স্বাতন্ত্র্য ভারতে জনগণ নাকি প্রজার গুরুত্বটা বেশি! শুরুটা একটু জটিল লাগলেও এরপরেরটা অপেক্ষাকৃত সহজ। আসলে সংবিধান অনুযায়ী ভারত একটা গণতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু আমি আপনি কেন এই গণতন্ত্র প্রজাতন্ত্রের ভেদাভেদে পড়ব। আমরা তো আর পরবর্তী ডক্টর বি. আর. আম্বেদকর হতে পারব না। তবে এই গণতন্ত্র এবং প্রজাতন্ত্রের মাঝে একটা বহু আলোচিত বিষয় লুকিয়ে আছে। সেটা হল এখানে অপেক্ষাকৃত প্রতিটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, ধর্ম এবং উপজাতির জন্য সমস্ত সরকারি বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে আলাদা সংরক্ষণ ব্যবস্থা রাখা হয়। এবার গণতন্ত্র আর প্রজাতন্ত্রের সাথে এটা ঠিক কীভাবে সম্পর্কিত সেটা একটু দেখে নেওয়া যাক। আসলে ওই দুটো বিষয় খানিকটা উপর থেকে এক দেখতে লাগলেও এদের মধ্যে বেশ বড় একটা পার্থক্য আছে।

গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র দুটোর নিয়মকানুন বা দার্শনিক ব্যাখ্যা অনেকটা একই তবে একটি গণতন্ত্র এবং একটি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল সরকারের উপর আইনত সীমাবদ্ধতা, যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকারের উপর যথেষ্ট প্রভাবশালী। দুধরনের সরকারই একটি প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা ব্যবহার করে যেখানে নাগরিকরা প্রতিটি নির্বাচনে তাদের পছন্দের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনীতিবিদদের ভোট দেয়। প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি সংবিধান বা অধিকারের সনদ একটি নির্দিষ্ট অবিচ্ছেদ্য অধিকার রক্ষা করে যার মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার সেই আইনত অধিকার অকার্যকর করতে চাইলেও পারেনা যদিও সেই সরকার বেশীরভাগ ভোটারের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছে। একটি “বিশুদ্ধ গণতন্ত্রের” মধ্যে, সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের উপর এই ভাবে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপও নিয়ন্ত্রণ করেনা এবং এরা সংখ্যালঘুদের উপর তার নির্দিষ্ট ইচ্ছা ও অধিকার আরোপও অকার্যকর করতে পারে।
এতটা পড়ে যারা গভীরজলে হাবুডুবু খাচ্ছেন, তাদের জন্য সহজ ভাষায় বললে আমাদের দেশের সংবিধান এমনভাবেই লিখিত এবং পরিচালিত যেখানে দেশের নির্বাচিত সরকার যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য এই সংরক্ষণ ব্যবস্থার উপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করতে চায়, সেটা সংবিধানিক বা আইনত সম্ভব নয়। তাই একমাত্র সাংবিধানিক সংশোধন বা সংযোজন ছাড়া এই পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই আমার মতন যারা এই ব্যবস্থার পরিবর্তন চায় তারা যেন নির্দিষ্ট কোনো সরকারের বিরোধীতা না করে আইনত ভাবে এটার প্রতিবাদ করে।

বিঃ দ্রঃ আমি কোনো সরকারের বা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব বা সমর্থন করছিনা। কেবল প্রতিবাদের সঠিক উপায়টা বিশ্লেষণ করবার জন্যই আজকের এই লেখাটি। কারুর ধর্মীয় এবং মানবিক ভাবাবেগকে আঘাত করলে একান্ত ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।

Facebook Comments Box

By Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *