রডোডেনড্রন, এখনো ভালোবাসো অবেলার-প্রেম? মনে পড়ে আমাদের সাজানো মজলিসে কত কথা জমেছিল! কতটা শুনেছিলাম আমরা? আর কতটাই বা বুঝেছিলাম? ছাড়ো, বাগানের সব ফুলের যত্ন কি আর একই ভাবে নিতে পারে মালী! বিচ্ছিন্নতা এর ছায়ায় হারিয়ে যায় ভালোবাসার উপাখ্যান।
দিনান্তের ক্লান্তি শেষে উষ্ণতার যাত্রা। দিনগুলো বড্ড কঠিন ও নির্মম; ছন্দে ছন্দে যন্ত্রণার সুর, মজ্জায় মজ্জায় ব্যথার অশ্রু। হারিয়ে ফেলা কিছু ধুলোমাখা স্মৃতির ছবি পাঠিয়ে দিই আকাশের নামে। ভালোবাসার আঙিনা জুড়ে এখন শুধুই বিচ্ছিনতা এর ছায়া, এখন সকালে কেউ আর ঘুম ভাঙাতে আসেনা। একাই উঠি। ঘুম ভাঙলে অভ্যাস মত আড়মোড়া ভাঙি, উষ্ণ চায়ের কাপে ঠোঁট ঠেকাই। কিন্তু স্বাদ পাইনা আগের মতো। আগে ছোট্ট টেবিলে একসাথে বসে চা খেতাম, সেই তৃপ্তি আজ আসেনা আর। স্বার্থপর ঘড়ির কাঁটা নিজের খেয়ালে দৌড়ে যায়, বলে না “একটু ব’সো”। চলতে থাকি চরাই উতরাই কাজের মাঝে, যেখানে ক্লান্তি বলে কিছু নেই। আজ কেউ আর হাত ধরে না, কেউ তোমার মতো করে বলেনা “একটু দাঁড়াও”। আমি চেয়ে থাকি বোবা টেলিফোনের দিকে। যদি একবার বেজে ওঠে! কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। যা হবে না, হতে পারে না, তা ভাবা কি শুধুই বৃথা?
আতস কাঁচের ওপার থেকে সাজানো স্তব্ধতা দেখে যাই আমি। বিচ্ছিন্নতা কি এতটাই নীরব! ইচ্ছে হয় প্রশ্ন করি, “এ তোমার কেমন নীরবতা?” বুকের মাঝে জমে থাকা কাটাকুটির দল আমায় বুঝতে শেখায় অনেককিছু। খাদের পাশে দাঁড়িয়ে কত কিছুই মনে পড়া যায়— আমাদের হলুদ বিকেল, নীলচে সুখ আর নরম আদরের দিনগুলো… জমাট বাঁধা কষ্টগুলো থমকে থাকে ভেতরেই।
যতদিন গেছে, স্মৃতিরা পাখি হয়ে ডানা মেলেছে। আমি বুকের মধ্যে কাঠগোলাপের মতো পুষে রেখেছি সেই পাখি। চুপচাপ হেঁটেগেছি দীর্ঘ একটা পথ। বিচ্ছিন্নতা ঢেকে রেখেছে আমায়। পাশ দিয়ে কারা চলে গেছে আমি দেখিনি। আমার চোখে তখন একটা অকাল-রাত্রি।
দু’ধারে দুটো মানুষ, মাঝে একটা সাদা সুতোর টান। অসমাপিকার মতো আমাদের থেকে যাওয়া। পাতার ফাঁকে ফাঁকে সূর্যটা উঁকি মারে, তার মাঝে আমি তোমায় খুঁজি রোজ। সন্ধ্যাতারাটা’ও ঢাকা পড়ে যায় বিচ্ছিনতার মিছিলে।
বাইরে থেকে সাজানো গোছানো পরিপাটি একটা মানুষ কে সবাই চেনে, তার ভেতরের ভাঙা ফুলদানির গল্প কেউ জানতে পারেনা৷ দখিনা বারান্দার দিকে উড়ে যায় ‘না বলা স্লোগান’। জানিনা— “আমি বিচ্ছিন্নতা কে ভালোবেসেছি? নাকি বিচ্ছিন্নতা আমাকে?”
ইতি—তোমার অসুখলতা