চিত্রকলা আর চিত্রকরের সম্পর্ক একদম পাঠক আর পাঠ্যের সম্পর্কের মতন। কেউ আঁকতে ভালোবাসে, কেউ সেই আঁকা দেখে তার ভেতরের সমস্তটা নিংড়ে নিতে চায়- ঐ যে বললাম পাঠকের মতো। ভারতীয় ইতিহাস বিভিন্ন চিত্র তথা চিত্রকলার সাক্ষী। ভাবলে অবাক হতে হয় এমন অনেক চিত্র বা তদ্সম্বন্ধিত অনেক অনন্য গাঁথা আমাদের এবং আমাদের ইতিহাস, শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছে। যারা এখনো তাদের অটল মহিমায় বিরাজমান।
এমন একটি চিত্রকলা হল- সাউড়া চিত্রকলা। একসময়ে দেওয়াল চিত্রে সীমাবদ্ধ এই কলা, বর্তমানে আর দেওয়ালে আটকে নেই। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি, জামা কাপড়, বিভিন্ন গৃহ সজ্জার বস্তুতে ব্যবহৃত হচ্ছে। শিল্পীরা তাদের কাজে এই চিত্রকলা অঙ্কন করে তাকে বাজারজাত করছেন এবং সমৃদ্ধও করছেন। যার মধ্যে বিখ্যাত হল তসর সিল্কের ওপর সাউড়াা চিত্রকলা।
প্রাচীনত্ব নবীনত্বের ছোঁয়ায় পক্ক হয়ে উঠেছে। আগে যেখানে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট রং ব্যবহার হত এখন সেখানে আধুনিক রং ব্যবহার করা হয়। এই চিত্রকলার কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় যেগুলো না বললেই নয়। সেগুলো হল: ছবির মধ্যে এই আদিম প্রজাতির মানুষের সমাজ জীবনের চিত্র ফুটে উঠেছে। যে সময়ে এর প্রচলন বেশি ছিল সে সময় শুধু শুভ অনুষ্ঠানে এগুলি আঁকা হতো।
এই চিত্রে মাছের জালের বুননের মতো কিছু অংশ দেখা যায়। নারী-পুরুষের তেমন কোনো পার্থক্য নেই তবে চিত্রস্থিত এই আকৃতিগুলি বৃহৎ আকারের হয়। বলা হয় যে, ভারতের উড়িষ্যার ‘সৌর’ উপজাতির জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি এই চিত্রের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়। মূলত বাড়ির দেওয়ালে এই চিত্রকলা আঁকা হত। মানুষ, পশু, গাছ, সূর্য, চন্দ্র প্রভৃতির বস্তু বা চিহ্নের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে এই চিত্রকলা সম্পূর্ণতা পায়। এর আদি নিদর্শন পাওয়া যায়- গজপতি, কোরাপুত, গজ্ঞাম প্রভৃতি জায়গায়। পুরাণে রামায়ন, মহাভারতেও এর কথা বিবৃত আছে। ভারতীয় শিল্পকলায় এমন অনেক গল্প আজও গ্ৰথিত আছে, যার কিছুটা হারিয়ে যাচ্ছে আর কিছুটা আধুনিকতার মোড়কে ফিরে আসছে।