দুঃখের দোকান

দরজায় খট খট শব্দ শুনেই সেদিকে না তাকিয়ে খুশবু বলল,

“ভেতরে আসেন।”

বাইরের মানুষটা দরজা ঠেলে ভেতরে আসল। খুশবু তখনো তাকায় নি। মাথা নিচু করে কিছু একটা লিখছে বোধহয়। মানুষটা এসে দাঁড়িয়ে রইল। খুশবু তার দিকে না তাকিয়েই বলল,

“দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসেন। বি কম্ফর্টাবল।”
মানুষটা একটা চেয়ার টেনে বসলেন। খুশবু এখনো তার খাতা কলমে ব্যস্ত। কিন্তু মুখে হাসি হাসি ভাব রেখে বলল, ” কেমন আছেন আপনি?”
মানুষটা ভড়কে গেল হঠাৎ, ” আজব তো আপনি ডাক্তার না অন্য কিছু, নাম ধাম না জিজ্ঞেস করে, জিজ্ঞেস করছেন কেমন আছি? ভালো থাকলে আপনার কাছে কেন আসতাম?”
খুশবু শান্ত ভাবেই চোখের চশমাটা নাক থেকে একটু উচুঁ করে, তার দিকে তাকালো। হাসি মাখা মুখে বলল, ” ঠিক আছে। আপনার নাম কি? ”
মানুষটা রাগ দমিয়ে হড়বড় করে বললো, “আমার নাম নিলাদ্র সেন। আমার বয়স ২৫ বছর। আমি একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করি। আমার বাড়িতে বাবা মা আছেন।….”
– “থামুন থামুন,আপনি এত নার্ভাস হচ্ছেন কেন?”
– “ম্যাডাম একটু জল হবে?”
খুশবু হাতের সামনের পানির গ্লাসটা তার দিকে এগিয়ে দিল। সে গটগট করে জল পান করতে লাগলো। তা দেখে বেশ মায়াই হলো খুশবুর। বেচারা মানসিকভাবে অনেক বিচলিত, তা বুঝাই যাচ্ছে। খুশবু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। দু তিন কদম হাঁটতে হাঁটতে বলল, ” চলুন জানালার সামনে বসি। ভালো লাগবে। কত রঙিন এই পৃথিবী। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়।”
নীলাদ্র, খুশবুর পিছু নিয়ে জানালার পাশে রাখা একটা সোফাতে বসল।

দৃশ্যটা বেশ দারুণ। বড় একটা জানালা পুরোটাতেই কাঁচ দেয়া। গ্রিল বা রেলিং নেই। জানালা খোলার উপায়ও নেই। তবুও দেখতে ভীষণ সুন্দর। দুটো সোফা মুখোমুখি, মাঝে একটা ছোট গোল কাঁচের টেবিল। টেবিলের উপর একটি বনসাই গাছ, একটা রুবিক্স কিউব, একটা গ্লাসের বোলে কিছু ক্যান্ডি আর দুপাশে দুটো কফি মগ রাখা।
খুশবু জানালার দিকে মুখ করে বসে আছে। মুখের হাসিটা যেন তার লেগেই থাকে সবসময়। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, ” আকাশটা খুব সুন্দর তাই না! ”
নীলাদ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,” জ্বী, মনে হয় যেন আকাশও একটা পৃথিবীর মত গ্রহ, যেখানে পাহাড় আছে, নদী আছে।”
নিলাদ্রর কথা শুনে খুশবুর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে বলল,” হ্যাঁ, মেঘেদের দেশ বুঝি। আপনার চিন্তা ভাবনা তো দেখছি বেশ কাব্যিক। আর কি মনে হয়? ”

উত্তরে নিলাদ্র কিছু বললো না।
নিলাদ্রকে এখন বেশ শান্ত মনে হচ্ছে। খুশবু বাইরের দিকে তাকিয়ে থেকেই নিলাদ্রকে জিজ্ঞেস করল, ” নীলাদ্র আপনার কি করতে বেশি ভালো লাগে? ”
নীলাদ্র বলে,” আমার গিটার বাজাতে ভালো লাগে। অবসর সময় পেলেই আমি গিটার বাজাই।”
-” বাহ! দারুণ। আপনি গিটার যখন বাজান তখন সুরের রং দেখতে পান?”
নীলাদ্র বেশ ক্রুদ্ধ হয়ে বলল -” সুরের আবার রং হয় নাকি, মজা নিচ্ছেন?”
খুশবু মুচকি হেসে তার দিকে তাকালো,” না মজা নিচ্ছি না। তবে হ্যাঁ, সুরের রং হয়। অনেকে বলে তারা দেখতে পায়। আমি অবশ্য পাই না। এবার আপনি বলুন আপনার সমস্যাটা কি?”
-” তাদের রং দেখার সাথে আমার সমস্যার কি সম্পর্ক?”
-” সম্পর্ক আছে, পরে বলছি। আগে শুরু করুন আপনার গল্প।”
প্রথমে নীলাদ্র একটু ইতস্তত বোধ করলেও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বলা শুরু করল,

” আসলে ম্যাডাম আমার একটা রোগ আছে। ভয়ঙ্কর রোগ।” এটুকু বলে সে উত্তরের অপেক্ষা করলো। উত্তর না পেয়ে সে নিজ থেকেই বলতে লাগলো, ” আসলে আমি ছোট থেকেই কিছু জিনিস অনুভব করে আসছি, কিন্তু কাউকে তা বললে, সে হেসে উড়িয়ে দেয়। কেউ বা বলে আমি পাগল। বর্তমানে কিছু ঘটনা আমাকে আরো বেশি পাগল করে দিচ্ছে তাই আপনার কাছে আসলাম।”
খুশবু চেয়ার ছেড়ে উঠে পেছনের টেবিলের উপর রাখা কফি ফ্লাক্সের দিকে গিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করল, ” কফি খাবেন? ” নীলাদ্র ইতিবাচকভাবে মাথা নাড়ালো। খুশবু কাজ করতে করতে শান্ত গলায় বলল, ” আপনি কেমন জিনিস অনুভব করেন?”
-” ধরুন আপনাকে আমার সামনে কেউ একটা ঘুষি মারল, বা আপনি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলেন, আপনি যে নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যথা পেয়েছেন আমিও ঠিক সেই জায়গায় ব্যথা অনুভব করি।”
খুশবু কাজ থামিয়ে নীলাদ্রর দিকে বিস্মিত চোখে তাকাল। কয়েক মুহূর্তের পর সে কফি হাতে নিয়ে এসে বলল, ” তারপর?”
-” এই অনুভূতিটা দিন দিন কেমন যেন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর অনেক সময় অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতে পরতে হয় আমাকে।”
-“যেমন?”
-“যেমন কিছুদিন আগে আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। রাস্তায় ভিড় তাই আমাকে দাঁড়াতে হয়। এমন সময় দেখলাম দুটো পুলিশ একজন লোককে পিটাচ্ছে। আমার চোখে পরার সাথে সাথে আমার শরীরেও ব্যথা অনুভব করতে লাগলাম। তীব্র ব্যথা। যেন কেউ আমাকে পিটাচ্ছে। রাস্তাতে জ্যাম থাকার কারণে সেখান থেকে আমি বের হতে পারছিলাম না। অন্য দিকে তাকিয়েও সেই ব্যথা থেকে মুক্তি পাচ্ছিলাম না। আমি লক্ষ্য করলাম পুলিশরা লোকটাকে যেখানে যেখানে মারছে,আমিও ঠিক সেখানে সেখানে ব্যথা অনুভব করছি। আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে যতক্ষণ পর্যন্ত না, তারা সেই লোকটাকে মারা বন্ধ করেছে। আর ব্যথার কারণে আমিও ঠিকভাবে চলতে পারছিলাম না। এদিকে সেদিকে পড়ে যাচ্ছিলাম লোকটার মত। আমার কর্মকাণ্ড দেখে রাস্তার মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।”
-” হুম বুঝতে পারলাম। আপনার সমস্যা কি শুধু এটাই যে আপনি অন্যের অনুভূতি অনুভব করতে পারেন?”
-” জ্বী ”
-” ঠিক আছে। আপনার একটা পরীক্ষা করব তারপর জানাবো আপনাকে। আজকে আপনি আসেন। কাল আপনার পরীক্ষা করব।”
নীলাদ্র মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলো।

পরের দিন একই সময়ে নীলাদ্র এসে হাজির। দরজায় খটখট শোনার আগেই খুশবু বলল, ” ভেতরে আসুন”। নীলাদ্র ভিতরে আসল। পুরো ভিজে গেছে সে। হাঁটার সময় চপ চপ শব্দ হচ্ছে।
-” কি ব্যাপার মিস্টার নীলাদ্র? বৃষ্টি হচ্ছে কি বাইরে?”
-” জ্বী ম্যাডাম, তাই তো ভিজে গেলাম, এমনি এমনি তো কেউ ভিজে ডাক্তারের কাছে আসে না।”
খুশবু জোরে জোরে হাসতে লাগলো। হাসি থামিয়ে বললো, ” দাঁড়ান আপনার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।”

টেলিফোন দিয়ে কাকে যেন ফোন করে বলল যে, একটা পুরুষের জন্য কাপড় নিয়ে আসতে সাথে একটা টাওয়েলও যেন নিয়ে আসে। ফোন রেখে নিজের চেয়ার ছেড়ে কফি টেবিলের দিকে গেলো ড. খুশবু। নিলাদ্র মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে। এখনো তার শরীর থেকে পানি পরছে। খুশবু কফির গরম মগটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ” আপনি ঐ চেয়ারটাতে বসুন।” নিলাদ্র চেয়ারে গিয়ে বসলো। খুশবু বলল,” নিলাদ্র, আপনাকে বলেছিলাম টেস্টের কথা, মনে আছে?”
-” জ্বী, আছে। আপনি লিখে দিন আমি করিয়ে নিয়ে আসি।”
-” নিলাদ্র আপনি জানেন মানসিক সমস্যার সাথে শারীরিক সম্পর্ক থাকে না, বরং শারীরিক সমস্যার সাথে মানসিক সমস্যার সম্পর্ক থাকে।”
নিলাদ্র যে কিছুই বুঝে নি তা খুশবু বুঝতে পেরেছে। ততক্ষণে বাইরে থেকে একজন লোক ভেতরে এসে নিলাদ্রকে ডেকে বাইরে নিয়ে গেলো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই নীলাদ্র ফিরে এসেছে নতুন পোশাকে।
-” বলুন কি করতে হবে?”
খুশবু দাঁড়িয়ে গেলো, ” আসুন আমার সাথে।”
একটা অদ্ভুত রুমে নিলাদ্রকে নিয়ে গেল খুশবু। নীলাদ্র রুমটা দেখেই বেশ চমকে যায় আবার ভয় ভয়ও লাগে তার। চারপাশ বন্ধ একটা রুম, একটা জানালাও নেই। শুধু মাত্র একটা গেট। ভেতরে আরো দুজন লোক দাঁড়িয়ে আছেন। নিলাদ্রর জটিলতা দূর করতে খুশবু বললো, ” আপনি ভয় পাবেন না। আপনার এখন টেস্ট হবে এই টেস্টকে সাধারণত sensory interference task বলা হয়। এই টাস্ক ১৫/২০ মিনিট পর পর করা হবে এবং দেখা হবে যে আপনি একই ভাবে সব সময় অনুভব করেন কি না। পাঁচ থেকে ছয় দফায় এই টেস্ট করা হবে। এইযে লোক দুটো দেখতে পাচ্ছেন, তাদের মধ্য থেকে একজন অন্যজনকে বিভিন্ন ভাবে স্পর্শ করবে। কখনো চর মারবে, কখনো হাত টান দিবে, কখনো ঘুষি মারবে, আবার কখনো একজন নিজেই নিজেকে আহত করার চেষ্টা করবে। এবং প্রত্যেকবার আপনার অনুভূতি আপনি এই ফর্মে লিখবেন। আমার অ্যাসিস্টেন্ট সারাক্ষণ আপনার সাথে থাকবে। ভয়ের কিছু নেই।”
নিলাদ্র বলল,” জ্বী আচ্ছা।”
খুশবু চলে গেলো।

ঘন্টাখানেক পর অ্যাসিস্টেন্ট মিস রুমালি, রিপোর্ট এবং নিলাদ্র দুজনকেই নিয়ে এলো। রিপোর্ট দিল খুশবুর হাতে এবং নিলাদ্রকে বসতে বলে, চলে গেল সে। খুশবু খুব মনোযোগ দিয়ে রিপোর্ট দেখল। তারপর চোখের চশমাটা খুলে রেখে বলল,” মিস্টার নিলাদ্র, আমি যা ভেবেছিলাম তাই। প্রথমত আপনাকে অনেক অভিনন্দন।”
নিলাদ্র ভ্রু কুচকে খুশবুর দিকে তাকিয়ে আছে। খুশবু জানে যে নিলাদ্রর মনে অনেক প্রশ্ন তাই সে হাসিমুখে বলল, ” নিলাদ্র, রাগ করবেন না। অভিনন্দন জানানোর কারণটা এখনি বলছি।

দেখুন পৃথিবীতে কিছু জিনিস ম্যাজিকাল হয়ে থাকে। কিন্তু সব ম্যাজিকের পেছনে একটা ট্রিক্স থাকে। বিজ্ঞান থাকে। আপনার যে অসুবিধাটা, আপনি অসুবিধা বলছেন তা আসলে অসুবিধা নয়, বরং সুপার পাওয়ার বলতে পারেন। আপনার যেটা আছে তাকে বিজ্ঞানের ভাষায় “মিরর টাচ সিনেস্থেশিয়া” বলে। সিনেস্থেশিয়ার বাংলা হচ্ছে যুগ্মবেদন। এটা মূলত ইন্দ্রিয়োলদ্ধ এক প্রকার অনুভূতি যেখানে শরীরের একটি অনুভূতিকে উদ্দীপ্ত করলে অন্য অনুভূতিরও সৃষ্টি হয়। সহজ ভাষায় যদি বলি, মানুষের ইন্দ্রিয় পাঁচটি। বলতে পারেন কি কি?”
-” চোখ, কান, নাক, জিভ আর ত্বক। ”
-” একদম। Very good । এখন সাধারণ মানুষ এক সময়ে একটি ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে অনুভব করে। যেমন আমি যা দেখছি তা দেখছি শুধু, স্বাদ পাচ্ছি না।

মূলত সিনেস্থেশিয়া যাদের হয় তারা কেউ কেউ শব্দের রং দেখতে পায়, কেউবা রংয়ের আওয়াজ শুনতে পায়, কেউ শব্দ বা সংখ্যার গন্ধ পায়, কেউ কেউ আবার স্বাদ পায়। আর এটা কোন রোগ নয়। এটা মূলত জেনেটিক বৈশিষ্ট্য। ডিএনএ এর ভেরিয়াশনের কারণে কেউ কেউ সিনেস্থেট হয়ে জন্ম নেয়। পৃথিবীতে পঁচিশ হাজার মানুষের মধ্য থেকে এমন একজন মানুষের জন্ম হয় যে কিনা সিনেস্থেট।”
-” আপনি এতক্ষণ থেকে যা বলছেন তার বেশিরভাগ জিনিসই আমি বুঝি নি। তবে না আমি শব্দের রং দেখি না গন্ধ পাই। আমার সাথে এদের কি সম্পর্ক? বুঝলাম না তো।”
-” দেখুন আমি পুরো কথা শেষ না করার আগে আপনি বুঝবেন না। এবার শুনুন, সিনেস্থেশিয়া অনেক ধরনের হয়। গ্রফিম কালার, ক্রোমস্থেশিয়া, স্পেশাল সিকোয়েন্স, অডিটরি ট্যাক্টাইল এগুলো একেক জনের একেক রকম হয়ে থাকে। এদের বৈশিষ্ট্য হলো, বর্ণ, সংখ্যার রং দেখতে পাওয়া,যে কোন শব্দ যে কোন মুহূর্তে দেখতে পাওয়া এবং সেই শব্দের রং দেখতে পাওয়া। কেউ কেউ একটা সংখ্যা কতটা দূরে বা কাছে তা অনুভব করতে পারেন, আবার বিভিন্ন শব্দ ত্বকে অনুভব করতে পারেন। এদের থেকে ভিন্ন ধরনের দুটো অপ্রতুল ধরণ আছে।

মিরর টাচ এবং লেক্সিকাল গ্যাস্ট্যাটরি সিনেস্থেশিয়া। আপনার ধরনটি হচ্ছে মিরর টাচ। মিরর টাচ খুব কম সংখ্যক মানুষের হয়ে থাকে। মিরর টাচ সিনেস্থেটরা বিশেষ কোন ব্যক্তিকে দেখে তার অনুভূতি অনুভব করতে পারেন। আর আপনিও ঠিক তাই অনুভব করেন।”

-” এর থেকে বের হওয়ার উপায় কি?”

খুশবুর চেহারায় একটু চিন্তার রেখে ফুটে উঠলো।
-” সাধারণত মানুষ সিনেস্থেশিয়াটাকে উপভোগ করে। এর কোনো মেডিক্যাল বা ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্ট এখনো নেই। তবে এটাকে আপনি নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারেন। তার জন্য অনেক সময় লাগবে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটা কমতে থাকে।”

-” আপনি বলুন আমি কি করবো?”

-” আপনাকে সৃষ্টিকর্তা একটা গুন দিয়েছেন যা আমাদের মধ্যে নেই। এটাকে কাজে লাগান। অন্যের সাহায্য করুন। কিভাবে করবেন আপনি জানেন। পুরো জনসংখ্যার ১.৬-২.৫% মানুষ এই সুযোগটা পেয়ে থাকে। অনেকে এই সুযোগের বেশ ভালো কাজে ব্যবহার করে থাকেন।”
-” তার মানে আমার রোগের কোন ওষুধ নেই!”
-” এটা কোন রোগ নয়, যে এটার ওষুধ থাকবে। এটা একটা আশীর্বাদ। ভেবে দেখেন।”

নিলাদ্র মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলো চেম্বার থেকে।

খুশবু চেম্বারের দিকেই যাচ্ছে। রাস্তা কাঁটা তাই ঘুরে অন্য দিক থেকে যেতে হবে। এই রাস্তায়ও আটকে পরেছে। অনেক ট্রাফিক জমেছে আজকে। গাড়িতে বসে থাকতে বিরক্ত লাগছিলো তাই জানালার কাঁচ নামিয়ে বাইরের দিকে দেখছে। হঠাৎ চোখে পড়লো একটা বোর্ড। তাতে লেখা,

” দুঃখ কিনি,চাইলে বিক্রি করতে পারেন ” ।

নিচে তাকিয়ে দেখলো একটা দোকান। মনে প্রশ্ন জাগলো, ” দুঃখ কিনে মানে কি? “। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করল,
” ড্রাইভার সাহেব, এই দোকানটা কিসের? ”
ড্রাইভার সাহেব উত্তর দিলেন, ” দোকানের ভেতর যাই নাই ম্যাডাম কখনো।”
-” কবে থেকে এই দোকান এইখানে? কখনো তো দেখি নাই। ”
-” বছর খানেক তো হবেই ম্যাডাম। আর আপনি তো এই রাস্তা দিয়ে আসেন না তাই চোখে পড়ে নাই হয়তো।”
-” আচ্ছা, গাড়িটা সাইড করেন তো জ্যাম ছুটলে। আমি নামলাম।”
এই বলে খুশবু নেমে গেল। সে দোকানের ভেতরে ঢুকল। খুব ছিমছাম দোকান। তেমন কিছুই নেই। বই আছে, অনেক গুলো বুক শেলফ আছে। মনে হয় বইয়ের দোকান বা লাইব্রেরী হবে। খুশবু হেঁটে হেঁটে দেখছে দোকানটা। এক কোণে সুন্দর একটা দোলনা রাখা। কোথাও সোফা রাখা। কোথাও বেডশিট লাগিয়ে দু চারটে কুশন দিয়ে বসার জায়গা করা। জায়গাটা বেশ সুন্দর। বেশ কয়েক জায়গায় গাছ ঝুলানো। কেমন একটা অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটতে থাকে খুশবু।

হঠাৎ পেছন থেকে একজন জিজ্ঞেস করল,

” দুঃখ বিক্রি করবেন?”

খুশবু পিছন ফিরে তাকাল। নিলাদ্র বলল, ” ম্যাডাম আপনি?”
খুশবু অবাক এর সাথে সাথে আনন্দিতও হলো।
-” মিস্টার নীলাদ্র যে।”
-” জি ম্যাডাম।”
-” কিসের দোকান এটা? তোমার দোকান?”
-” জি ম্যাডাম,আমার দোকান। ম্যাডাম আপনি বলেছিলেন না আমার জাদু দিয়ে মানুষকে সাহায্য করতে, তাই করছি।
এই পৃথিবীতে সবাই দুঃখী, আর কারো জায়গায় না থাকলে কেউ কারো দুঃখ বুঝতে পারে না। কিন্তু আমি পারি তাই দুঃখ কিনি। লোকে আমার কাছে দুঃখ বিক্রি করতে আসে।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *