আমি বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকি। এমনিতেই কোনোকালে গুছিয়ে কথা বলার অভ্যেস নেই আমার। তার ওপরে সুবীরকে দেখে এমন ঘাবড়ে গেছি যে কি বলব। অজুহাত সাজানোর সামান্য সময়টুকুও হাতে নেই।

“কিরে ব্যাটা! আমায় চিনতে পারছিস না বুঝি? নাকি পাশ কাটানোর ফিকির করছিস?”

আমি তাও কিছু বলতে পারি না। মুখ খুললে যদি ওর মনের মতো উত্তর না দিতে পারি, তাহলে এখনই হয়তো বেমালুম হাত-পা চালিয়ে দেবে। সবে সবে চাকরি জয়েন করেছি, খামোকা লিভ নিতেও চাই না।

“শেষবারের মতো বলছি, মুখ খুলবি না থাপ্পড় খাবি? আমি কিন্তু ব্ল্যাকবেল্ট। সেটা আশা করি মাথায় আছে?” সুবীর আস্তিন গোটানোর ভঙ্গি করে।

বিলক্ষণ! কার ঘাড়ে কটা মাথা আছে যে ভুলে যাব? আমার হঠাৎ মাসখানেক আগের কথা ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে চোখের সামনে ভাসতে লাগল।

অফিস থেকে ফিরছিলাম। একটু তাড়াতাড়িই ফিরছিলাম। ঘড়িতে সম্ভবত ছটা কি সোয়া ছটা হবে। মারাত্মক রকমের ভিড় ছিল বাসে। সিটে কোনোমতে ঠেসেঠুসে এক স্থূলকায় ভদ্রলোকের পাশে একচিলতে জায়গায় চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে বসেছিলাম। সারাদিন এত খাটা-খাটুনি গেসল যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ইচ্ছে বা ক্ষমতা কোনোটাই আমার ছিল না। বসে বসে বেশ একটা ঢুলুনি মতো ভাব আসছিল, আবার হ্যাঁচকা ব্রেক মারলেই সেটা ভেঙে চৌচির হয়ে যাচ্ছিল।

একই বাসের পেটে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, অগুন্তি মানুষ। নামবার গেটটার কাছেই অন্তত কুড়িজন পিলপিল করছে। তারা এমন বিশ্রীভাবে গায়ে গায়ে লেপটে দাঁড়িয়ে আছে যে মাঝেমধ্যেই এ ওর ঘর্মাক্ত ঘাড়ের ওপর উল্টে পড়ছে। তারই ভেতর একটা জোয়ান ছেলে হঠাৎ রেগেমেগে তুমুল চেঁচামেচি জুড়ে দিল।

“আপনি কি সাধারণ কথা বোঝেন না? কখন থেকে বলছি সোজা হয়ে দাঁড়ান…দিলেন তো আমার চশমাটা সাবড়ে?”

যে লোকটাকে ও কথাগুলো শোনাচ্ছিল, সে একেবারে নির্বিকার। যেন ভাজা মাছটি উলটে খেতে জানে না। দিব্যি হাই তুলে মুখ ঘুরিয়ে নিল।

আমার স্টপেজ আসতে বেশি দেরি ছিল না, সেই সঙ্গে খুব ঘুমও পাচ্ছিল। তাই জেগে থাকার জন্য আমি ওইদিকেই কান খাড়া করলাম।

“কি হল কথা কানে গেল না বুঝি?”

“আঃ! ষাঁড়ের মতন চিল্লাবেন না দাদা। অত সমস্যা যখন বাসে উঠবেন না।”

“নিশ্চয়ই। পারতপক্ষে যখন এসব আমি অ্যাভয়েড করারই চেষ্টা করি। এভাবে ভদ্দরলোকে…উফ বাপরে!”

এবারে অবশ্য চেঁচানোর সঙ্গত কারণ আছে। তিনমাথার মোড় থেকে একজন শ্মশ্রুগুম্ফধারী যাত্রী একগাদা বাক্সপ্যাটরা নিয়ে গুঁতোগুঁতি করে উঠে পড়েছিল। কারোর অব্যর্থ কিকে সেগুলো একে একে সোজা ছেলেটার পায়ের ওপর সশব্দে ল্যান্ড করেছে।

“অসভ্য বিটকেল কোথাকার! ল্যাংড়া করে দিলে একেবারে! জানিস আমি ব্ল্যাকবেল্ট?”

“তবে রে ছোকরা” লোকটা বেশ ক্ষেপে গেল, “তুই কি বললি আমায়? বাগে পেলে না…ওফ!”

আশপাশে যারা সব মজা দেখছিল, এবার তাদেরও শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার পালা। লোকটা সম্ভবত হাতাহাতি করবে বলে সামনের হাতল থেকে হাত সরিয়ে নিয়েছিল, কিন্তু বাসটা আচমকা গতি নিতেই সে আর টাল সামলাতে না পেরে শীঘ্রই ধরাশায়ী হল। নিশ্চিত পতন রোধ করতে বোধহয় সে আনাড়ির মতন দুজনের জামা খামচে ধরেছিল, স্বাভাবিকভাবেই তারাও ধপাধপ করে ভূশয্যা গ্রহণ করল। গোলমালের চোটে কন্ডাক্টর নবাগতদের থেকে ভাড়া আদায় করতে বেমালুম ভুলে গেছে।

“অনেকক্ষণ থেকেই চোখ নাচছিল, তখনই বুঝেছি কিছু একটা ঘটবে।”

“কেউ আমায় তোল রে, আমার কোমরের হাড় সরে গেছে…”

“চোপ। যত্তসব নচ্ছারের দল।”

“এই যে ভাই, বলছি আর কজন প্যাসেঞ্জার নেবে? পঞ্চাশ-একশোটা তো নাকি?”

বাসটা ঠিক এই সময় দাঁড়িয়ে পড়ল। সে কি প্রচন্ড ব্রেক! আমার পাশের ব্যক্তিটি ভুঁড়িসুদ্ধ সিট ছেড়ে লাফিয়ে উঠলেন, আর যারা মেঝে থেকে অতি কষ্টে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল তারা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পুরুষ্ট কুমড়োর মতো গড়িয়ে গেল। কাচের জানলাগুলো ঝনঝন করে তাদের অন্তিম দশার পূর্বাভাস জানিয়ে রাখল। খালি কন্ডাক্টরের কোনো হেলদোল হল না, বোঝাই যায় এ লাইনে ওর অভিজ্ঞতা বিস্তর।

ইতিমধ্যে সেই ছেলেটা তার কাৎস্য বিনিন্দিত কন্ঠস্বরে সবেমাত্র বলেছে, “সব্বোনাশ! মা-মানিব্যাগটা গেল কোথায়? আপনারা নিজেদের পকেট দেখুন তো দাদারা।”

অমনি হইহই শুরু হয়ে গেল। আমি ততক্ষণে সিট ছেড়ে দরজার কাছে এগিয়ে গিয়েছি। নয়তো এ ভিড় আমায় বাসের বাইরে যেতে দেবে না।

হঠাৎ থমকে গেলাম। পিঠের ব্যাগে টান পড়ে কেন? ঘাড় ঘোরাতেই দেখি সেই ছেলেটা! এর নাকের ওপর দিয়ে, তার বগলের পাশ দিয়ে আমাকে চেপে ধরেছে। কেমন যেন সন্দেহের চোখে দেখছে।

“অ্যাই! দাঁড়াও দাঁড়াও।”

আমি ভীষণ ঘাবড়ে গেলাম। এ তো মহা মুশকিল, ব্যাটার গায়ে বেশ জোর আছে। ছাড়াতে পারছি না।

“আরে কি হল দাঁড়াতে বলছি তো…ওফফ…”

একটু আগে ছেলেটার যে পায়ে লোহার বাক্স উল্টে পড়েছিল, দুভার্গ্যবশত সেই পা-টাই কে একটা ধ্যাপ করে মাড়িয়ে দিয়েছে।

“আরে অভি না? শোন…”

প্রায় আমার ঘাড়ে হাতুড়ির মতো একখানা রদ্দা এসে জুটল। মনে হল চামড়ার ওপর কেউ করাত চালিয়ে দিয়েছে। বাসটা বোধহয় থামার তাল করছিল, আমি ভিড়ের ফাঁক দিয়ে কাগজের মতো গলে গিয়ে টলতে টলতে বাইরে নেমে পড়লাম। বাসটা চলে যাওয়ার সময় ঘাড়ে হাত বুলোতে বুলোতে দেখলাম, জানলার ফাঁক দিয়ে আমার দিকে চেয়ে রয়েছে সে। আমিও তখন চিনতে পেরেছি তাকে।

আমি আনমনে একবার ঘাড়ে হাত বোলালাম। বললাম, “যা একখানা ঝেড়েছিলিস না, তিনদিন মাথা ঘোরাতে পারিনি।”

সুবীর তেমনই গম্ভীর, “ওটাই তোর প্রাপ্য। তোকে যে পিটিয়ে পাট করে দিইনি এই ঢের। তুই ভেবেছিসটা কি? সেই কবে না বলে পালিয়ে গেলি আর কোনো পাত্তাই নেই?”

আমি লজ্জিত স্বরে বলি, “কি করব বল? সবটাই আমার জন্য। ওদিকে প্রতি মাসের বাড়িভাড়া বাকি পড়ে যাচ্ছে, আর এদিকে পায়ে পায়ে আমার অ্যাডমিশন এগিয়ে আসছে। অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাবার মনের কি অবস্থা হয়েছিল, সে তোকে বলে বোঝাতে পারব না। গরমে নিজের ঘরে পাখা বন্ধ করে রাখত। মা আধপেটা খেয়ে আমার জন্য খাবার তুলে রাখত। খালি মনে হত, আমি একটা ইউজলেস। আমার এখানে থাকার কোনো মানে হয় না। কারোর সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে করত না।

“আর ল্যান্ডলাইনে পাবিই বা কি করে, সে কবে কেটে দেওয়া হয়েছিল। দ্যাখ, চেনাশোনা ছিল গুটিকয়েক, কিন্তু নেহাত কাদায় না পড়লে কেউ তো খোঁজও নেয় না। তাই…”

“আমাকেও তুই তাই ধরে নিয়েছিলিস বুঝি? তোর আস্পদ্দা তো কম নয়। স্কুলে যেদিন আমার ব্যাগে টিফিন থাকত না, সেদিন তুই আমায় তোর পুরো টিফিনটাই দিয়ে দিতিস। মনে আছে? কারণ অন্যকে খুশি দেখলে তুই নিজে বড়ো আনন্দ পেতিস। তোকে তো আমি আজকে দেখছি না, তাই এটা ভালো করেই জানি…” সুবীর একটু থেমে আমার কাঁধে হাত রাখে, “ওই বয়েসে ভাবতাম তোর সাহায্যগুলোকে সুদে-আসলে ফেরত দেব। তা আর পারলাম কই। তুই সেই সুযোগটাও আমায় দিলি না বল?”

সুবীরের চোখ ছলছল করছে। আমি দ্রুত অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নিলাম।

“যাক গে। আমি চলি। কেমন আছিস? অফিস থেকে ফিরছিস নিশ্চয়ই? আমি খামোকা বকবক করিয়ে তোর মাথা খেয়ে নিলাম।”

“তুই কি এখন এখানেই থাকিস? মানে বাড়ি কাছাকাছি তো?”

“তোর তাতে কি প্রয়োজন?”

“প্রয়োজন আছে। ফিরে যখন মাকে তোর কথা বলব, তখনই আমায় বলবে ছেলেটার বাড়ি একদিন নিয়ে চল। তাই ঠিকানাটা চাইছি আর কি।”

সুবীর এবারে চটে গেল, “বটে। আমার মন রাখার জন্য তো তুমি আসবে না কখনও। হতভাগা কোথাকার!”

আমি হেসে ওর পিঠ চাপড়ে দিলাম। বললাম, “যাক। পাল্টাসনি তাহলে। শোন, আমার কার্ডটা রাখ। আগে তুই আমার বাড়ি আয় একদিন। তারপর আমি যাব।”

“আমি পারব না। অনেক কাজ আছে। তাছাড়া আমি যার তার বাড়ি যাই না।”

“হুমম, যা পারিস বলে নে। তারপর দয়া করে ঠান্ডা হ।”

ফুটপাথের ওপর একটা বেঞ্চ ছিল। আমি জোর করে সুবীরকে বসিয়ে দিলাম। বেশ খানিকক্ষণ ধরে গজগজ করল।

“দেখেছিস তো, নিজেদের যত গন্ডগোলের চক্করে কত জরুরি কথা চাপা পড়ে যায়। হ্যাঁ রে, কাকু কাকিমা সবাই ভালো আছেন তো?”

“এমনিতে সব ভালোই। মায়ের আর্থ্রাইটিসের সমস্যাটা মাঝে মাঝে কমবেশি হয়। আর রিটায়ারের পর বাবা ইদানীং গাছপালা নিয়ে খুব ব্যস্ত। প্রত্যেক সপ্তায় তিন-চার রকম গাছ কিনে আনতে হয়। তোর কি খবর?”

“ঠিকঠাকই। মাসছয়েক হল কোর্টে ঢুকেছি। ভাগ্যিস গ্র্যাজুয়েশনের সময় স্টেনোগ্রাফিটা শিখে নিয়েছিলাম। বাবাকে আর অফিসে যেতে দিই না বুঝলি। কিন্তু রবিবারের বাজার করার দখলটা এখনও আমায় নিতে দেয়নি।”

“ভালোই করেছে। তুই কি বুঝিস বাজারের? যাবি আর গিয়ে ঠকে চলে আসবি।”

“মেলা ফ্যাচ ফ্যাচ করিস না। আমি এখন উঠি বুঝলি। মাকে নিয়ে একটু বেরোব। বাকি বোঝাপড়াগুলো আপাতত জমিয়ে রাখ। কাল তো রবিবার। চলে আয় না বাড়িতে।”

“তা আসতে পারি। কিন্তু আসল খবরটাই তো চেপে গেলি।”

আমি ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বললাম, “কি খবর?”

“ন্যাকামো করিস না। সবাইকে নেমতন্ন করে খাওয়ালি। আর আমার বেলায় লবডঙ্কা?”

আমি আকাশ থেকে পড়লাম, “সত্যি বুঝতে পারছি না। কিসের কথা বলছিস। গত দশ বছরে আমাদের বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হয়নি।”

“তাহলে কে যেন আমায় বলছিল তোদের ওখানে সানাই-টানাই বাজছে? না মানে সে হয়তো ভুলও বলে থাকতে পারে।”

আমি সর্বশক্তি দিয়ে চোখ পাকালাম, “তোর বড্ড বাড় বেড়েছে। ক্লাসের ফাস্ট বয়ের সঙ্গে এই ভাষায় কথা বলছিস?”

“ওঃ! কত রাগ! ওরে, তোকে জাস্ট একটু বাজিয়ে দেখলাম। আমাকে তো এতদিন ভুলে বসে আছিস। কোনদিন শুনব তুই ঠাকুরদা হয়ে গিয়েছিস, জীবনের শেষ মুহূর্তে হসপিটালে আমাদের দুজনের দেখা হবে।”

“আমি জ্ঞানত কখনও মারপিট করিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এ প্রতিজ্ঞা আর অটুট থাকবে না।”

“থাম থাম। আমি সাহস না জোগালে টিউশনে কোনোদিন পূবালীর সামনে দাঁড়াতে পারতিস কিনা সন্দেহ। খুব তো বলেছিলিস, সব ঠিকঠাক এগোলে আমাকে কবিরাজি খাওয়াবি। অ্যাদ্দিন ভাবতাম তুই খুব ফাঁকি দিলি।

“এবারে তোমাকে পেয়েছি বাগে। তা এখন তোদের মধ্যে যোগাযোগ আছে? না সেখানেও ধেড়িয়েছিস?”

“দ্যাখ, পূবালী যখন আমাকে ভরসা করে আমার হাত ছাড়েনি, আমিও ওকে মাঝরাস্তায় ছেড়ে দিতে পারি না।”

“হুমম, পথে এসো চাঁদু। আমার খুব শখ ছিল বুঝলি, নিজের বিয়ের আগে অন্তত একজন বন্ধুর বিয়েতে নেমতন্ন পাব। একমাত্র তুই-ই বোধহয় আমার ইচ্ছেটা বাঁচিয়ে রেখেছিস।”

আমি হাসলাম। মনটা আবার পিছিয়ে যেতে চাইল স্কুলজীবনে। সরস্বতী পুজো। ফেব্রুয়ারি মাসের মরসুম। বাচ্চাদের লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। আর আমাদের অজস্র ভালোলাগার সূত্রপাত।

ক্রমশ…

আগের পর্বগুলোর লিঙ্কঃ

১ম পর্বঃঅলিগলি

২য় পর্বঃঅলিগলি

৩য় পর্বঃঅলিগলি

Facebook Comments Box
Abhik Chandra

A creative writer, constant learner, bookworm. Passionate about my work.

Recent Posts

Kolkata to Witness B Praak’s Mesmerizing Performance at ‘Kolkata Odyssey’ on October 20th

The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…

2 months ago

Celebrating Friendship and Togetherness with Pujo Pujo Gondho

In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…

2 months ago

Frustration Turned To Calmness, Thanks To These Websites

The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…

3 months ago

SVF Music Unveils April Edition of “Banglar Gaan Indies”

Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…

8 months ago

Mimi Chakraborty and Nabila to Star Alongside Shakib Khan in ‘Toofan’

Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…

9 months ago

Why Does a Rich Chicago Law Firm Keep Suing Indian Tribes?

This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…

1 year ago