আজ পঁচিশে বৈশাখ, রবি ঠাকুরের জন্মদিন। সকাল সাতটা বাজে। রিয়া স্নান করে রেডি।

রবীন্দ্রজয়ন্তীর কালচারাল প্রোগ্রামে আবৃত্তি করবে সে। সকাল থেকেই তাই বেশ ফুরফুরে মেজাজে সে।

আজ যে তার প্রেমিক, শুধু তার বললে ভুল বলা হবে বাঙালি প্রায় সব মেয়ের মনেই গোপনে বিরাজ করেন রবি ঠাকুর, তাঁর জন্মদিন।

সকাল থেকেই আজ যেন অন‍্যরকম আবহাওয়া। বাতাসে ভেসে আসছে রাবীন্দ্রিক সুর, ফুলের সুবাসে মাতোয়ারা সকালবেলা।

আজ রিয়াকে একটু ব‍্যস্তই দেখাচ্ছে, তাইতো শান্তনুর ফোনটা রিসিভ করারও সময় হয়নি তার।

রিয়া ও শান্তনু দুবছর ধরে রিলেশনশিপে আছে। খুনসুটি, ঝগড়া, আদুরে আলাপ, রাগ অভিমান নিয়ে দিব‍্যি চলছে তাদের।

রিয়ার সাথে শান্তনুর আলাপ হয় কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে। শান্তনুর তখন ফাইনাল ইয়ার।

পড়াশোনায় বরাবরই ভালো শান্তনু। তাই কলেজ শেষ হওয়ার বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ব‍্যাঙ্কে চাকরি পেয়ে সে এখন অর্ধেক স‍্যাটেলড্ ।

রিয়া এবার ফাইনাল এক্সাম দিয়েছে। কলেজ শেষ করে তার ইচ্ছে একটু অন‍্য গোছের।

ছোটোবেলা থেকেই খুব ভালো গান, আবৃত্তি ও সঞ্চালনা করে রিয়া। তার ইচ্ছে রয়েছে আবৃত্তি নিয়ে পরবর্তী কালে কিছু করা।

প‍্যশনকে প্রফেশন করতে চায় সে। অন‍্য বাঙালি মেয়ের মতোই রিয়ারও রবি ঠাকুর অন্ত প্রাণ। রবীন্দ্রনাথ যেন তার শিরায় শিরায় রয়েছে।

শান্তনু রিয়ার পুরো উল্টো, বাঙালি কালচার বোঝে না, সাহিত‍্যে কোনও ঝোঁক নেই।

নাম চেনার মতো শরৎ, রবি এনাদের চেনে। আর রিয়ার ব‍্যাপারে খুব পজেসিভ সে।

তাই রিয়া আর ওর মাঝে রবি ঠাকুর এলেও সে ছেড়ে কথা বলে না। তারপর শুরু হয় দুজনের ঝগড়াঝাটির রোজনামচা।

একদিকে থাকে শান্তনুর পাশ্চাত্যের প্রেম, অন‍্যদিকে থাকে রিয়ার রবি ঠাকুরের ভালোবাসা।

আজ সকাল থেকে কয়েকবার ফোন করেও কোনো উত্তর না পাওয়াতে বিরক্তির সঙ্গে রিয়াকে টেক্সট করলো সে ” হ‍্যাপি বার্থডে রবি দাদু। তুই দাদুকে নিয়েই থাক, আমার সঙ্গে তোর আর কোনো সম্পর্ক নেই” ।

আর ম‍্যাসেজ দেখার সময় হয়নি রিয়ার। ঠিক পৌনে আটটায় অটোয় করে সে পৌঁছল প্রোগ্রামে।

রবীন্দ্র সঙ্গীতের মাহাত্ম‍্যে তখন ভরে উঠেছে প্রতিটা প্রান্ত। রিয়ার আবৃত্তি শেষ হল তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে।

প্রোগ্রাম শেষে অটোস্ট‍্যান্ডে দাঁড়িয়ে সে। মোবাইল খুলতেই দেখলো শান্তনুর ম‍্যাসেজ। ম‍্যাসেজ দেখে হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম তার।

শান্তনুকে রিপ্লাইয়ে সে লিখলো
“অনেক ধন‍্যবাদ। তুমি মনে রেখেছো আজ রবি ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী! এটাই অনেক বড়ো পাওয়া আমার কাছে। আর এতটা পজেসিভ কেন। রবি ঠাকুরকে ভয় পাও খুব। এবার ভাবছি উনি যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে কি হতো তোমার। তোমায় ছেড়ে ওনার সঙ্গেই পালিয়ে যেতাম। এবার বুঝলে তো রবীন্দ্রনাথ কে? বাঙালির ইমোশন, প্রতিটা বাঙালি মেয়ের সুপ্ত ভালোবাসা। তিনিই বাঙালির আদর্শ প্রেমিক।”

Facebook Comments Box

By Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *