ভালোবাসি কথাটা অনেক সময় মুখ ফুটে বলা হয়ে ওঠে না। ভালো বাসা এমন একটা অনুভূতি যেটা কখনো কোনো বাঁধার কাছে হেরে যায় না। ভালোবাসায় ভরা গল্প তবু ভালোবাসির প্রথম পর্ব আশা করি সবার ভালো লাগবে।

(১)

এই রিনি ওঠ!তোর অফিস এর দেরি হয়ে যাবে এবার।

আর একটু ঘুমোতে দে না নীল…

না রিনি , আর একটুও না। ওঠ এবার, অনেক দেরী হয়ে গেছে। আমি সেই কখন উঠেছি, রেওয়াজ করে, ঘর পরিষ্কার করে, তোর জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এলাম। আর তুই এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাবি। ওঠ সোনা।

আগে উঠেছিস তো কি হয়েছে নীল? তুই তো আর অফিস যাবি না, সারাদিন তো বাড়িতেই থাকবি, পরে রেস্ট নিতে পারবি। কথাগুলো একটানা বলে যায় রিনি। কথা বলা শেষ হলে সে নীলের মুখের দিকে তাকায়, নীলের মুখটা কেমন যেনো একটা হয়ে গেছে।

নীল চায়ের কাপটা রেখে ওখান থেকে চলে যায়। রিনি ডাকে নীল শোন আমি ওভাবে বলতে চাইনি। প্লিজ আমাকে ভুল বুঝিস না।নীল কিছু বলে না।

এরপর রিনি উঠে, ফ্রেশ হয়ে অফিস এর জন্য রেডি হয়ে যখন ঘরের বাইরে আসে তখন দেখে যে ডাইনিং টেবিলে ওর জন্য টিফিন, জল সব রেডি করা আছে। আর ওর ব্রেকফাস্টও ঢাকা দেওয়া আছে।কিন্তু নীল কোথাও নেই।

এদিক ওদিক তাকিয়ে রিনি দেখতে পায় ডাইনিং টেবিল এ ওর ব্রেকফাস্ট এর প্লেট এর পাশেই একটা চিরকুট চাপা দিয়ে রাখা আছে। যেটা নীল এর লেখা —প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ফুরিয়ে গেছে আনতে হবে, তাই সামনের মার্কেট টায় যাচ্ছি। তুই খেয়ে নিস, টিফিন জল সব মনে করে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিস। আর তুই বাড়ি লক করে চাবি নিয়ে যাস, আমার কাছে আর একটা চাবি আছে।

চিরকুটটা দেখে মন খারাপ হয়ে যায় রিনির। ছেলেটাকে সকালে ওভাবে বললো আর অফিস যাওয়ার আগে একবার দেখাও হোলো না।যাই হোক ফিরে এসে সরি বলতে হবে। এটা ভাবতে ভাবতে রিনি অফিস এর জন্য বের হয়। কিন্তু অফিসে এসেও কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারে না।

নীল আর রিনি সেই স্কুল লাইফ থেকে বন্ধু। রিনি ছোটো থেকেই পড়াশুনায় খুব ভালো আর নীল সাধারণ মানের। তবে খুব সুন্দর গান করতো নীল। নীলের গান শুনেই প্রথম নীলের সাথে বন্ধুত্ব করতে আসে রিনি। তারপর আস্তে আস্তে সেই বন্ধুত্ব কখন ভালোবাসা হয়ে যায় কেউই বুঝতে পারেনি। এরপর পড়াশুনা শেষ হলে রিনি একটা ভালো চাকরি পেয়ে যায়। আর নীল গান নিয়েই ব্যস্ত থাকে। এতো বছরে কিছুটা পরিচিতি পেলেও খুব একটা নামডাক হয়নি নীলের। কিন্তু নীল গানটা খুব নিষ্ঠার সাথে করে।

নীলের জীবনে দুটো জিনিস গান আর রিনি।

সেই স্কুল লাইফ থেকেই নীল রিনির প্রতি অসম্ভব কেয়ারিং। রিনির সব রকম সুবিধার খেয়াল সবসময় সে রাখে।অন্যদিকে রিনি খামখেয়ালি, অগোছালো। সব ব্যাপারে নীলের ওপর নির্ভরশীল।রিনি বড়লোক বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে l ছোটোবেলা থেকে খুবই আদরে মানুষ হয়েছে। কোনোদিন বাড়ির কোনো কাজই সে করেনি l অন্যদিকে ছোটোবেলায় বাবা মারা যাওয়ায় নীলের মাকে বাইরে কাজ করতে যেতে হতো। তাই নীল আর নীলের বোন বাড়ির সব কাজ অনেক ছোটোবেলা থেকেই শিখে গেছে। বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর নীল আর তার মা থাকতো।

তারপর হটাৎ করে নীল বিয়ে করে। কিন্তু বিয়েটা এমন সিচুয়েশনের মধ্যে হয় যে নীলের মা মেনে নিতে পারেন না। ফলে তিনি এখন তার বোনের কাছেই থাকছেন। যদিও নীল অনেকবার তার মাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, তবুও তিনি কিছুতেই বুঝতে চাননি। এদিকে রিনির মা বিয়েটা মেনে নিলেও বাবা কিছুতেই মানতে পারেন নি।তারা প্রথম প্রথম রিনিকে নীলের থেকে আলাদা করে নিজেদের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু রিনির জেদের কাছে কিছুতেই পেরে ওঠেন নি।ফলে তারাও আর মেয়ের সাথে কোনোরকম যোগাযোগ রাখেন নি। (পরবর্তী পর্ব আসছে )

✍️সম্পা চ্যাটার্জী

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *