কাউকে কিছু না জানিয়ে অবৈধ ভাবে ময়দান ছেড়ে দেওয়াটা কাপুরুষের কাজ। তাই মায়ের কথা মত রাতুল বিদেশ না যাওয়ার সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠান কতৃপক্ষকে জানিয়ে দিতে চায়। এমনটাই আশ্বাস দেয় বাবা-মাকে। শুধু কথার কথা নয়, মায়ের সামনেই ফোন থেকে কী সব ইমেইল করলো। এবার মা, বাবা, নয়না সবার মুখেই চওড়া হাসি।
রাত তখন দেড়টা হবে, রাতুল বারান্দায় এসে কার সঙ্গে যেন ফোনে কথা বলছে! বাইরে হিমেল হাওয়ায় স্রোত যেন গালে চড় মারছে। হালকা গরমের একটা হুডি পরে এত ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে কার সঙ্গে কী এমন কথা থাকতে পারে রাতুলের!
পরের দিন সকালে আবার যাত্রা শুরু। আজ সবাই একদম ফুরফুরে মেজাজে। পাহাড়ি পথ বেয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে। পাহাড়ের গায়ে কখনো কখনো পাললিক শিলার প্রতিটা স্তর খুব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রাস্তার একদিকে খাড়াই পর্বত, আরেকদিকে গভীর গভীর খাত, মৃত্যু ফাঁদ। গাড়ি গিয়ে থামলো চেরাপুঞ্জি। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে, জানালার কাঁচে ইলশে গুঁড়ির আদুরে আলাপ।
জায়গাটা পূর্ব খাসি পর্বতে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম। যেমন শান্ত পরিবেশ তেমন সুন্দর। চারিদিকটা দেখলেই মনে প্রশান্তি আসে, ভক্তি জাগে। স্কুল ড্রেস পরা ছোটো বাচ্চাগুলোকে দেখে মীনা দেবী স্মৃতি রোমন্থন করলেন, “বাবু, তোর মনে আছে সদানন্দ বিদ্যা মন্দিরের কথা? সকাল সকাল উঠে নিজেই ব্যাগ গুছিয়ে কেমন রেডি হয়ে যেতিস!” রাতুল মৃদু হাসলো। দীনেশ বাবু বললেন, “জানতো নয়না, আমাদের রাতুল আগেভাগে স্কুলে চলে যেত ফার্স্ট বেঞ্চের ধারে বসবে বলে। এক দিন অন্য একটি ছেলে ওর জায়গায় বসে পড়েছিল বলে সেকি কান্না! তুমি যদি দেখতে না… হা-হা-হা-হা” বাবা উচ্চস্বরে হেসে ওঠায় রাতুল একটু লজ্জা পেলো। যতই হোক স্ত্রীর সমনে ছোটবেলার কান্নাকাটির গল্প করলে কোন ছেলে না লজ্জা পায়? নয়নাও রঙ্গ করে রাতুলকে ভেংচি কাটলো।ওদের বেড়াতে যাওয়া যেন সত্যিই সার্থক হয়ে উঠছিল।
চেরাপুঞ্জির আরো কয়েকটি স্পট ঘুরে এবার প্রকৃতির আরেক অভিনব সৃষ্টি দেখার পালা— মৌসমি কেভ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গুহায় প্রবেশের অবস্থা বা অনুমতি থাকে না, কিন্তু এই গুহাটিতে যৎসামান্য মূল্যের টিকিটের বিনিময়ে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার রয়েছে। মীনা দেবী ওই গুহায় ঢুকতে পারবেন না, তাই দীনেশ বাবুর ইচ্ছা থাকলেও তিনি আর গেলেন না। নয়না তো খুব উৎসাহী। রাতুলের খুব একটা ইচ্ছা নেই তবে নয়নার জন্য ও রাজি হয়ে গেল। ঢোকার মুখে পাথরের গায়ে পুরু শ্যাওলার স্তর। দূর থেকে দেখে মনে হয় কালচে সবুজ একটা দানব হা করে আছে, আর মানুষগুলো কৌতুহলী চোখ নিয়ে তার পেটের ভিতরে ঢুকে পড়ছে লাইন দিয়ে। কিছুটা ঢুকে নয়না পিছন ফিরে দেখে রাতুল নেই। কথায় গেল! ওর পিছনেই তো ছিল। নয়না বার বার ডেকে রাতুলের সাড়া না পেয়ে কেঁদেই ফেললো। ভিতরে তখন আর কেউ নেই, ওদের আগে যারা ঢুকেছিল তারা অনেকটা এগিয়ে গেছে। হঠাৎ করে ‘ধপ্পা’ বলে নয়নাকে চমকে দিয়ে হেসে উঠলো রাতুল। রাতুলের সুন্দরী বউ তো ততক্ষনে রাগে-ভয়ে-অভিমানে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে লাল হয়ে উঠেছে। আগুনে ঘি দিতে তো রাতুল আছেই! ‘একে মা মনসা, তাতে আবার ধুনোর গন্ধ’— বলে কিনা,“আমি যদি হারিয়ে যাই, আর যদি না ফিরি?” নয়নার কান্না আর কে থামায়? কে আবার, মিঞা যখন আছে বিবিকে সেই থামাবে। বুকে জড়িয়ে স্নেহের আদরে বউয়ের মান ভাঙাতে ব্যস্ত আমাদের নায়ক।
– ও দাদা চলুন, চলুন! রোমান্স পরে করবেন।
–এখানে সিনেমা চলছে যে একেবারে!
দুটি মাঝ বয়সী লোকের তীক্ষ্ণ কথায় প্রেমে ব্যাঘাত ঘটলো বটে, তবে বিবির মুখে হাসি ফুটলো মিঞার জবাবে
– কেনো কাকু, হিংসা হচ্ছে নাকি? কাকিমা বুঝি আর পাত্তা দেয় না?
নয়না তো হো হো করে হেসে উঠলো
–তুমিও না! এভাবে কেউ বলে?
–কেনো বলে না! বুড়ো মামদো গুলো যে আমায় দাদা বললো?
– রাগের এই কারণ?
– আমি আমার বউয়ের সঙ্গে রোমান্স করবো নাকি… ওরা কেনো বলবে?
–আচ্ছা বাবা হয়েছে, চলো এবার
– বাবা নয়, বর
– আচ্ছা বর হয়েছে, অনেক গুহা দেখা হল, এবার চলো। বাবা মা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে তো!
যখন প্রেমের বাতাস বয় তখন বুঝি সবারই একটু আধটু প্রেম প্রেম পায়। রাতুল-নয়না কেভ থেকে বেরিয়ে দেখে বাবা-মা ওখানে নেই। রাতুল বাবাকে ফোন করলো
–তোমরা আবার কোথায় গেলে?
– তোর মাকে নিয়ে হানিবনে
–কী! হানিবন!
– তুই আমার ছেলে হয়ে এমন বেরসিক কী করে হলি বলতো? পাশে যে জঙ্গল মতো আছে ওদিকেই বসার জায়গায় আমরা বসে দুটো মধুর গল্প করছি। ছেলের হানিমুন আর বাপের হানিবন! হা-হা-হা-হা…
– ছেলের যোগ্য বাপ তুমি। যাচ্ছি যাচ্ছি
বাবা ছেলের এমন বন্ধুসুলভ সম্পর্ক বিরল না হলেও খুব একটা যে দেখা যায়, তাও বলা যায় না। তাই ভগবানেরও বোধ হয় নজর লাগে।
“একটা স্পটে এতো সময় নিলে বাকি গুলো তো দেখাতেই পারবো না।” ড্রাইভার দাদাও ওদের খুঁজতে খুঁজতে ‘হানিবনে’ এসে হাজির। “এখন এলিফ্যান্ট ফলস যাবো। সেখান থেকে মনেস্ট্রি।” কোথায় কোথায় যাওয়া হবে তার লিস্ট দিয়ে দিল ড্রাইভার দাদা।
এলিফ্যান্ট ফলস— তিনটি ধাপে নেমে এসেছে ঝর্ণা। দেখে মনে হয় হাতির দুটি কান মেলে ধরেছে আর তার মাঝ দিয়ে শুঁড়ের মত নেমে এসেছে সরু ঝর্ণা। এক অসাধারণ মুগ্ধতা। কিন্তু ওই যে বলে সাস্থ্যই সম্পদ, সেই স্বাস্থ্যের অভাবেই মীনা দেবী ছোটো ছোটো খাড়াই সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে পারবেন না। শরীর আর বইছে না। তাই একটু আধটু ঘুরেই ফিরতে হবে। রাতুলের মন ভার, সাথে নয়নারও। মনেষ্ট্রি যাওয়ার খুব ইচ্ছা ওদের। ড্রাইভার দাদা ওদের সেই ইচ্ছা পূরণ করলো। এলিফ্যান্ট ফলস এর কাছে বাইক ভাড়া পাওয়া যায়, তার জন্য কিছু ফর্মালিটি আছে। হোটেলের নাম, অ্যাডভান্স পেমেন্ট, বৈধ পরিচয় পত্র ইত্যাদি ইত্যাদি। তার থেকেও বেশি প্রয়োজন লোকাল রেফারেন্স— ড্রাইভার দাদার সূত্রে রাতুল খুব সহজেই বাইক পেয়ে গেল। প্রথমে আপত্তি করলেও বাবা-মা শেষ মেশ রাজি হয়ে গেল। কারণ ছেলে কলেজ জীবনে সেরা বাইকার, অনেক রেশও জিতেছে। ওনারা হোটেলে ফিরে গেলন।
পাহাড়ী পথে ড্রাইভ করার আনন্দটাই আলাদা। তাতে আবার যদি পিছনের সিটে প্রিয়তমা থাকে তো কোনো কথাই নেই। এ যেন সেই ‘এই পথ যদি না শেষ হয়…’ এর মত। কিন্তু কখন যে কোথায় কার পথ চলা শেষ হয়ে যায় সে কে বলতে পারে!
ক্রমশ…
– অর্যমা
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
In a spectacular celebration coinciding with the birthday of the iconic actor Prosenjit Chatterjee, the…
হিমেশ রেশামিয়ার পর সুরাশা মেলোডিজ থেকে অনুষ্কা পাত্রর নতুন গান পুজো আসছে মানেই বাঙালির নতুন…
The highly awaited trailer of grand Puja release, "Dawshom Awbotaar", produced by Jio Studios and…
This website uses cookies.