LaughaLaughi

You Create, We Nurture

Weekend Isspecial

তমসার ইচ্ছাপূরণ

আজ অনেকদিন পর তমসার পার্কের দিকে আসা। পার্কের মাঝে এক পুরোনো বটগাছের নীচে বসেই ও প্রতি রবিবারের বিকেলগুলো পার করে। সারা সপ্তাহের অফিস, সংসার ধর্ম নানা অক্লান্ত পরিশ্রমের পর এই একটা দিন তমসা নিজের মতো করে কাটানোর সুযোগ পাই। এই বটগাছকে ঘিরেই তো তার কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কলেজে পড়াকালীন তমসা এবং ওর বন্ধুরা প্রতিদিন নিয়ম করে এই পার্কে এসে এই বটগাছের তলায় বসে থাকতো। গানে, আড্ডায়, গল্পে ,ঠাট্টায় ভরে যেত ওদের প্রতিটি বিকেল এবং তার সাথে সাথে চলতো লুকোচুরি সহ হরেকরকমের খেলা। চারপাশের মানুষজনের কাছে এগুলো ধিঙ্গিপনা মনে হলেও তমসা এবং ওর সঙ্গী সাথীরা এসবের মধ্যে বারবার নিজেদের হারিয়ে যাওয়া শৈশব আবিষ্কার করতো।

পার্কে এসে খেলা, দোলনাতে দোল খাওয়া,হরেনদার ঝালমুড়ি, সেলিমদার চা এইসব কিছুতে ঘেরা পার্কে আসা দিনগুলি তমসার কাছে এখন মধুর স্মৃতি মাত্র। সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে বন্ধুর সংখ্যা ,হারিয়ে গেছে হরেন দা, পার্ক ছেড়ে দোকান তুলে নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে সেলিম দা, আরও কত কি!
এই পার্কটাও তার পুরানো খোলস ছেড়ে আধুনিকতার পরশে নতুন করে সেজে উঠেছে, কেবল রয়ে গেছে পার্কের মাঝখানে অবস্থিত হাজার স্মৃতি বহনকারী এই পুরানো বটগাছটি। এই বটগাছের নীচে বসেই তমসা হাজার স্মৃতির রোমন্থন করে প্রতিটি রবিবারের বিকেল কাটায়।

আজ যখন তমসার এই বটগাছের নীচে এসে বসেছে সূর্য তখনও মাথার ওপর কিরণ দিচ্ছে। আজকের এই রবিবারটা তমসা নিজের মতো করে কাটাতে পারেনি। কি করেই বা পারবে? হসপিটালে অসুস্থ শ্বশুর ভর্তি আছে তার সমস্ত দেখাশোনা, বাড়ির কাজ এই সবকিছু তো তাকেই করতে হয় তবুও আজ নানা কাজের ফাঁকে তমসা ছুটে এসেছে এই পার্কে। এখানের সাথে যেন এক অদৃশ্য টান আছে যেটা ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। এখানে আসলেই তমসা নানা বাচ্চা, যুবক, যুবতীদের মধ্যে বারবার তার শৈশব, কৈশোর খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে কিন্ত গৃহবধূর তকমাটা থেকে বেরোনো হয়নি আর।

সারাদিনের ছুটোছুটির পর তমসা ক্লান্ত শরীর নিয়ে বটগাছের নীচে বাঁধানো বেদীতে বসে থাকতে থাকতে কখন যে চোখের পাতা এক হয়ে গেছে সে বুঝতেই পারেনি। হঠাৎ ঘুম ভাঙে এক অচেনা বাচ্চার গলার আওয়াজে,
” ও…দিদিভাই, তুমি আমাদের সাথে খেলা করবে?
দেখো না, রামু আজ খেলতে আসেনি। এবার আমাদের খেলা কিভাবে হবে বলো তো!
তুমি রামুর হয়ে আমাদের সাথে আজ খেলবে? ”
” আমি… আমি কি করে খেলবো ? তুমি যাও, আমি এখানে বসে তোমাদের খেলা দেখবো”
“না, চলো চলো তোমাকে খেলতেই হবে আমাদের সাথে ”

বছর চারেক পর

তারপর বাচ্চা মেয়েটি তমসার হাত ধরে টানতে টানতে যখন মাঠের মধ্যে নিয়ে আসে তখন চারিদিকে অনেক বাচ্চা তমসাকে ঘিরে ধরেছে। এতদিনের জমিয়ে রাখা ইচ্ছের লোভ তমসাও আর সামলে উঠতে পারেনি। লুকোচুরি, বৌ বসন্ত, কুমির ডাঙা, চিনি বিস্কুট একে একে নানা খেলায় বাচ্চাদের সাথে নিজেও মেতে উঠেছে তমসা। বাস্তবের বেড়াজাল ভেঙে এক চল্লিশ বছরের মহিলা রুপান্তরিত হয়েছে যেন একটি পাঁচ বছরের বাচ্চাতে।
ইতিমধ্যেই সন্ধ্যা নেমেছে এবং সূর্য পশ্চিমের আকাশে তার শেষ অংশটুকুও নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। সমস্ত বাচ্চারা খেলা শেষে যে যার বাড়ি ফিরছে এবং পার্কটা তার কোলাহল হারিয়ে আস্তে আস্তে নির্জন হয়ে পড়েছে কিন্ত তমসা তখনো খেলা শেষে বটগাছের নীচে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। আজ যেন ও সময় কাল, স্থান ভুলে এক শিশু হয়ে উঠেছে। চিৎকার করে প্রতিটা মানুষকে তার জানান দিতে ইচ্ছে করছে তার সুখের মুহূর্তগুলো।মনের আনন্দে এক রবিবারের বিকেলের সুন্দর স্মৃতি নিয়ে সে ধীর গতিতে রওনা দিচ্ছে বাড়ির দিকে।

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Editorial Team of LaughaLaughi