পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে দায়ী করেছেন।

আরএসএসের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় ছাত্র পরিষদ (এবিভিপি) আয়োজিত একটি সেমিনারে বক্তৃতা রাখতে গিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বাবুল সুপ্রিয়কে কালো পতাকা দেখিয়েছিল বলে অভিযোগ‌।

মন্ত্রীর অভিযোগ, প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা তাঁর গায়ে হাত ও তুলেছে।

বাবুল সুপ্রিয় বলেছেন, “গাড়ি থেকে নামার মুহুর্তে তারা আমাকে ঘিরে ধরেছিল।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁকে লাথি, ঘুষি মেরেছে বলেও অভিযোগ করেছেন মন্ত্রী।

তিনি আরও দাবি করেছিলেন যে বিক্ষোভকারীরা তাকে প্রকাশ্যে “নকশাল বলে উল্লেখ করে” তাকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। অথচ হিংসাত্মক আচরণ করতে দেখা গিয়েছে স্বয়ং মন্ত্রীকেই।

বাবুল সুপ্রিয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরর অরাজকতার জন‍্য পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার প্রতি অভিযোগ টেনে এনেছেন।  তিনি বলেছিলেন, ভাইস-চ্যান্সেলর জানতেন যে এটি ঘটতে চলেছে। তবে এ সম্পর্কে কিছুই করেনি। তিনি পুরো প্রশাসনের প্রতিপুরোপুরি হতাশা এবং বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

তিনি আরও বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পুলিশকে ফোন করতে অস্বীকার করেছেন।

আসনসোলের বিজেপি সাংসদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করার জন্য রাজ্য সরকারকেও দায়ী করেছিলেন, অভিযোগ করেছিলেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার উদ্ধারে বিলম্ব করার চেষ্টা করেছিলেন।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি বাড়ার সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধার করতে ক্যাম্পাসে পৌঁছেছিলেন।

বাবুল সুপ্রিয় যাদবপুর অরাজকতার জন‍্য পুরোপুরি সরকারকেই দায়ী করেছেন।

তাঁকে উদ্ধার করতে দেরি হওয়ার জন‍্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ‍্যমন্ত্রীকেই দুষেছেন তিনি।

অবশ‍্য শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং কর্মীরা এসএফআই এবং এবিভিপি-র সদস্যদের মধ্যে সহিংসতা অস্বীকার করেছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছাত্ররা ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা ও বিরোধিতা বিরুদ্ধে সতর্কতা অবলম্বন করেছে যা তাদের বাক স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারকে মারাত্মকভাবে রক্ষা করেছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

তবে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা গায়ক বাবুল সুপ্রিয় ছাত্রদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেছেন এবং ঔদ্ধত‍্যপূর্ণ আচরণ করেছেন।

সাবেক ছাত্র নকশাল নেতা আশিম চ্যাটার্জি, যিনি ছাত্রাবস্থায় বেশ কয়েকটি বিক্ষোভের সম্মুখভাগে ছিলেন, বলেছেন যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পবিত্রতাকে সম্মান করা উচিত।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এই ঘটনার বিরোধিতা করে প্রতিবাদ মিছিল করেছে শুক্রবার বিকেলে। ঐ মিছিলে সমর্থন করার জন‍্য হেঁটেছে প্রায় দশ হাজার ছাত্রছাত্রী। এই মিছিল সমর্থন করে হেঁটেছেন মৌসুমী ভৌমিক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের অধিকার, স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে এই মিছিল।

যাদবপুর কিংবা জেএনইউ প্রসঙ্গে এলেই গেরুয়া রাজনীতির সঙ্গে তফাৎটা চলে আসে লাল আদর্শের। তবে অরাজনৈতিক ভাবে ভাবতে গেলেও প্রতিবাদটা সমর্থনযোগ‍্য শিক্ষার প্রসঙ্গে।

এই আন্দোলন শিক্ষাক্ষেত্রে গেরুয়া রাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে ভারতবর্ষের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টরা।

Facebook Comments Box

By Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *