আমি মফস্বলের মেয়ে, তাই আমার ছোটবেলায় খ্রীস্টমাসের সময়ে কেকের প্রচলন এখনকার মতো ছিলোনা, তবে সময়ের সাথে সাথে সেটা বেড়েছে আর আমাদের আজকালকার জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে বলা যায়। আমার বাড়ির কাছেই খ্রীস্টমাসের সময়ে সাতদিন ধরে খুব বড়ো করে মেলা হয়। পঁচিশে ডিসেম্বর মেলা প্রাঙ্গনে থাকা চার্চের সামনে বাজি প্রদর্শনী দিয়ে মেলা শুরু হয়। ছোট থেকেই এই বাজি প্রদর্শনী দেখতে যেতাম বড়ো হয়েও যার কোনো অন্যথা হয়নি এত বছরে। আগের বছর মেলা হয়নি করোনার জন্যে।

২০১৯ এ শেষ বার যখন পঁচিশে ডিসেম্বরের দিন চার্চে আর বাজি প্রদর্শনী দেখতে যাই আমি আর মা, আমরা যেখানে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে দেখছি, দু-তিন জন পাঁচ-ছয় বছরের বাচ্চা কাছেপিঠে সবার কাছেই ভিক্ষা করছিলো। আমাদের কাছেও আসে এক সময়। আমি বাচ্চাদের টাকা দিতে চাইনা, তাই ওদের জিজ্ঞেস করলাম যে তোরা কিছু খাবি তো বল কারণ টাকা আমি দেব না। আমাকে অবাক করে দিয়ে বাচ্চা গুলো রাজিও হয়ে গেলো। মেলার মধ্যে নিয়ে যেতে কেউ এগরোল, কেউ পাপড়ি চাট, কেউ কোল্ড ড্রিঙ্ক খেতে চাইলো। আমিও সাধ্য মতো দিলাম তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী। এর মধ্যেই দেখাদেখি আরো কটা বাচ্চা চলে এসেছে, সব মিলিয়ে প্রায় ছয়-সাত জন। নিজের ইচ্ছে মতো খেয়ে তাদের সে কি আনন্দ।

এর মধ্যেই একটা বছর পাঁচেক এর মেয়ে তার আবার নতুন আব্দার যে মোমবাতি নিভিয়ে কেক কাটবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম ও কার কাছে জানলো যে কেক এ মোমবাতি লাগিয়ে কাটতে হয়? জানলাম যে ওর মা যার বাড়িতে কাজ করেন সেখানে মেয়েটি দেখেছে। স্বাভাবিক ভাবেই ওর জীবনে এই ছোট্ট আনন্দটা এখনও অবধি আসেনি সেটা বলাই বাহুল্য। কেক এর দোকান ছিলোনা তেমন কাছাকাছি, মেলার মধ্যেও কেক এর দোকান আমার চোখে পড়েনি। তো আমি বললাম ওরা যেনো পরদিন ওই একই সময়ে চার্চের সামনে চলে আসে। আমার একজন পরিচিত একজন আছেন যিনি ঘরে কেক বানিয়ে বিক্রি করেন। তার কাছ থেকে সেদিন বেশ কিছু খ্রীস্টমাসের থিমের কাপ কেক নিয়ে পরদিন আমি আর মা আবার গেলাম চার্চে।

সত্যি বলতে আমি ভাবিনি বাচ্চা গুলো আসবে, ভেবেছিলাম পরদিন আবার অন্য কোথাও চলে যাবে ভিক্ষা করতে কিন্তু সব কটা দেখি এসে হাজির ঠিক সময়েই। তো আমরা চার্চের গেটের পাশেই একটা গাছের নিচে বসে ওই কেকে মোমবাতি লাগিয়ে দিলাম। ওরা সেগুলো কাটলো একসাথে, খেলো বড্ড আনন্দ করে, সে এক অদ্ভুত আত্মতৃপ্তির মুহূর্ত ছিল আমার জন্যেও। কেক গুলো তো ওদের দারুণ পছন্দ হয়েছিল। খুবই সামান্য তবুও এক অসামান্য অভিজ্ঞতার ভাগীদার হয়ে গেলাম নিজের অজান্তেই। এটাই হয়তো আমার অন্যতম সেরা বড়দিনের মুহূর্ত। ধুলোয় লুটিয়ে থাকা ‘যীশু’ দের মুখের এক চিলতে হাসিতে প্রভু যীশুর জন্মদিন সেদিন সত‍্যিই স্বার্থক হয়েছিল।

Facebook Comments Box

By Shreosi Ghosh

A whole time doctor, ameture writer, part time food photographer and dancer... Basically I'm jack of all trades, master of none?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *