LaughaLaughi

You Create, We Nurture

I got a story to tell

যাত্রাপালা

যাত্রাপালা আজকাল লোক শোনে না। প্রান্তিক গ্রামগুলোর কথা না হয় বাদ দিলাম কারণ তাদের সেখানে শহুরে ছোঁয়া লাগতে এখনও বোধকরি বেশ কিছুটা বাকি আছে। একটা সময় ছিল যখন যাত্রাপালার বিশ নাম ছিল। ইদানীং কালে সে যুগ এখন অতীত, সবটাই কালের গ্রাসে আজ ম্রিয়মাণ।

যাত্রাপালার আরেকটা অঙ্গ হল পালাগান। যাত্রা সাধারণত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হয় যেমন – সমাজসেবা মূলক, ভালোবাসা বা বিয়ে সংক্রান্ত, রসাত্মক। যাত্রাপালা বিভিন্ন স্বাদের গল্পের সমষ্টি বলা যেতে পারে।  পালাগান কিন্তু এর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। পালাগানের মূল কেন্দ্র হচ্ছে ঠাকুরের নামগান করা। কিন্তু এটা সংকীর্তন নয়।

পালাগানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বহুযুগ ধরে যে সমস্ত পৌরাণিক কাহিনী আমরা শুনে আসি সেগুলোই খানিকটা উল্টে পাল্টে নতুন ভাবে আনা হয়। পালাগানের অভিনেতাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয় দর্শকদের মনের দিকে কারণ তাদেরকে ক্ষুন্ন করলে অযথা বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।

এই অ্যান্ড্রয়েড বা স্মার্ট টিভির যুগে যাত্রাপালা বা পালাগান দুটোই আজ অস্তমিত। আমাদের ভারতবর্ষের লোকশিল্পী বা অন্যতম প্রাচীন কলা হিসাবে এটির নাম থাকলেও আজকাল লোক সেটাকে খুবই কম প্রাধান্য দেয়। যার ফলে একের পর এক যাত্রাদল ভেঙে যাচ্ছে। শহরে মানুষদের কাছে যাত্রা বা পালাগান নিতান্তই বিস্ময়কর জিনিস।  শহরে এই অমূল্য রতনটি মঞ্চস্থ হয় না।

আমি যেখানে বাস করি জায়গাটা ঠিক গ্রাম নয় আবার পুরোদস্তুর শহুরে ছোঁয়াও লাগেনি তাতে, বলা চলে শহরতলি। আমাদের এখানে প্রতি বছর শীতলা উৎসব উপলক্ষ্যে পালাগান বসে। পালাগানের পরিচালনা করেন মলয় ধারা নামে জনৈক এক ব্যাক্তি। সারারাত ব্যাপী এই যাত্রা অনুষ্ঠিত হয় নিকটস্থ মন্দিরের সামনে মাচা বেঁধে। অভিনয়, আলোকসজ্জা, মেকআপ এবং আবহসঙ্গীত সবটাতেই এখনও সেই আপন আপন ছোঁয়া রয়ে গেছে। কোনোটাই বাজার চলতি জিনিস কেনা নয়।

আবহসঙ্গীত নিজের হাতে পরিবেশন করা হয় স্টেজির পাশ থেকে। পাশের ফাঁকা জায়গা থেকে অভিনেতারা উঠে আসেন। সবথেকে উল্লেখ্য হচ্ছে গান।  পালাগানের অন্যতম শর্ত হচ্ছে গানের মাধ্যমে সবটুকু কাহিনী ব্যক্ত করা, সংলাপের অংশ এখানে তুলনায় কম থাকে। অভিনেতারা যথেষ্ট সাবলীল এবং দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করে যান। তাদের এই প্রচেষ্টা প্রশংশনীয়।

পালাগান বা যাত্রপালা আজ হারিয়ে যাচ্ছে। এই শিল্প আমাদের আদিতে বসত করত এখন তা বিলীন হবার জোগাড়। তবু দেখে ভালো লাগে আমার গ্রামে এই পালাগানের আসর দেখে। প্রতিবছর বিস্ময়ে উপভোগ করি এই গান। যা মনে ভালোলাগার সাথে সাথে উদ্রেক করে আরও তৃপ্তির।

Facebook Comments Box

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Editorial Team of LaughaLaughi