বডি সেমিং এখকার সমাজে একটি অভিশাপ ও একপ্রকার সামাজিক ব্যাধি। আমরাও সমানভাবে কোথাও না কোথাও বডি সেমিংকে তারন্বিত করছি। একটা ছোটো মজাই যে সমাজে বডি সেমিংকে প্রশ্রয় দেয় সেটা বলা খুব একটা ভুল হবে না। আমাদের নিজেদের এটা বোঝা উচিৎ যে কোনটা মজা আর কোনটা অপমান। আমরা মজার ছলে হয়তো আমাদের কোনো বন্ধু বা কাউকে তার শরীর নিয়ে মজা করে বসি, এবং ভাবি যে আশে পাশের কিছু নোংরা মানসিকতা মানুষ মজা নিচ্ছে বলে এটা মজার পর্যায়ে পড়ে কিন্তু আদতে যে এটা মটেও মজার মধ্যে পড়ে না, এটা আমাদের বোঝা উচিৎ।  আমাদের কোনো বন্ধু বা আত্মীয় যদি কেউ একটু বেশি মোটা হয়, একটু বেশি রোগা হয়, একটু বেশি লম্বা হয়, একটু বেশি ছোটো উচ্চতার হয়, কেউ যদি একটু বেশি ফর্সা হয়, কেউ যদি একটু কালো হয় তাহলে তো হয়েই গেলো, আমরা পেয়ে যায় রসদ। ছোটোর থেকেই তাদের নামকরণ হয়ে যায় তাদের শরীর দেখে, এটা ভুলে যে, কার শরীর কেমন হবে এটা আমাদের কারো উপরই নেয়। সৃষ্টিকর্তার সমস্ত সৃষ্টিকেই আমাদের সম্মান জানানো দরকার। কারো শরীর নিয়ে মজা করা মানেই যে সৃষ্টি কর্তার সৃষ্টিকেই আমরা অপমান করছি এটা ভুলে যায় সবাই।

এখনকার সমাজে আর একটা বড়ো অভিশাপ হলো ডিপ্রেশন। এই বডি সেমিং জন্যও যে কতো শতো মানুষ রোজ ডিপ্রেশনে নিমজ্জিত হচ্ছে তা হিসাব আমাদের জানা নেই। তার ফলে অনেকেই আত্ম হত্যা করছে আবার অনেকে সমাজের এই তীব্র বিদ্রুপের সাথে লড়তে গিয়ে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যেমন ধরুন যাদের গায়ের রং কালো তারা তাদের উপর বিভিন্ন রকমের ক্রিম প্রয়োগ করছে যা অনেক সময় তাদের পক্ষে হানিকারক। আবার যারা খুব মোটা বা রোগা তারা তাদের শরীরে বিভিন্ন রকম অসুধ বা অনেক সময় দেখা যাচ্ছে স্টেরয়েডের মতো ক্ষতিকারক ঔসধও প্রয়োগ করতে পিছু পা হচ্ছে না। আসলেই কি এই সবের কোনো প্রয়োজন আছে?? শরীরটাই কি সব?? খুব সুন্দর শরীরের অধিকারী একজনের মানসিকতা নোংরা হতে পারে। আবার তথাকথিত ‘কুৎসিত’ শরীরের অধিকারী একজনের মানসিকতা উচ্চতর হতে পারে। যদি সত্যিই কোনো কিছু কে প্রশ্রয় দেওয়া দরকার তো সেটা মানবিকতা, মানসিকতা ও প্রতিভা হওয়া উচিৎ। আমরা যদি আমাদের আশে পাশে খুঁজে দেখি তাহলে এমন বহু নিদর্শন পাবো যারা বডি সেমিং এর শিকার এবং আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা বডি সেমিং করে যাচ্ছি আমাদের আশে পাশের মানুষ গুলো কে। তাদের দম বন্ধ করে দিচ্ছি। এটাই কি সমাজের মানদন্ড হওয়া দরকার! যেখানে মানুষের শরীর দেখে তার বিচার করা হয়।

মানুষ হিসেবে কি সত্যি আমাদের গর্ব করা যেতে পারে যদি এইগুলো রোজ রোজ এই ভাবেই বেড়ে চলে। কেনো একজনের শরীরই তার পরিচয় হবে?
প্রতিবাদ তো হয়েছে অনেক,এখনও হয় কিন্তু বডি সেমিং পুরো পুরি বন্ধ হবে কবে?? যে বডি সেমিং-এর শিকার তাকে একবার বলতে পারি তো ‘আপনি কেমন দেখতে সেটা না প্রথম কথা, না শেষ কথা। আপনি মানুষ হিসেবে কেমন এটাই আসল কথা’। আমরা সবাই মানুষ, আমাদের সম্মান জানানো উচিৎ সৃষ্টি কর্তার সৃষ্টি কে। আমাদের উচিৎ বচ্চাদের এই শিক্ষা দেওয়া। তবেই আগামী দিনে আমরা এই অভিসাপ থেকে মুক্ত হবো। বদল চাই বদল চাই বলে লাভ নেই, বদলটা আমার থেকেই শুরু হোক। চলুন করি অঙ্গিকার যে ‘আমি কোনোদিন বডি সেমিং করবো না, আর আমার সামনে বডি সেমিং হলে প্রতিবাদ করবো।’

Facebook Comments Box

By Rohit Paramanik

লিখতে আমি ভালোবািস, সাহিত্যের সাথে প্রেম করি। আপনার মনের অজানা কথা, কলম দিয়ে উজাড় করি। যদি জানতে চান আরো, আমার সৃষ্টিগুলো দেখুন, মনে রাখতে আমার নাম ডাইরির পাতায়, 'রোহিত' বলে লিখে রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *