খুশিটা হয়তো বিলীন হলেও হচ্ছে কোথাও!

খুশিটা হয়তো বিলীন হলেও হচ্ছে কোথাও!

বাঙালীর শ্রেষ্ঠ পুজো মানেই দুর্গোৎসব। স্কুল ছুটি, পাড়ায় বন্ধুদের সাথে ক্যাপ বন্দুক ফাটানো থেকে পুজোর গন্ধটা হারানো পর্যন্ত কতকিছু বিলীন হয়েছে ধীরে ধীরে। আমরা কম বেশি অনেকেই এই নিয়মের সাথে পরিচিত।

হ্যাঁ, খুশিটা হয়তো বিলীন হলেও হচ্ছে কোথাও! পুজোয় বহু কপোত কপোতী “এভাবেই একসাথে রয়ে যাব ” প্রতিজ্ঞা করেছিল, তাদের আর একসাথে দেখতে পাওয়া যায় না। নিজেদের ভিন্ন সংসারে ভিন্নভাবে আবদ্ধ তারা এখন। বা হয়তো তাদের মধ্যে কেউ কেউ আজও অপেক্ষায় বিচক্ষণ। তারা হয়তো পুনরায় দেখা হওয়ার আশায় আজও বসে। যে সম্পর্কগুলোয় নিজেদের অজান্তেই হঠাৎ ফাটল ধরে, সেগুলোও পুজো এলে বারবার সতেজ হওয়ার ক্ষীণ আশায় থাকে। আবার বছর বছর টিকে থাকা কপোত কপোতীরা প্রতি পুজোয় নিজেদের নতুন মোড় দেয়।

খুশিটা হয়তো বিলীন হলেও হচ্ছে কোথাও! তবুও আমাদের শৈশব, কৈশোরের দিনগুলোর দিকে ফিরে তাকালে বোঝাই করা বহু স্মৃতি কুড়িয়ে পাই। যেমন, স্কুলে পঞ্চমীর দিন আমাদের রঙীন বেশে যাওয়া আর সেদিন থেকেই পুজো ভাবের শুভারম্ভ। মা বাবার সাথে হাত ধরে ঠাকুর দেখা, স্টলগুলো থেকে বায়না করে বহু জিনিস কিনতে চাওয়া, “আর হাঁটতে পারছি না, কোলে নাও” থেকে হঠাৎই বড়ো হয়ে যাই আর বন্ধুদের সাথে বেরোনো শুরু হয়। সেই প্রথমবার আমরা স্বনির্ভর হওয়ার দিকে এগোই। মুঠোফোনে আলোচনা শেষে ঠিক হয় হরিদার চায়ের দোকানের সামনে মুমূর্ষু ক্লাবে হবে সবার দেখা, সময় ঠিক সকাল দশটা। “হাতে টাকা নিয়ে নিজের জন্য কেনা, নিজের জন্য খাওয়া” এর শুরু এখান থেকেই।

খুশিটা হয়তো বিলীন হলেও হচ্ছে কোথাও! নতুন অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে বন্ধুদের সাথে প্রথম সেলফি, #ফ্রেন্ডশীপ ফরেভার থেকে ভার্চুয়ালি ছবিতে লাইক করা পর্যন্ত যাত্রায় আমরা হারাই অনেক কিছু। বেস্ট ফ্রেন্ড বলা বহু শক্ত পাটাতনের বন্ধুত্ব আজ বিলীন হয়েছে। তারা এখন একে অপরের গোপন কথা লুকিয়ে রাখতে পারে না, তাদের মধ্যে হয়তো আর কথাও হয় না। ছোটোবেলার পুজোর খুশির আমেজ মানেই রোজের একঘেয়ে নিয়মের জীবন থেকে কিছুদিনের ছুটি,পড়াশোনা থেকে বিরাম বা মুক্তি, নতুন জামা- জুতো; বলা যায় নতুন কিছুর শুরু। হঠাৎই শৈশব, কৈশোর ছেড়ে বার্ধক্যে এসে পড়ায় নিজেদের অজান্তেই এই ছুটিগুলোকে অস্বাভাবিক মনে হয়। আমরা কাজে নিমজ্জিত থাকলে সেটাকে আর বিরক্তিকর মনে হয় না কারণ আমরা বড়ো হয়েছি।

খুশিটা হয়তো বিলীন হলেও মৃদু উত্তেজনা তো আজও আছে। রীতি নীতি যে বদলায় নি; শিউলির গন্ধ, মায়ের আগমন, ঢাঁকের আওয়াজ, ধুঁনুচি নাচ, সিঁদুর খেলা আর পুরোনো কিছু মানুষের সাথে পুনর্মিলন এগুলো এক রয়ে গেছে, হ্যাঁ আগের খুশির মুহূর্ত এক না হলেও বর্তমানের পুজোর খুশিটায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে আছি।

Facebook Comments Box

Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *