LaughaLaughi

You Create, We Nurture

Special Story

আকাশ-রাণী

আকাশ-রাণী

“আকাশ-রাণী” নামটা শুনে মনে হবে কোনো রূপকথার গল্পকথা। কিন্তু বাস্তবের মাটির তিন কন্যেও পাড়ি দিয়েছে আকাশ-পথে। মোহনা সিং, ভাবনা কান্থ, অভনী চতুর্বেদী এই তিন কন্যেও আকাশ ছুঁয়ে মেঘের রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে রোজ। আকাশ পথে মেয়েরা শুধু সেবিকা নয় চালিকাও হতে পারে তাই প্রমাণ করেছে এই তিন কন্যে। MiG-21-এর Bisan jet-এ চড়ে তিন কন্যে প্রথম পাড়ি দিয়েছে আকাশ পথে। এরপর যুদ্ধ বিমানের চালিকাশক্তি হয়ে ইতিহাসে নিজেদের মুকুটে পালক যোগ করতে চলেছেন। “আমরা করবো জয়” বলে আকাশ পথে পাড়ি দিয়েছে তিন কন্যে।

গত জুলাই মাসে আকাশ পথে পাড়ি দিয়ে ইতিহাসে নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখেছিল তিন জন। তবে এই দুঃসাহসিক কাজে যাওয়ার যাত্রাপথ মোটেই সহজ ছিল না তিন জনের। প্রশিক্ষণ যতই কঠিন হোক না কেন, তিন জনের সদা হাস্যময় মুখই তাদের নিয়ে গেছে সফলতার শিখরে। আমাদের দেশের মন্ত্রী থেকে তাদের সিনিয়র অফিসার সকলেই মুগ্ধ তিন কন্যের কাজে। মেঘের দেশে যুদ্ধ বিমান নিয়ে তিন কন্যে উপস্থিত হচ্ছে যুদ্ধ ক্ষেত্রে। তারাই কাণ্ডারি। ঘরে বাইরে সব ক্ষেত্রেই মেয়েরা যে আজ সমান ভাবেই এগিয়ে তার বর্তমানের অন্যতম দলিল হল এই তিন কন্যে।

বিহারের ভাবনা ছোটবেলা থেকেই মেধাবীর সাথে সাথে সাহসীও ছিলেন। বিহারে টুয়েলভ পাশ করার পর সে যেমন রাজস্থানের কোটায় জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রিপারেশন নিচ্ছিলেন তার সাথেই ইন্ডিয়ান ডিফেন্স একাডেমির প্রস্তুতিও চলছিল।

কিন্তু সে সময় মেয়েদের ডিফেন্সে নেওয়া হত না। তাই স্বপ্ন অধরা থেকে গিয়েছিল। কিন্তু বাবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় সেও বাবার পেশা বেছে নিয়েছিল। ব্যাঙ্গালোরে মেডিকেল ইলেকট্রনিকস নিয়ে স্নাতক পাশ করেন। তারপর আইটি ফার্মে চাকরীর সাথে সাথেই তার কাছে তার স্বপ্নের পথ খুলে যায়। তার বাবা তেজ নারায়ন কান্থ মেয়ের সাফল্যে খুবই গর্বিত। তিনি বললেন,”মেয়ের ছোট থেকেই বিমান চালানোর শখ ছিল। কিন্তু যুদ্ধ বিমানের কথা ভাবতেই পারেননি কারণ আগে সেখানে মেয়েদের সুযোগ ছিল না”। স্কুলে পড়াকালীন খো-খো কিংবা ব্যাডমিন্টন খেলা তার খুব পছন্দের ছিল।

ভাবনা র মা রাধা কান্থ জানিয়েছেন যে তার মেয়ের কিন্তু ছবি আঁকা কিংবা সাঁতার অথবা সিনেমা দেখতে খুবই পছন্দ করেন। ভাবনা শেষ বার বাড়িতে এসেও সপরিবারে “বাজিরাও মাস্তানি” দেখে এসেছেন। ভাবনার ক্লাস টেনে ৯০% নম্বর ছিল। কিন্তু বাড়ি থেকে কখনোই তাকে কোনো চাপ দেওয়া হয়নি।বরং বাড়ির সমর্থন তাকে এই জায়গায় যেতে সাহায্য করেছেন।

মধ্যপ্রদেশের একটা ছোট শহর ডিওল্যান্ড থেকেই তার স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন। পড়াশোনায় মেধাবী অভনী রাজস্থানের বনস্থলী ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার-এ স্নাতকোত্তর পাশ করেন। এরপর হায়দ্রাবাদের ফ্লাইং ক্লাবে যোগ দেন।

হায়দ্রাবাদের এয়ারফোর্স একাডেমী থেকে প্রশিক্ষণ নেন। তারপর মাত্র চব্বিশ বছর বয়সেই এয়ারফোর্সে যোগদান করেন। কর্নাটক থেকে তিন লেভেল কম্পলিট করলে প্রথম ভারতীয় কন্যা হিসেবে একাই যুদ্ধবিমান চালাবেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি একা যুদ্ধ বিমান চালান। তার অনুপ্রেরণা ছিল তার দাদা যিনি কিনা একজন আর্মি অফিসার। তার বাবা দিনকার চতুর্বেদী একজন ইঞ্জিনিয়ার মধ্যপ্রদেশের ওয়াটার রিসোর্স ডিপার্টমেন্ট এর। তার মা একজন সাধারণ হোম মেকার। তিনি আমাদের দেশের নাম সেই তালিকায় যোগ করেছেন যেসব দেশে মহিলারা আকাশে স্বমহিমায় রাজত্ব করেছেন যেমনি ব্রিটেন, ইসরায়েল, ইউ এস ইত্যাদি দেশের সাথে। পরের বছর যদি তিনি কর্ণাটক এর বিদার থেকে স্টেজ থ্রি সম্পূর্ণ করতে পারেন। তবে তিনি সুখই অথবা তেজাসের মতোন যুদ্ধ বিমান চালাতে পারবেন।
যুদ্ধ বিমান চালানো ছাড়াও দাবা খেলা, টেবিল টেনিস খেলা তিনি অত্যন্ত পছন্দ করেন। তিনি ছবি আঁকাতেও বিশেষ ভাবে দক্ষ।

মোহনা সিং-এর রাজস্থানের গ্রামে বেড়ে ওঠা। তারপর ইলেকট্রনিকসে স্নাতক হয়ে ওঠা ৮৩% নম্বর নিয়ে।

হঠাৎ করেই এয়ারফোর্সে যোগ দেওয়া। মোহনা সিং এর বাবা একজন আই.এ.এফ অফিসার এবং তার দাদু ১৯৪৮ সালে ইন্দো-পাক যুদ্ধ-এর জন্য বীর চক্র সম্মানে ভূষিত হন। তার বাবার সামনেই মোহনা সম্মানিত হন। কলেজ ও তাদের ছাত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ এবং কলেজ জানিয়েছে মোহনা ই তাদের কল্পনা চাওলা।

 

এরপর এই তিন কন্যার আকাশ পথে যাত্রা শুরু। যে যাত্রা সারা দেশবাসীর গর্বের কারণ।

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Editorial Team of LaughaLaughi