন না হয় কুলুঙ্গিতে তোলা থাক।
“Shibori” is the annual fest of Footwear Design and Development Institute (FDDI), Kolkata. The event started on 26th April. The event was well organized; thanks to the hard […]