প্রতিবন্ধী কথাটা শুনলেই এখনই কিছু মানুষের আহা! উহু! করে দরদ উতলে উঠবে। দু-তিনটে সহানুভূতি মাখানো কথা বলবে ব্যাস, আবার এই মানুষগুলোই “ইস, ওদের বাড়ির মেয়েটা তো বিকলাঙ্গ হয়েছে” “দেখ পা-টা কেমন বাঁকা” বলে নাক সিটকে সমালোচনা করবে।
আচ্ছা বলুন তো প্রতিবন্ধী কারা? কারা প্রতিবন্ধী?
যে ছেলেটা ভাল ফল করে মায়ের কোলে চরে ইউনিভারসিটিতে ভর্তির পরীক্ষা দিতে যায় সে? নাকি দূরে দাঁড়িয়ে ছেলেটার অবস্থা নিয়ে যারা নোংরা হাসাহাসি করে তারা?
চোখের জ্যোতি হারিয়ওে যে সঙ্গীতের সাত সুরে মাতিয়ে দেয় সে প্রতিবন্ধী নাকি তাকে যারা গান শেখাবেনা বলে বার করে দিয়েছে তারা প্রতিবন্ধী?
মেয়েটা বিকলাঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও আজ একজন সফল শিক্ষিকা। তবে এই মেয়েটির দিকেই সবাই আঙুল তুলেছিল।পড়াশুনাতে বাঁধা দিয়েছিল। এখানে প্রতিবন্ধীটা কে?
অ্যাকসিডেন্টে হাত বাদ যাওয়ার পরও যে বাবা কাজ করেছে, রোজগার করে ছেলেকে মানুষ করেছে সে প্রতিবন্ধী নাকি ওই ছেলে যে আজ সোসাইটিতে বাবা কে বাবা বলে পরিচয় দেয়না সে?
এরকম হাজার হাজার উদাহরন আছে। শরীরে অস্বাভাবিকতা নিয়েও তারা এগিয়ে গেছে। ওদের কোনো সহানুভূতির প্রয়োজন নেই। ওরা প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী, তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাজের চোখে যারা সুস্থ তাদের সাথে লড়ে গেছে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে তারা আলাদা নয়। আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো ওরাও নিজের কাজে আনন্দ খুঁজে পায়।
তাহলে ওরা কী প্রতিবন্ধী?
আসলে প্রতিবন্ধকতা তো লোকজনের মানসিকতায়। বাচ্ছা শরীরে অস্বাভাবিকতা নিয়ে জন্মালে যারা বাচ্ছার মুখ দেখে না, বাসে, ট্রেনে প্রতিবন্ধী সিট দখল করে নেয়, রাস্তাঘাটে নাক সিটকে সমালোচনা করে, তারা প্রতিবন্ধী, যারা ওদের প্রতিভা, ওদের স্বাভাবিকতা, ওদের পাঁচজনের সাথে তাল মিলিয়ে বাঁচার তাগিদটাকে সরিয়ে রেখে, ওদের প্রতিবন্ধকতা গুলিকে সামনে রেখে ওদের নীচু চোখে দেখে, ওদের সাথে কুৎসিত আচরন করে সেই সব “সুস্থ ও স্বাভাবিক” মানুষগুলোই প্রতিবন্ধী। এইসব প্রতিবন্ধীদের সত্যিই সহানুভূতির প্রয়োজন।