ফোবিয়া

ঊষা ! গোল চাকতিটার ওপর লেখাটা আবছা হয়েছে ঠিকই কিন্তু পড়া যাচ্ছে । “ কমপক্ষে দশ-বারো বছর তো হবেই ; এরা পাল্টায়না কেন ! ’’ বিড়বিড় করে বললো ইসমাইল । বাঙালির এই এক দোষ , গাঁটের কড়ি খরচা করে দশ বার সারাই করাবে অথচ নতুন কিনবে না । কালো তুলোর মতো ময়লার পুরু লেয়ার সরিয়ে কানোপিটা উপরে তুললো সে । ঐতো ব্লাকটেপের আস্তরণ খুলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে থাকা তারদুটোর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে । খালিহাতেই তারদুটিকে একসাথে জড়িয়ে আবার ব্লাকটেপ লাগিয়ে দিলো ইসমাইল । এইনিয়ে চুয়ান্নবার কাউকে শান্তির ঘুম এনে দিল সে।

সুধীরবাবু তার দিকেই তাকিয়েছিল এতক্ষন। এখন একইসাথে আশ্চর্যিত এবং আনন্দিত হয়ে তিনি কোলবালিশটাকে কাছে টেনে নিয়ে শুলেন । হাসিটা এখনও মুখে লেগে রয়েছে । তার তিনবছর আগের কথা মনে পরে যাচ্ছে , ন্যাংটো তামার তার ধরার আগে চোখ বন্ধ করে নিতে সে , এই বুঝি শক লাগে । স্ক্রু ঘুরিয়ে খুলতে কালঘাম ছুটে যেত তার তখন । ঘামের কথা ভাবতেই আবার ভয়লাগে তার । কপালের ওপর বিন্দু বিন্দু ঘাম বা বগলের লোমে ভেজা ভেজা ভাব অথবা গোঁফের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ঘাম , সবেতেই ভয় তার । ঘাম হলেই তার বুক ধড়ফড় করে , টেনশনে মাথা চুলকোয় , দাঁত দিয়ে নখ কাটার হার দ্বিগুণ বেড়ে যায় । আসলে ঘামোফোবিয়ায় আক্রান্ত সে । এই রোগ পৃথিবীতে শুধু তাকেই বেছে নিয়েছে , তাই নামকরণের দায়িত্বটা তারই নিতে হয়েছে । যাগ্গে , সে অনেকদিন আগের কথা , এগুলো আর ভাবেনা এখন ইসমাইল । ব্লেডের ওপর বসে সে দেখতে পেলো , সুধীরবাবুর ভুঁড়িতে ছন্দ মিলিয়ে একবার ওপরে উঠছে আরেকবার নামছে।

ইসমাইল ঘরে এসে সুইচবোর্ডের দিকে এগিয়ে গেলো । সুইচে হাত দিয়ে ভুল ভাঙলো তার । আসলে এই ভুলটা সে গত তিনবছর ধরে রোজ করে । অনেক বছরের অভ্যেস তো । সেই তিনবছর আগের দিনটা , ইসমাইল হোটেলে খেয়ে ফিরেছে । হাতমুখ ধুয়ে ফ্যানটা পাঁচে দিয়ে শুয়ে পড়েছিল , তারপর ! আধঘন্টাও হয়নি ঘটঘট আওয়াজ করে ফ্যানটা বন্ধ হয়ে গেলো । ইসমাইল উঠে প্রায় একঘন্টা সুইচ্ নিয়ে নাড়াঘাটা করেছে , অনেক চেষ্টাতেও সিলিংটা ছুঁতে পারেনি সে। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলো সে । চারদিন পর পাশের ফ্ল্যাটের ঘোষবাবুরা দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করে । ডাক্তার বলেছিলো , ‘ স্ট্রোক ‘ । কিন্তু ইসমাইল জানে , ‘ ঘামোফোবিয়া ‘ ।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *