তোমার না আছে বিন্দু মাত্র ড্রেসিং সেন্স, না আছে আমার সাথে চলার মত কোনো যোগ্যতা। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছো একবারও। শত শত মেয়ের হার্টথ্রব এই অনি; যাকে সবাই অনির্বাণ রায় হিসেবে চেনে, সে নাকি শেষ পর্যন্ত তোমার মতো একজন কে বিয়ে করবে? হতেই পারে না, যাও তো তোমার মতো অন্য একজনকে খুঁজে নাও, ভালোবাসি ভালোবাসি বলে মাথা খেও না।
সেদিনের সেই প্রত্যাখ্যানের পর কোনোদিনই আর অনির সামনে আসেনি, বলা যায় আসতে চায় নি অনুমিতা।
দেখতে দেখতে ছ’টা বছর কেটে গেছে, সরল সাদাসিধে ঐ অনুমিতার কথা স্বাভাবিক ভাবেই অনির মনে থাকার কথাও নয় আর মনেও নেই।
কিন্তু গতকাল ফ্যাশন ইভেন্টে এভাবে অনুমিতা সান্যালকে দেখবে ভাবতেই পারেনি অনি।
বরং এ যে অনুমিতা সান্যাল এটা বিশ্বাস করতেই কয়েক সেকেন্ড লেগেছিল তার।
এই ফ্যাশন ইভেন্টে সমস্ত মডেলসদের ফ্যাশন টিপস থেকে শুরু করে ড্রেসাপ এর সমস্ত দায়িত্ব মিস্ অনুমিতা সান্যালের উপর।
সেখানে অনির্বাণ রায় একজন মডেল হিসেবে কাজ করবেন।
ভাবা যায়! যাকে একদিন শুনতে হয়েছিল তোমার বিন্দু মাত্র ড্রেসিং সেন্স নেই সেই নাকি এতবড় ইভেন্টের দায়িত্বে!

অনি আজ বাড়ি এসে কথা গুলো ভাবছে, সেদিন মেয়েটাকে ও রকম ভাবে না বললেও পারতাম, নিজেকে আজ কেমন দোষী লাগছে নিজের কাছে। হয়তো সেদিন মেয়েটার আজকের মত নামডাক ছিল না তবে, মানুষটা যে শতভাগ খাঁটি ছিল আজ কেন জানি মনে হচ্ছে অনির।
অতশত না ভেবে যা ই হোক একটাবার সরি তো বলাই যায়, তাই পরদিন অনি তার পুরোনো বাড়ির ঠিকানাতেই গেল অনুমিতা সান্যালের খোঁজে, সে হয়তো শহর বদলেছে, পুরোনো ঠিকানায় অনুমিতা আছে কিনা দেখাই যাক না! এই ভেবেই রওনা দিল অনির্বাণ।
পুরোনো বাড়ি, পুরোনো রাস্তা অলি-গলি পুরো পাড়াটা যেন আবার নতুন ভাবে সেজে উঠেছে, নিজের সাথে পুরো পাড়াটাকে আজ কেমন অচেনা লাগছে অনির।
গলির মুখে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে দু’পা হেঁটে ঐ পুরোনো তবে সুন্দর রং করা বাড়িটার দু’তলার জানালার দিকে তাকাতে তাকাতে অনুমিতাদের বাড়িতে ঢুকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অনির্বাণ। কেমন নার্ভাস লাগছে নিজেকে, মনে মনে খারাপও লাগছে যদি অনুমিতা সেদিনের কথার জন্য ক্ষমা না করে?
এই ভাবতে ভাবতেই বেল বাজায় দরজায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা খুলে অনির সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনুমিতা, আরে! আপনি? আমাদের বাড়িতে হঠাৎ? কেনো আসতে পারিনা বুঝি? এখানে থাকি না বলে এখানে আসাও বারণ ? আরে না না আমি তা বলিনি, আর আমি কি দরজাতেই দাঁড়িয়ে থাকবো ভেতরে আসতে বলবেনা, হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই। আপনি বসুন, আপনার জন্য চা,কফির ব্যবস্থা করছি। আমি তো ভাবতেই পারিনি একজন এত জনপ্রিয় মানুষ আমাদের বাড়িতে আসবে, ঠাট্টা করছো? আসলে আমি সেদিনের ব্যবহারের জন্যই আজ তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি, নিজেকে কেমন ছোট লাগছে বিশ্বাস করো, নিজেই নিজের আত্ম অহংকারে এতটাই মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম যে, সেদিন এই খাঁটি মানুষটাকেও চিনতে পারিনি, চিনতে পারিনি তার ভালোবাসাকেও। ছ’টা বছরে অনেক কিছু বুঝতে পেরেছি বিশ্বাস করো অনুমিতা অনেক কিছু।
দেখুন এতে ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই, আপনার যেটা তখন ভালো মনে হয়েছে আপনি আমায় বলেছেন, ধন্যবাদ তো আপনাকে আমার দেওয়া উচিত কারণ আপনার সেদিনের সেই প্রত্যাখান আর কথাগুলো নিজেকে নিজের কাছে প্রমাণ করে দেখানোর মত জেদ তৈরী করেছিল। আজকের আমিটা তৈরী হতে সেদিনের সেই প্রত্যাখান আর জেদটা দরকার ছিল। ধন্যবাদ আপনাকে।
প্লিজ এমন ভাবে বলো না অনুমিতা।
আচ্ছা বাদ দিন বলুন কি খাবেন চা না কফি, হাজার মেয়ের হার্টথ্রব আফটারল আপনাকে তো আর খালি মুখে ছেড়ে দিতে পারিনা! এমন ভাবে বলো না অনুমিতা বলছি তো সেদিনের ঘটনার জন্য সরি, একটা কথা বলবো কিছু মনে করবেন না তো? হ্যাঁ বলো, কাউকে না কোনোদিন তার বাইরের রূপ দিয়ে বিচার করবেন না, অনেক সাধারণের মাঝেই অনেক অসাধারণ গুলো লুকিয়ে থাকে, একটু খুঁজে নিতে হয়, এই আর কি!
আর ভালোবাসার ক্ষেত্রেও তাই রূপ বা ড্রেসিং সেন্স নয় মনটাই আসল।
কথা গুলো শুনছে আর কেমন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনির্বাণ অনুমিতার দিকে।

লেখায়- দীপা সরকার

Facebook Comments Box

By Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *