আমি প্রবাল মুখোপাধ্যায়। ক্লাস টেন -এ পড়ি। আমার দাদু প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়। কোনো দিন তাকে কোনো অসৎ কাজে দেখি নি। আজ আমার বড়ো জ্যেঠুর মেজো ছেলে অর্থাৎ আমার মেজদার বিয়ে। শ্রীমতি নিরুপমা দস্তিদার -এর সাথে। মেজদার প্রেম তিন বছরের , সবাই প্রথমে একটু অরাজি ছিল বৌদির চাকরি করা নিয়ে তবে এখোন সব ঠিক ঠাক। তাও দাদু বিয়েতে যেতে রাজি নয়।

আমি দাদুকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “যাবে না কেনো?”

দাদু বললো, “সেদিন যা পারি নি আজও পারবো না”।

মানেটা বুঝলাম না।

বড়দা আর বড়ো বৌদিকে জিজ্ঞাসা করতে ওরা বললো, “জানি না”।

বড়ো বৌদির মনটা আজ কাল খুব খারাপ থাকে। পর পর দুই মেয়ের অদ্ভুত মৃত্যু কাছ থেকে দেখেছে। জন্মের দিন রাতেই সুস্থ বাচ্চা দুটো অদ্ভুত চারটে কাটা দাগ গলায় নিয়ে মারা গেছে। যেনো কেউ মার্কার পেন গলায় ঢুকিয়ে চারটে দাগ কেটেছে। ব্যাপারটা খুবই অবাস্তব তাও সমস্ত যুক্তির বাইরে গিয়ে ঘটনাটা মেনে নিতে হলো আমাদের। তাই বৌদির মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। নেহাতই করবার আর কেউ নেই তাই শুকনো মুখে মেজদার বিয়েটা সামলে দিলো বৌদি।

আমরা যৌথ পরিবার। বরদাদু, ছোটো দাদু, ঠাকুমারা, বড়ো জ্যেঠু, মেজ জ্যেঠু আর ছোটকা সবাই মিলে অনেক লোকজন। বড়দার মেয়ে দুটো থাকলে আমাদের পরিবারে প্রথম কন্যা সন্তান হতো ওরা প্রায় তিন পুরুষ পর। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য।

আমি মাঝে মাঝেই বড়দাদুকে দেখি ঠাকুর ঘরের পাশে কনের ঘর টায় গিয়ে বসে থাকে চোখের কোণে হালকা জল নিয়ে। কিন্তু ঘরের লাইট জ্বালতে দেয় না কাউকে এমনকি নিজেও অন্ধকারে থাকে ওই ঘরে গেলে। ছোটকাকে তো কিছু জিজ্ঞাসা করাই বৃথা। ও তো কিছুই জানে না। ছোট দাদু কে জিজ্ঞাসা করতেই আমাকে ধমকে পাঠিয়ে দিল বললো – ‘ পড়তে বস’। ছোটো দাদু প্রথম থেকেই রগচটা। খুব মেজাজি। বাড়িতে সবাই ওনার কথা মেনে চলে এমনকি আমার বড় দাদুও।

আমি একদিন ছোটো ঠামমিকে বলছিলাম আমার একটা বোন বা দিদি থাকলে কতো ভালো হতো সব কথা শেয়ার করতাম ওর সাথে। কতো মজা হতো।

ছোটো ঠামমি আমার মুখে হাত চাপা দিয়ে এদিক ওদিক দেখে বললো, “চুপ কর পাগল চুপ কর, কেউ শুনতে পেয়ে যাবে, জানিস না আমাদের বাড়িতে মেয়ে জন্মানো মানা।”

আজ দুদিন হলো বড় দাদু আর আমাদের মধ্যে নেই। আমি অফিসের একজন কলিগের সাথে কথা বলছিলাম ঠাকুর ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ শুনি একটা কান্নার আওয়াজ। কেউ যেনো খুব জোড়ে জোড়ে কাদঁছে। যেনো তার খুব কাছের মানুষ মারা গেছে। একটু খানি এগিয়ে গিয়ে শুনি কান্নাটা ওই কোণের ঘর টা থেকে আসছে। বড়দাদু বেচেঁ থাকতে ওই ঘরে কাউকে যেতে দেয় নি কখনো। আমি ফোন টা রেখে সাহস করে ঘরের দরজা টা খুললাম। খুব অন্ধকারে পা বাড়াতে গিয়ে হঠাৎ পায়ের নিচে একটা নুপুর পেলাম। কিন্তু আমাদের বাড়িতে নুপুর পড়ার মতো কোনো মেয়ে নেই বৌদিরা বা জেঠিমা রা কেউ নুপুর পরে না। ভাবতে ভাবতে সামনে একটা টেবিলে ধাক্কা খেলাম। ফোনের আলো টা জ্বলিয়ে দেখি টেবিলে অনেক বই খাতা, বহু পুরোনো সেসব। তাতে কারো নাম লেখা নেই। খাতার পাশে একটা কাঠের পুরস্কার অনেক দিনের পুরোনো, তাতে খুব সুন্দর একটি মেয়ের ছবি। ছবির হাসিটা পুরো আমার বাবার মতো। পুরস্কার টার নীচে দ্বিতীয় লেখা আর নামের জায়গাটা অদ্ভুত ভাবে মার্কার পেন দিয়ে চারটে দাগ কাটা।

Facebook Comments Box

By Haimi Nath

A foodie and a creative blogger, favourite timepass is hangout with siblings, and love to sleep.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *