ঠাকুরদার প্রিয় রেডিওটার সঙ্গে সঙ্গে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের তেজি কণ্ঠস্বর অতীত হয়েছে বহুদিন। তারপর টিভি আসার পর থেকে দেবশ্রী রায়, রচনা ব্যানার্জি থেকে শুরু করে হালের কোয়েল মল্লিক বা শুভশ্রী, একে একে দুর্গা বদলে যাওয়ার সাথে সাথে মহালয়ার প্রতি বাঙালির উৎসাহ কমেছে সমানুপাতে। ভোরবেলায় ওঠার ঝক্কি কে পোহাবে ফালতু! কিন্তু সেই এক থেকে গেছে মহিষাসুর ভদ্রলোক। কেমন যেন একটা বঞ্চিত গোবিন্দদাস মার্কা ক্যারেক্টার। তবে ছোটবেলায় আমার হেব্বি লাগত এই অসুরকে। বিন্দু বিন্দু রক্তের ফোঁটা পড়ছে আর প্রতিটা থেকে একেবারে ব্র্যান্ড নিউ মহিষাসুর। আর হাসি! আমি নিশ্চিত যে গব্বর সিং নিশ্চয়ই এককালে মহিষাসুরের থেকে হাসির ট্রেনিং নিত। কিন্তু আগেই বলেছি, এই মহিষাসুর বড্ড বেশি কিউট, আর তার এই কিউটতার সুযোগ নিয়ে ব্রহ্মা টু ইন্দ্র যে যেভাবে পেরেছে বাঁশ দিয়ে গেছে। তো মহিষাসুরের প্রতি এই অন্যায় এবং অবিচারের বিরুদ্ধেই এই লেখার সূত্রপাত।
এই ইতিহাস কোথাও লিপিবদ্ধ নেই, তবে লোকাচারে-গানে-উৎসবে এর কথা শোনা যায়। অনেক কাল আগে নাকি এই দেশের নাম ছিল “বোঙ্গাদিশম”। আর তার সম্রাট ছিলেন বোঙ্গাসুর বা মহিষাসুর। তো এই রাজার বীরবিক্রম ছড়িয়ে পড়েছিল চারিদিকে। স্বাভাবিকভাবেই আর্যরা (পড়ুন দেবতারা) এই মহাবিক্রমশালী রাজার কাছে পরাজিত হলেন। কিন্তু এই আর্যরা ছিল মহা চোট্টা পাবলিক। চালাকি করে স্বর্গের অপ্সরা মেনকাকে দুর্গা সাজিয়ে মহিষাসুরের কাছে পাঠাল তারা। মেনকা শরীরী চালে, প্রেমের ছলে হত্যা করলেন মহিষাসুরকে। আর্যরা ছিল চরমভাবে পুরুষতান্ত্রিক এবং ইন্দ্রের রাজপ্রাসাদে ছিল বিশাল এক গণিকালয়। সুতরাং এই যুক্তি মেনে নিলে দাঁড়ায়, যে দুর্গাকে আমরা মাতৃরুপে পূজা করি, তিনি ছিলেন দেবতাদের কাছে সেক্স অবজেক্ট-গণিকা। তো মহিষাসুরের মৃত্যুর পর দেবতারা দখল নেয় দেশের। তখন বোঙ্গাদিশমের সকলেই সিন্ধু পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ছেড়ে দক্ষিণ ভারত ও বঙ্গদেশের দিকে পালাতে শুরু করে। মাত্রিতান্ত্রিক সমাজের বাসিন্দা হিসেবে ওদের ধারণা ছিল যে আর্যরা নারীর ওপর হাত তুলবে না, তাই পুরুষেরাও নারীর ছদ্মবেশে পালায়। কিন্তু পালানোর সময় ধরা পরে বহু আদিবাসী নারীকে লাঞ্ছিত হতে হয়। অনেকেরই ঠাঁই হয় স্বর্গের হারেমগুলোতে, অবশ্যই যৌনদাসী হিসেবে।
এই ঘটনার শোকে, আজও অসুর সম্প্রদায়ের মানুষেরা নারীর পোশাক পরে দাশাই নাচের মাধ্যমে শোকপালন করেন দুর্গাপূজার সময়ে। হ্যাঁ আমরা যখন দেবীর আরাধনায় মেতে উঠি, ঠিক তখনই খোদ পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার খেরওয়াল জনজাতির লোকেরা পালন করে “মহিষাসুর শহিদ দিবস”। হ্যাঁ কাঠি নাচ, দাশাই নাচের মাধ্যমে শোক পালন করেন আদিবাসীরা। আর পুজোর মাসটাকে ওরা বলে দাশাই মাস বা দুঃখের মাস।
মহালয়া নামক যে অ্যাকশন-ড্রামা ভরপুর হিট সিনেমা আমাদের দেখানো হয়, তার বেশ কিছুটা জুড়েই মিথ্যার আশ্রয়। মহিষাসুর কঠোর তপস্যা করে ব্রহ্মার কাছে অজেয় হওয়ার বর চাইলেন। ব্রহ্মা বর দিলেন, কোন পুরুষ মহিষাসুরকে বধ করতে পারবেন না। মহিষাসুর তো বিশাল খুশি, কিন্তু ব্রহ্মা কিন্তু কিপারের দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে বলটা ঠিক বাউন্ডারির দিকে গলিয়ে দিয়েছেন, অসুর টেরটি পায়নি। এবার দুর্গাকে সব দেবতার শক্তি দিয়ে তৈরি করে লেলিয়ে দেওয়া হল। অন্যদিকে মহিষাসুর তো “হা হা হা হা হা… এক নারী আমায় বধ করবে!” কিন্তু বিষয়টি এতটা সহজ ছিলনা। তখনকার দিনে যুদ্ধের কিছু নিয়ম ছিল। যেমন কোন নারী বা শিশুকে আক্রমণ করা যাবে না, নিরস্ত্রের ওপর অস্ত্র তোলা বারণ, সন্ধ্যের পর যুদ্ধে বিরতি ইত্যাদি। কিন্তু এই দেবতারা ছিল মহা ধড়িবাজ। মহাভারতে অর্জুনের ভীষ্মবধ, রামায়ণে লক্ষণের মেঘনাদবধ সবই কিন্তু চূড়ান্ত নিয়মবিরুদ্ধ এবং প্রকৃত বীরের ধর্মবিরুদ্ধও। সুতরাং মহিষাসুরকে বধ করতে পাঠানো হল এক নারীকে আর মহিষাসুরও নারী দেখে অস্ত্র তুলল না, ব্যাস অক্কা।
পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের কিছু অংশে এবং কর্ণাটকের মহিসুরে কিন্তু আজও মহিষাসুরের বংশধররা বেঁচে আছেন। অনেকেই হয়তো জানেন না, ভারতবর্ষের ৪০ টি শিডিউল ট্রাইব গোষ্ঠীর মধ্যে একটা হল ‘অসুর’। এই আদিবাসী (পড়ুন অনার্য) সম্প্রদায়ের মানুষেরা মহিষাসুরকে নিজের সর্বশ্রেষ্ঠ পূর্বপুরুষ মনে করেন এবং তার ন্যক্কারজনকভাবে খুন করার ইতিহাসকে স্মরণে রেখে প্রতিবছর “শহিদ দিবস” পালন করেন। মনে রাখতে হবে, এটা কিন্তু অসুর পূজা নয়। এটা প্রকৃত অর্থেই শহিদ দিবস। কারণ অসুরেরা মহিষাসুরকে কোন কাল্পনিক চরিত্র মনে করেন না। তাই পূজার মধ্যেই যে অলৌকিক ব্যাপারটি রয়েছে, তাতে বিশ্বাস নেই অসুরদের। অসুর সম্প্রদায় বহুদিন ধরেই একটা দাবি করে আসছে, মহিষাসুর তাদের বীর পূর্বপুরুষ, এক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন তিনি। এক তথাকথিত দেবীর পদতলে তার স্থান হতে পারে না। অসুর শব্দের অর্থ, যার সুর নেই। অর্থাৎ যারা ভগবানে বিশ্বাস করে না। সুতরাং আজকের আদিবাসী অসুর সমাজ কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করতে চান না। কিন্তু তারা এটাও চান না যে তাদের মহান বীর পূর্বপুরুষ মহিষাসুর কারও পায়ের তলায় থাকুক। দুর্গার মূর্তিতে মহিষাসুরের খয়েরি, লাল, হলুদ স্পা করা চুল, বা গায়ে জোকারের মত সবুজ রঙ এক মহান বীরের অপমান। নিজের আরাধ্য দেবীকে উপাসনা করাটা অধিকার কিন্তু মহিষাসুরের মত আদিবাসীকে পায়ের তলায় রেখে অপমান করাটা কারও অধিকার হতে পারে না। সিধু, কানহু-র মত যুগে যুগে আদিবাসীরা সংখ্যাগরিষ্ঠের শোষণ এবং শাসনের ভুক্তভুগি। কেউ শোনেনা আদিবাসীদের অধিকারের আর্তনাদ, ‘কেউ কথা রাখেনা, কেউ কথা রাখেনি’। তবে চেরিয়ান মাহাত বা তিলকা হেমব্রমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বীরের প্রকৃত সম্মানের জন্য, মহিষাসুরের জন্য। জয় হবে একদিন। জয় হবে নিশ্চয়।
বিশেষ ধন্যবাদ- আগামীকাল
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
In a spectacular celebration coinciding with the birthday of the iconic actor Prosenjit Chatterjee, the…
হিমেশ রেশামিয়ার পর সুরাশা মেলোডিজ থেকে অনুষ্কা পাত্রর নতুন গান পুজো আসছে মানেই বাঙালির নতুন…
The highly awaited trailer of grand Puja release, "Dawshom Awbotaar", produced by Jio Studios and…
This website uses cookies.