পার্থক্য
অফিস থেকে ফিরছিলাম।গড়িয়াহাট ক্রসিংয়ে উবেরটা দাঁড়িয়ে পড়ল। বেশ লম্বা টানবে আজ,এফ এম রেডিওতে বলছে দশ মিনিট স্টপেজ টাইম। গরম এখনও তেমন পড়েনি তাই জানলার কাঁচ নামানোই আছে। মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে বাইরের ব্যস্ত শহরের দিকে চোখ আর কান দুটোই রাখলাম।অজস্র গাড়ির মাঝে উবেরের ঠিক পাশেই দাঁড়ানো দুটো বাইক,না না ভুল বললাম,একটা স্কুটি আর একটা apache বাইক চোখে পড়ল।আর এত হর্ণের আওয়াজ ছাপিয়ে কানে এল টুকরো কিছু কথা।
স্কুটিতে বসে থাকা একটি বছর ত্রিশের বিবাহিত দম্পতি।
মেয়েটি: শোনো না তুমি এই মাসের স্কুটির ইন্সটলমেন্ট নিয়ে ভেবো না একদম। আমি কন্টেন্ট লিখে দু হাজার টাকা পেয়েছি। ওটা তো হিসাবের বাইরেই ছিল। ওটা দিয়ে এমাসের টা হয়ে যাবে।
ছেলেটি: ডাউন পেমেন্ট এর চল্লিশ হাজার টাকা টাওতো তুমি টিউশন থেকে জমানো টাকা থেকে দিয়ে দিলে। না হলে তো স্কুটি কেনাই হত না।
মেয়েটি: তাতে কি? সারাজীবন কী ভাগের বাইক চালাতে? অর্ধেক টাকা দিয়ে বাইক কিনেছ বলে তো তোমার দাদা তোমাকে ইচ্ছে মতো চালাতেও দেয় না। আমাদের নিজেদের তো হল নাকি। এটা শোধ হলেই তোমার নিজের একটা বাইক কেনা হবে দেখো।
ছেলেটি: আমার মুনিয়া এত বড় কবে হল!
মেয়েটি: (লজ্জা পেয়ে) ধুস! তোমার থেকেই তো শেখা। জীবনটা আমাদের, আমরাই গড়ব।
এবার পাশের apache বাইকে বসে প্রায় সমান বয়সী দুজন যুবক যুবতী ছেলেটি মেয়েটি অত্যাধুনিক খুব দামী জামাকাপড় পরিহিত।
ছেলেটি: এবার শুধু দেখো ওই অভ্রের মুখে কেমন থাপ্পড় টা পড়বে আজ ক্লাবে যখন এই বাইক আর তোমায় পিছনে বসিয়ে এন্ট্রি নেব।
মেয়েটি: শোনো এসব ভাট বকে লাভ নেই। অভ্র আমায় আগের মাস থেকে বলে রেখেছে এই মাসে আমায় তাজ এ নিয়ে যাবে আর ‘লাভি’-র একটা ব্যাগও গিফ্ট করবে।
ছেলেটি: আরে জানু, আমিও নিয়ে যাব বাবাকে অনেক জপিয়ে টাকা নিয়ে apache টা কিনেছি। এই মাস টা বাদ দাও। পরের মাসে তাজ এ ডিনার আর শপিং। পাক্কা। তাহলে দীঘা যাবে তো?
মেয়েটি: হুঁ যাবো তবে আগে কথা টা রাখবে তবেই।
ছেলেটি:done!
কাঁচটা তুলে দিলাম। সিগনাল টা গ্রীন হয়ে গেছে। গাড়ি চলতে শুরু করল। হয়ত আমাদের জীবনের গাড়িটা ও সবার এই ভাবেই চলে। কিন্তু পার্থক্যটা বোধহয় শিরদাঁড়াতেই তৈরি হয়ে যায়।
Leave a Reply