গোপীগীত মূলত শ্রীকৃষ্ণ ও গোপীদের খুনসুঁটি।শ্রীমদভাগবত গীতার দশম স্কন্ধের ৩১অধ্যায়।

১৯টি শ্লোক নিয়ে রচিত এই গোপীগীত। রাসলীলার মাঝখানে শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে লুকিয়ে ফেলেন। তখন গোপীরা প্রেম নিবেদন করেছিলেন গানের মাধ্যমে।তাই পরিচিত “গোপীগীত”নামে। ভাগবত পড়ো গিয়া বৈষ্ণবের স্থানে – এই উক্তি ভাগবত পাঠ এবং পাঠকের উদ্দেশে শ্রীচৈতন্যের। সেরকমই এক ভাগবত পাঠক ছিলেন রঘুনাথ উপাধ্যায়।

র্ধমান জেলার ঘোরানুসি গ্রামে তার বাস ছিল। অদ্ভুত সাধক ছিলেন। সারাদিন ভাগবত পাঠ করতেন কিন্তু রাত্রে মা কালীর পূজো করতেন। গ্রামের মানুষ বিরূপ ছিল। গ্রামছাড়া হতে হলো। আশ্রয় নিলো বরাহনগরে। নিভৃতে কৃষ্ণের সাধনা করতে থাকলেন। জনৈক ভদ্রলোকের কাছে শুনলেন নবদ্বীপের নিমাই স্বয়ং কৃষ্ণের অবতার।

দীক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে মহাপ্রভু জানান তিনি এই অবস্থায় সাক্ষাৎ দীক্ষা দিতে অপারগ। মহাপ্রভুর পরামর্শে গদাধর দিলেন দীক্ষা। নিমাই বললেন তুমি ফিরে যাও বরাহনগরে। আমি সন্ন্যাস নিয়ে তোমার কাছে ভাগবত শুনতে যাবো। সত্যিই তিনি ১৫১০খ্রিস্টাব্দে সন্ন্যাস নেওয়ার বছর পাঁচেক পর গিয়েছিলেন। শোনা যায়, পরমহংস শ্রীরামকৃষ্ণ ঠাকুর দক্ষিনেশ্বর থেকে পায়ে হেঁটে বরাহনগরের একটা বাড়িতে যেতেন ভাগবত শুনতে। সেই বাড়িতে রামকৃষ্ণ দেবের পদচিহ্ন পড়েছিল । বাড়িটির “পদরেণু” নামাঙ্কিত। শ্রীচৈতন্যদেব নয়টি শ্লোক গোপীগীত থেকে নাকি ভক্তিপঠন যোগ শুনেছিলেন মতান্তর আছে।

২৯-৩৩ অধ্যায় পর্যন্ত ভাগবতে রাসলীলার বর্ননা আছে।রাসলীলা রস আস্বাদন করতে উপস্থিত সকলের কৃষ্ণের প্রতি সমর্পণের পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। গোপীগীত মূলত কৃষ্ণকে একাধারে ভক্তি, শ্রদ্ধা ও অতিথি হিসেবে প্রেমের আস্বাদন করার ইচ্ছে ও ধরণ। প্রথম ৯টি শ্লোকের সংক্ষেপ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হলো।

তোমার জন্ম বৃন্দাবনে হওয়ায় এখানকার সবাই ধন্য। একবার দেখা দাও। তুমি শরৎকালে সরোবরে জন্ম নেওয়া পদ্মের শোভা নিজের নয়নে ধারণ করেছো। প্রত্যেক জীবের অন্তরতম আত্মা। কালীয় নাগের হাত থেকে বাঁচিয়েছো, গিরি গোবর্ধন ধারণ করেছো, জগৎকল্যাণে উদয় তোমার। তুমি দেখা না দিলেও হাতটা আমাদের মাথায় রাখো। এটাও পড়তে পারেন রাধা কলঙ্কিত তবু পরকীয়া শ্রেষ্ঠ

যে স্থান প্রণামে সব পাপ ধুয়ে যায়। ওই লক্ষীর গৃহস্বরূপ ওই চরণ জোড়া দাও। কিছুই না দিতে চাইলে তোমার মুখের ভুবন ভোলানো হাসি খানা দেখাও। নবম শ্লোকটি হলো,

“তব কথামৃতম তপ্ত জীবনম / কবিভিরিদিতাম কলমাশাপহম/ শ্রবণমঙ্গলম শ্রীমদাতাতাম/ ভুবি গৃনান্তি তে ভুরিদা জানাহ। ”
অর্থাৎ তোমার কথারুপী অমৃত আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। বড়ো বড়ো কবিদের দ্বারা প্রশংসিত,প্রেম ধনে পূর্ণ, তোমার নাম শুনলেই মঙ্গল হয়।

এই শ্লোক রামকৃষ্ণ কথামৃত তে পাওয়া যায়।

রঘুনাথের কাছে ভাগবত শুনে মহাপ্রভু তাঁর নাম দিলেন “ভাগবত আচার্য”। উল্লেখ্য চৈতন্য ভাগবত রচনার সময় নাম অজানা থাকায় নামোল্লেখ নেই। এই গোপীগীত মহাপ্রভু পুরীতে প্রতাপ রুদ্রর কাছে শুনেছিলেন।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *