আমার ভালোবাসা কি ভুল?

এই লেখাটা যখন লিখছি তখন প্রায় অন্ধকার নেমে এসেছে। সূর্যের অস্তগামী লাল আভা একটু করে কমে আসছে দিগন্ত রেখা জুড়ে। পাখিরাও চলে যাচ্ছে যে যার বাড়িতে। এমনিতে আজ কাল রাস্তা ভীষণ ফাঁকা আর তার ওপর সন্ধ্যে নামলে স্ট্রিট ল্যাম্প গুলো অন্ধকারকে গিলে খাওয়ার চেষ্টা করে। আমি প্রতিদিন এই সময়টা ছাদে উঠি।

চেয়ারে বসে ছবি আঁকি, লেখা লিখি করি গান শুনি। দিনের শুরু থেকে শেষ অবধি বই পড়ে আর ওপরের বলা কাজ গুলো করেই কেটে যায় সাথে খাওয়া আর ঘুম তো আছেই। মাঝে মধ্যে খুব বিরক্ত লাগে এই একঘেয়ে বিষয়টাতে তাই ফেসবুক স্ক্রল করি। মাঝে মধ্যে সেটাকে উড়িয়ে দি। কিছুই ভালো লাগে না। এই বাড়িতে আমি একাই থাকি।

আগে নিচের তলা টা ভাড়া দেওয়া ছিল আগের মাসে বাড়ি করে তারা চলে গেছে। তারপর থেকে আমি আর ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে খুব বেশি প্রয়োজন মনে করিনি।গোটা বাড়িয়ে বই পত্র নিয়ে কিছুটা একার রাজ্যে বাস করি। আসলে পরিবেশটা এরকম ছিল না। কিন্তু কি জানেন তো সময়!! সেটা যে বেশ ভয়ানক একটা জিনিস কখন ভালো আর কখন খারাপ ঠিক নেই। যাই হোক ৮-৯ মাস আগে একদিন হলো কি আমি আমার বয়ফ্রেন্ড অভি কে নেমন্তন্ন করেছিলাম।

আমি বাড়িতে একা থাকি, মাঝে মাঝে ও আসে আমাকে আদর করে। আমরা ভালো সময় কাটাই। তো এরকম একটা দিনে আমি ওকে বললাম আসার কথা। প্রথমে আসতে চাইছিল না,কদিন যেন ওর নারী সঙ্গ বেড়েছে ও বোঝে না যে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি।অনেক জোড় করে বলতে তবে এলো। আমি সারাদিন ধরে ওর জন্য রান্না করেছিলাম। ও পোলাও খুব ভালোবাসে সকাল থেকে রান্না করেছিলাম। ও এলো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। আমাকে এক ঝটকা দিয়ে সরিয়ে ফেলে বললো
– ” বলো কেন ডেকেছ আমাকে?”
– “মানে? আমি কি তোমাকে ডাকতে পারি না?”
– “তুমি তো জানো আমি এখন কতটা ব্যাস্ত? সব সময় এভাবে ডাকলে আসা যায়?”
– “আজকাল তুমি বড্ড রেগে যাও আমার ওপর, আমাকে আর আগের মত করে আদর করো না কেন?”
– “প্লিজ সব কিছু সব সময় ভালো লাগে না!”
– “দেখো তুমি এরকম কেন করছো? আগে তো তুমি এরকম ছিলে না?”
– ” কি জন্য ডেকেছ বলবে কি ?”
– “তোমার জন্য রান্না করেছি , শুধু তুমি আসবে বলে ঘর সাজালাম! আমাকে আদর করবে না?”
– “আজকে মুড নেই”
– “মুড নেই নাকি অন্য মেয়ের সাথে শুয়ে আমার শরীরটাকে আর ভালো লাগছে না?”
– ” এই শোনো একদম উল্টোপাল্টা কথা বলবে না বুঝেছ।”
– ” ভুলটা কি বললাম ?”
– “আমার আসাই ভুল হয়েছে”
– “আমাকে তুমি এভাবে বলতে পারলে বলো ?
– “কিভাবে বললে খুশি হতে? ওই তো শরীর তার আবার কথা?”
– “অভি, আমার শরীরে সব টুকু তো তুমি চেন জানো বলো!! আমার সাথে শুয়ে কি কোনো মেয়ের থেকে কম মনে হয়?
আমার পেটে হাত দাও তুমি দেখো? কিগো বলো ? আজ তুমি এভাবে বলছ ?”
– ” গো টু হেল ব্লাডি ,,,,,,,”
– “আমি তোমাকে যেতে দেব না”
– “পথ ছার , সরে যা সামনে থেকে সরে যা”
– না , আমি কিছুতেই যেতে দেব না তোমাকে। আমার কাছে সব ভিডিও আছে। আমি সোশাল মিডিয়া তে দিয়ে দেবো।
– কি বললি তুই? ব্ল্যাকমেল করছিস ?………..

তারপরে ও আমাকে দেওয়ালে আচড়ে মাথা ঠুকে দিল।আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলাম কতক্ষন জানি না। ও আমার ফোন থেকে সমস্ত কল , ম্যাসেজ, চ্যাট ভিডিও সব ডিলিট করে দিয়েছিল। আর তার পর থেকে ওর সাথে আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম জানেন ওর সাথে যোগাযোগ করার। পারিনি। আমি অক্সফোর্ড বুক পাবলিশারদের প্রুফ রিডার কাজ করি এখন । বাড়ি থেকেই করি। আমার শারীরিক গঠন তো আর আমার হাতে নেই বলুন। কি করবো? সমাজ আমাকে ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দিয়ে যায়। আমি চাইলেও এটা কি পরিবর্তন হয়? হয় না।

তাই অলিখিত ভাবে আমার সমাজে কোনো স্থান নেই। আমি কাউকে ভালোবাসতে পারি না। আমি আর পাঁচ জনের মতো নিজের শরীরে অন্যকে স্থান দেব এটা ভাবতে আতঙ্ক বোধ করি। আমার কিছু কলিগ আগে বলতো “ওহ ওই ছক্কা টা না? ছেলে না মেয়ে শালা বোঝা যায় না ” আমি নিজেকে নিয়ে থাকতে এখন ভালো আছি। হ্যা সারাদিনে গুটিকয়েক ফোন আসে সেগুলো রুটিন কল তার বাইরে আমাকে আর কারো দরকার পরে না। আমিও নিজেকে গুটিয়ে রাখি। এটাই আমার গল্প ছিল। সূর্য টা অস্ত চলে গেছে , অন্ধকার টাও নেমে গেছে অনেক্ষন বাইরে এবং আমার ভিতরে।

দেবজীত

Facebook Comments Box

By Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *