(১)

অংশু মুড়িটা খাবে খাবে করেও খেল না। সে কী মনে করে মুড়িগুলো না খেয়ে গামছার ভিতরে আবার রেখে দিল। মুড়িগুলো বেশ লম্বা লম্বা, আহ্ কী গন্ধ, মা সদ্য তার জন্য এনে দিয়েছে পাশের মুদির দোকান থেকে। কিন্তু তাও অংশুর মন চাইল না খেতে।

আসলে অংশু জানে তার মা কত কষ্ট করে টাকা রোজগার করে। তাদের দুবেলা খাবার ও জোটে না। তার মা পরের বাড়ি মুখ ঝামটা খেয়ে কাজ করে। দুটো বাড়ি বাসন মাজা, আর তিনটে বাড়ি কাপড় কাচা। মায়ের ইদানীং বয়েস বেশি হওয়ায় কষ্ট যে হয় তা অংশু বোঝে। কিন্তু কিছু করতে পারে না। গরীবের ছেলে তার উপর তারা গ্রামের দিকে থাকে, কোনো কাজ সেভাবে নেই সেখানে। তাই অংশুকে দেড় মাইল দূরে হেঁটে আসতে হয় বড় রাস্তার ধারে ওখান থেকে বাসে করে এক ঘন্টা গেলে তবে তার কাজের জায়গা পড়ে। তাই তার মা মুড়ি বাতাসা দেয় তাকে।

অংশু জানে কত কষ্ট করে তার মা তাকে মুড়ি কটা দেয়। আজ তো আবার ঘরে কিছু নেইও। আসলে রেশনের চালটা শেষ হয়ে গেছে। তাই দোনোমোনো করে শেষ অবধি সে মুড়িগুলো রেখেই দেয়।

ফেরবার সময় বাসে কালীর সাথে দেখা। কালীরাম দলুই, তাদের পাশের গ্রামে থাকে। সে অংশুকে হেসে বলে,

” কী রে কী খবর তোর, বহুকাল তোর দেখা নেই যে”

একে তো খিদে পেয়েছে তার উপর প্রশ্ন, অংশু মুখখানা বেঁকিয়ে বলে,

” আর ভাই, কাজের চাপ। তোর কী খবর? শুনলাম নাকি তোর বাবু তোকে ভালোই টাকা দেয়”

এইভাবে কথা এগোতে থাকে, পুরানো বন্ধুর সাথে।

একসময় কালী বলে,

” ভাই এবার খিদে পাচ্ছে অনেকখন থেকে বকছি। চল না, নেমে একটু চপ মুড়ি খাই” বাসটা তখন একটা স্টপেজে দাঁড়িয়ে ছিল। জায়গাটা জনবহুল, ছোটোখাটো দুচারটে দোকান ও আছে।

অংশু সেদিকে তাকিয়ে বলল,

“না রে আসলে পেট ভর্তি, তার উপর শরীরটা ভালো না”

এই বলে সে মাথাটা সিটের পিছনে এলিয়ে দেয়। পেটে খিদে নিয়ে ঘুম আসে না, তাও সে শোয়ার চেষ্টা করে।

 

(২)

ঘরে ঢুকে অংশু দেখে তার মা শুয়ে আছে।

” মা কী হল, শুয়ে? শরীর খারাপ? ”

তার মা চোখ খুলে বলে,

” না, আসলে আজ খাটনি হয়েছে খুব” বলে সে উঠে বসে পড়ে।

অংশু মায়ের হাতে গামছাটা দিয়ে বলে,

” হ্যাঁ আমিও খুব ক্লান্ত। আজ তাড়াতাড়ি শোব আমিও। তুমি এটা ধর, আমি জামা ছেড়ে আসছি।”

তার মা হাতে মুড়িটা নেড়েচেড়ে বলে,

” হায়! খাসনি কেন?”

অংশু এবার তার দিকে তাকিয়ে  একগাল হেসে বলে,

” আসলে আজ কালীর সঙ্গে দেখা হল। ওই জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে চা, চপ মুড়ি খাওয়াল। যত বলি যে পেট ভর্তি তাও ছাড়ে না ব্যাটা। শেষে তোমার নাম নিতে তবে ছাড়ল।”

তার মা আসতে আসতে মাথা নাড়তে লাগল। একটু ইতস্তত করে অংশু বলে,

” মা ওটা তুমি খেয়ে নাও”

এবার বৃদ্ধা চোখ তুলে ছেলের দিকে তাকায়। মুখটা স্নিগ্ধ হাসিতে ভরিয়ে তিনি বলেন,

” আমি বুড়ি মানুষ কত আর খাব, তার চেয়ে আয় একসাথে খাই”

অংশু চোখ তুলে মায়ের দিকে চায়, মা কি তবে বুঝতে পারল?

Facebook Comments Box

By Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *