নীল দূর্গা

নীল দূর্গা নাম হয়তো আমরা অনেকেই শুনেছি কিন্তু এর পেছনে গল্পটা কি আমরা জানি?

রাত শেষ হলেই পুজো এদিকে প্রতিমা এখনও তৈরি হয়নি

নাওয়া-খাওয়া ভুলে রঙ করছেন বৃদ্ধ শিল্পী। রাত গভীর। চার দিক নিঝুম। ঘুমিয়ে পড়ছে গোটা গ্রাম। জেগে আছেন শুধু তিনি, একা। ক্লান্ত শরীরে এক হাতে কেরোসিনের লম্ফ তুলে ধরে রঙ করছেন প্রতিমার।

বয়সের ভারে শরীর ভেঙেছে। চোখেও কম দেখেন। তবু এক মনে রঙ করছিলেন। ভোরের নরম আলো এসে পড়ল দেবীর শরীরে। ক্লান্ত চোখে প্রতিমার দিকে ভালও করে তাকিয়ে চমকে ওঠেন বৃদ্ধ। এ কী! দেবীর গায়ে যে অপরাজিতা রঙ।

 

কী হবে এ বার? নতুন করে রঙ করারও যে সময় নেই। চিন্তায় পড়ে যান শিল্পী। এ দিকে, আশপাশে মুহুর্তে ছড়িয়ে গেল খবর। দেবীর রঙ দেখে মুশড়ে পড়লেন সকলেই।

মুশকিল আসানের মতো হঠাৎই আবির্ভাব হলেন বাড়ির কর্তা। জানালেন, চিন্তার কিছু নেই। রাতেই দেবী তাঁকে স্বপ্নে আদেশ দিয়েছেন, যেন অপরাজিতা রঙেই দেবীর পুজো করা হয়।

 

সেই থেকেই কৃষ্ণনগরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে অপরাজিতা রঙে পুজিত হয়ে আসছেন দেবী। কৃষ্ণনাগরিকদের কাছে তিনি আজ আদরের ‘নীল দুর্গা’।

 

চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দাবি, প্রায় তিনশো বছর আগে অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল জেলার বামরাইল গ্রামে এই পুজো শুরু হয়। তাদেরই এক পূর্বপুরুষ তন্ত্রসাধক এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। পরবর্তী কালে দেশ ভাগের পর চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা চলে আসেন কৃষ্ণনগর। নাজিরা পাড়ায় তারা স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৪৭ সাল থেকে এখানেই শুরু হয় নীল দুর্গার পুজো।

 

তবে ১৯৯৮ সালে পুজোর নানান আচারকে ঘিরে মত পার্থক্যর জেরে শরিকি বিবাদ তৈরি হয়। সেই বছর থেকেই আলাদা আলাদা করে শুরু হয় নীল দুর্গার পুজো। তবে পুজোর আচার থেকে শুরু করে নানা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান সব কিছু এক রকম থাকলেও নতুন পুজোয় বাদ দেওয়া হয়েছে পশু বলি, কুমারী পুজো।

 

বাংলাদেশে যখন পুজো হতো তখন মোষ বলি দেওয়া হতো। কিন্তু ১৯৯৮ সালে প্রথম থেকেই পুজোয় সতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শাখার সদস্যরা যে পুজো শুরু করলেন, সেই পুজোয় কুমারী পুজো বন্ধ করে দেওয়া হল। আর বছর পাঁচেক আগে বন্ধ করে দেওয়া হয় পশু বলিও। তবে পুরনো পুজো বা চিন্তাহরণ চট্টোপাধ্যায়ের শাখায় এখনও কুমারী পুজো ও পশু বলির প্রচলন আছে।

 

শুধু দেবীর গায়ের রঙই নয়, নানা মাঙ্গলিক আচার-অনুষ্ঠানের ভিতর দিয়েও এই পুজো আলাদা করে নজর কাড়ে। উল্টো রথের দিন দেবীর পটে মাটি পড়ে। হয় পাট-পুজো। সন্ধি পুজোতে লাগে ১০৮টি অপরাজিতা ফুল। শাক্ত মতে পুজো হয়। প্রতি দিন দেবীকে মাছের ভোগ দেওয়া হয়। সেই তালিকায় থাকে রুই থেকে ইলিশ। দশমীর দিন পান্তা ভাত, কচুর শাক, মটর ডালের বড়ার সঙ্গে গন্ধরাজের বড়া দেওয়া হয়।

 

নবমীর দিন হয় শত্রু নিধন বা শত্রু বলি। আতপ চালের গুড়ো দিয়ে তৈরি হয় মানুষের মূর্তি। সেটা লাল কাপড় দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। তার পরে পরিবারের বয়োজেষ্ঠ্য সদস্য খাঁড়া দিয়ে কোপাতে থাকে। সঙ্গে থাকেন পরিবারে অন্যান্য পুরুষ সদস্য। পরিবারের বিশ্বাস এর মাধ্যেমে পরিবারের শত্রু নিধন করা হয়। দুই পরিবারেই একচালিতে প্রতিমা তৈরি হয়। উল্টো দিকে অর্থাৎ বাম দিকে থাকে সরস্বতী ও গনেশ এবং ডান দিকে থাকে লক্ষ্মী ও কার্তিক।

Facebook Comments Box
Disha Sarkar

Writing to me, is simply thinking through my fingers.

Recent Posts

SVF Music Unveils April Edition of “Banglar Gaan Indies”

Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…

3 months ago

Mimi Chakraborty and Nabila to Star Alongside Shakib Khan in ‘Toofan’

Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…

4 months ago

Why Does a Rich Chicago Law Firm Keep Suing Indian Tribes?

This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…

9 months ago

Anupam Roy’s ‘Aami Sei Manushta Aar Nei’ is a Musical Masterpiece

In a spectacular celebration coinciding with the birthday of the iconic actor Prosenjit Chatterjee, the…

10 months ago

অনুষ্কা পাত্রর কণ্ঠে শোনা যাবে দে দে পাল তুলে দে

হিমেশ রেশামিয়ার পর সুরাশা মেলোডিজ থেকে অনুষ্কা পাত্রর নতুন গান পুজো আসছে মানেই বাঙালির নতুন…

10 months ago

Srijit Mukherji’s Dawshom Awbotaar is On a Roller Coaster!

The highly awaited trailer of grand Puja release, "Dawshom Awbotaar", produced by Jio Studios and…

10 months ago