” সখী ভালোবাসা কারে কয়” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এই গানের কলি আজও দুর্বোধ্য প্রহেলিকার মত আমাদের মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। আচ্ছা ভালোবাসা কীভাবে হয়? কতটাই বা তার আকর্ষণ আর কতটুকুই বা তার কষ্ট এ নিয়ে নানা জনের নানা মত, তবে মন থেকে ভালোবাসলে তবেই এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া যায়।

আচ্ছা কখনও কী এমন হয়েছে, কোনো একজনকে দেখে চোখ আটকে গেল? শুধু নেহাতই বাহ্যিক রূপের জন্য নয়, ভালোবাসার শুরুটা হয় নজর দিয়ে -যাকে দেখছে আর যে দেখছে…. মনের ভাবটা অব্যক্ত থাকে অনেক সময়, হয়তো অবহেলার ভয়ে কিংবা সেই বিশেষ মানুষের সঙ্গে সব সম্পর্ক ঘোচানোর ভয়ে।

ভয়টা মনে থাকেই, একদম শুরু থেকে… কলেজে বা অফিসে, বাড়িতে বা বাইরে যখনই দেখা হয় মনে হয় এই না বুকে স্পন্দন সেই প্রিয় মানুষ টির কাছে চলে যায়, গলা শুকিয়ে যায়, ঘাম দিতে থাকে, মনের কথা মুখে আসতে আসতে পেটে ব্যাথা শুরু হয়ে যায় আর ততক্ষণে সেই মানুষটি হয়তো চোখের আড়ালে চলে যায়, শরীরে ও মনে নেমে আসে দীর্ঘ অবসাদ তারপর আরেক প্রতীক্ষার তোড়জোড় চলে। মন চায়, আবার একটু দেখা হোক, কল্পনাতে ভর দিয়ে সেদিনই হয়তো রাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নানা অঙ্গভঙ্গি চলে….

আধুনিকতম যুগে আড়ালে আবডালে থেকে কাউকে লক্ষ্যকরার মজাই আলাদা, মনের মধ্যে অহরহ কী হয় কী হয় ভাব লেগে থাকে, কী জানি সে যদি জেনে ফেলে মনের গোপনতম কথাটা?! ভালোবাসার সবথেকে পরিষ্কারতম কথাটা লুকিয়ে থাকে অব্যক্ত কিছু কথার মধ্যে যা শুধু চোখের পলকে ব্যক্ত হয়, মন চায় বাকিটা না হয় না বলাই থাকুক।

ভালোবেসে আঘাত পায়নি এমন ব্যাক্তি পাওয়া মুশকিল, আঘাত সেই পায় যে তার মন লাগায়… শরীর নয়, মনের আঘাত চিরকালের জন্য আমাদের কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়, ভালোলাগার রেশ থাকে সেখানে। আঘাত যে পায়, সে দুনিয়ার সামনে বলতে পারে সে হতভাগ্য কিন্তু যে আঘাত করে? তার কষ্টটা কী কেউ বোঝে!  না, আমাদের সমাজ অত্যাচারীদের প্রতি খুব নিষ্ঠুর, হওয়াই উচিত। কিন্তু বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে অত্যাচারী নিজেই তার অত্যাচারের শিকার হয়ে দাঁড়ায়। একবার ভাবুন তো একজন যে তিনবছরের সুস্থ, সবল সম্পর্কটা ছেড়ে হাত বাড়িয়েছিল অনির্দিষ্টের দিকে, অথচ সে জানত সে ভুল করছে।

ওই যে গানটার মত, ” আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান….” তাও সে গিয়েছিল, কিন্তু বিষ খেয়ে নীলকণ্ঠ গলায় ধারণ করার মত তেজ বোধকরি মহাদেবের আশীর্বাদে তার মধ্যেও ছিল, তাই শেষ অবধি সে যেতে পারেনি,  ফিরে গিয়েছে পুরানো আস্তানাতেই। নতুন আগমনী যে আদ‍্য‍পান্ত বেমানান তার জন্য, তখনও সে পুরানোকেই খুঁজে গিয়েছে বারবার নতুনের মধ্যে,  পুরাতন নেহাতই এসেছিল আশীর্বাদ রূপে যাতে পুরানো সম্পর্কের আর কোনো খাদ না থাকে; মানুষ যে কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে আগমনী তার বার্তা এনেছিল তাই তো সে তার কাছে না গিয়ে মনের দরজা উন্মুক্ত করে দেয় তার পুরানো মানুষের কাছে, ভালোবাসা এবার অবাধে প্রবেশ করবে….

        প্রত্যাখিত প্রেমিকের কষ্ট অনেক, বন্ধুসমেত গোটা সবার সামনে উঁচু নাকটা নেমে যায়, সে তখন যেনতেন প্রকারে তাকে পাওয়ার চেষ্টা করে, এটা কিন্তু ভালোবাসা নয়, ভালোলাগাও নয়, এটা হল চোখের আবেগ আর তার সাথে অনেক আত্মঅহমিকা। মানুষটিকে না পেলে তার সম্পর্কে অনেক কথা রটানো যায়, মুখে বলে ” ভালোবাসা” আসলে মনে অহংবোধ। আচ্ছা ভালোবাসলে কী একবারও রাগ হবে? তার ক্ষতি করার কথা মনে আসে কী করে? মনে থাকা উচিত, তার  সিদ্ধান্ত কে সম্মান করে সরে আসা। 

ভালোবাসা কিন্তু এভাবেও হয়, একে অপরের চোখের তারাতে…

Facebook Comments Box

By Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *