আমি হ্যামলেট হতে চাই

নাটকের ফার্স্ট বেল হোক বা সিনেমার অ্যাকশন— শুনলে আজও ব্যর্থ হওয়ার ভয় পান। থিয়েটারের পাশাপাশি সাফল্য পেয়েছেন সিনেমাতেও। টাকার জন্য যাত্রা করতেও দ্বিধাবোধ করবেন না। এই প্রথমবার পুজোতে তার সিনেমা রিলিজ হচ্ছে। সবকিছু নিয়েই LaughaLaughi-তে খোলামেলা আড্ডায় থিয়েটারজগতের অতিপরিচিত ব্যক্তি অর্ণ মুখোপাধ্যায়। সাক্ষাৎকার নিলেন প্রসূন চন্দ।

■ LaughaLaughi-তে আপনাকে স্বাগত।

◆ ধন্যবাদ।

■ এবছর পুজোয় আপনার সিনেমা প্রথমবার রিলিজ হচ্ছে? কতটা এক্সাইটেড?

◆ খুবই। ছোটবেলায় পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর সময় যেরকম অনুভূতি হতো এখনো সেই একইরকম অনুভূতি হচ্ছে। তবে পরীক্ষার রেজাল্টটা ছিলো সম্পূর্ণ আমার আর এটা একটা গোটা টিমের রেজাল্ট। যেখানে প্রায় একশোজন মানুষের ঘাম-রক্ত-কষ্ট মিশে আছে। তাই ১২ই অক্টোবরের রেজাল্টের জন্য আমরা সবাই খুবই উত্তেজিত।

■ সিনেমার জন্য এবার তো প্রথমবার নাচ করলেন। অভিজ্ঞতা কিরকম?

◆ নাটকের খাতিরে এর আগে বহুবার কোমর দোলাতে হয়েছে। তাই এটা প্রথম বলা ভুল। তবে সিনেমার জন্য প্রথমবার নাচ করলাম। সাথে দেব, খরাজদা, অপুদা। দেবের কথা ছেড়েই দিলাম। উনি নাচে তুখোড়। তবে বাকি দু’জন সেভাবে নাচ না পারলেও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি দিয়ে দর্শকদের মাতিয়ে রাখবেন। তাই সেদিক ভেবে একটু ভয় কাজ করছিলো। তবে আমাদের কোরিওগ্রাফার বাবা যাদব খুব হেল্প করেছেন আমায়। আশা করি, খুব একটা ঝোলাইনি।

Smoking is injurious to health

■ শ্যুটিং-এর সময় কতটা হইচই করেছেন?

◆ দেখো আমাদের হইচইটা শুরু হয়েছে সিনেমার ঘোষণার দিন থেকেই। পুরো কাস্ট ঠিক হয়ে যাওয়ার পরেও দুই নায়িকার কাজ ছেড়ে যাওয়া, তারপর আবার রি-শিডিউল তৈরি করা। তারপর এরকম একটা হিউজ ইউনিট নিয়ে উজবেকিস্তানে শ্যুট করতে যাওয়া। সেখানে গিয়ে একটা ফ্যামিলির মতো সবাই মিলে একসাথে খাওয়া, থাকা। সবমিলিয়ে তুমুল হইচই হয়েছে।

■ অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ই আপনাকে সিনেমায় প্রথম সুযোগ দিয়েছিলেন। এই নিয়ে ওনার সঙ্গে দু’টো কাজ হয়ে গেলো। কেমন লাগে ওনাকে পরিচালক হিসেবে?

◆ আমি বরাবরই শুধুমাত্র অভিনেতা হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবেও ওনার গুণমুগ্ধ। পরিচালক হিসেবে উনি কেমন সেটা আর আমার বলার দরকার নেই। তবে মানুষ হিসেবে উনি অনন্য। বিভিন্ন বিষয়ে ওনার অগাধ জ্ঞান। রাজনীতি থেকে শুরু করে খেলাধূলা, সিনেমা সব বিষয়েই এত সুন্দর তথ্য উনি যে রাখেন, জানলে অবাক হয়ে যাবে যে কেউ। তাই ওরকম একজন মানুষ তথা ডিরেক্টরের সাথে পরপর দুটো ছবিতে কাজ করা সত্যিই সৌভাগ্যের।

■ অনেকদিন পর উনি নিজের জঁরে অর্থাৎ কমেডি ছবিতে ফিরে গেলেন। সেটা নিয়ে কিছু বলবেন?

◆ না না। আমি মনে করি কোনো শিল্পীর নিজস্ব কোনো জঁর থাকে না। হ্যাঁ ওনার কমেডি ছবিগুলোই হিট হয়েছে বেশি। তবে যেই মানুষটা ‘কবীর’ বানাতে পারে, ‘টুসকি’ বানাতে পারে সেই মানুষটার নির্দিষ্ট কোনো জঁর থাকা উচিৎ নয়। টুসকির মতো বিষয় নিয়ে সিনেমা করা চাট্টিখানি কথা নয়। হয়তো অন্যান্য সিনেমার প্রোমোশনের ভিড়ে বা টলিপাড়ার মনোপলিতে সিনেমাটা হারিয়ে গেলো। কিন্তু ওরকম একটা কনটেন্ট নিয়ে সিনেমা করার ধক সবার থাকে না।

■ সেটে মানুষটা কেমন? খুব কড়াকড়ি করে নাকি ছাড় দেয়?

◆ সেটে মানুষটা এতই গম্ভীর হয়ে থাকেন যে, দেখলে বোঝাই যায় না এই মানুষটাই এরকম দমফাটা হাসির সিনেমা বানাতে পারেন। মাঝেমধ্যে খরাজদা, অপুদা ওনাকে এই নিয়ে রাগাতেন, লেগপুল করতেন। তবে ওনাকে কোনোদিন রাগতে দেখিনি। কড়াকড়ি করেন না ঠিকই তবে কাজের ক্ষেত্রে বড্ড সিরিয়াস।

■ দেবের সঙ্গেও তো এই নিয়ে দুটো কাজ করে ফেললেন। কেমন লাগলো?

◆ এর আগে ‘কবীর’-এ আমরা দু’জন ছিলাম ঠিকই, তবে এক ফ্রেমে এই প্রথমবার কাজ করার সৌভাগ্য হলো। বেশ ভালো লাগলো। উনি এই সিনেমার হিরো আবার প্রযোজকও। তাই দুটো দিকই তাকে সমানতালে বজায় রাখতে হয়েছিলো। আর তিনি সেটা প্রমাণও করেছেন নিজের অভিনয় দিয়ে।

With Saswata Chatterjee & Dev

■ প্রযোজক দেব এবং অভিনেতা দেব— দু’জনকেই একদম কাছ থেকে দেখেছেন। কোন দিকটা বেশি ভালো বলে আপনার মনে হয়?

◆ আসলে এই প্রশ্নটা বড্ড গোলমেলে। সেভাবে আমি কখনো বিষয়টাকে আলাদা করে দেখিনি। প্রযোজক হিসেবে তিনি যে গোটা ইউনিটকে কতটা আগলে রাখেন, সেটা সামনে থেকে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। এমনও হয়েছে আমরা সকাল ১০-টার মধ্যে লোকেশনে পৌঁছে গেছি। কিন্তু ক্যামেরা, প্রপস কিছুই এসে পৌঁছায়নি তখনও। শেষে দেখা গেলো শ্যুটিং শুরু হতে হতে বিকেল। আর বিদেশে একটা মিনিট নষ্ট হওয়া মানেও অনেক টাকা ক্ষতি। সেরকম একটা পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও দেবকে কোনোদিন রাগতে দেখিনি। সেইভাবে নিজের অভিনয়ের ক্ষেত্রেও তিনি নিজের সেরাটাই দিয়েছেন। তাই কোনো একটা দিক এগিয়ে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না। কারন একটা সত্তা এগিয়ে রাখলে, অপর সত্তাকে অপমান করা হবে।

■ সিনেমায় আপনার চরিত্রটা নিয়ে একটু যদি বলেন।

◆ সংক্ষেপে কিছুটা বলছি। সিনেমায় আমার চরিত্রের নাম আজম খান। যে একজন গ্যারেজ মেকানিক। পর্দায় সেই চরিত্রটাই আমি যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। একজন নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ যেমন হয় এখানে আমিও তাই।

■ এরপর আপনার আর কি কি কাজ আমরা দেখতে পাবো?

◆ এরপর অরুন রায়ের ‘হীরালাল’ নামক একটি ছবিতে অভিনয় করছি। তারপর এবছরের শেষের দিকে বা পরের বছরের শুরুতে হয়তো আরেকটা ছবি আসবে জিৎ চক্রবর্তীর ‘শেষের গল্প’। এটা ‘শেষের কবিতা’র একটা অ্যাডাপ্টেশন বলতে পারেন। যেখানে আমি অভিনয় করছি স্বয়ং সৌমিত্রবাবুর (সৌমিত্র চ্যাটার্জী) সাথে।

■ থিয়েটার জগতেও আপনি একজন পরিচিত ব্যক্তি। তো আপনি কোথায় অভিনয় করতে গিয়ে বেশি চাপ অনুভব করেছেন? থিয়েটার নাকি সিনেমা?

◆ আমি চাপ সবসময়ই সমান অনুভব করি। প্রায় এক দশকের বেশি হয়ে গেলো থিয়েটার করছি। তবুও আজও যখন নাটকের ফার্স্ট বেল, সেকেন্ড বেল, থার্ড বেল পরে মনের ভেতর একটা চাপ অনুভব করি। মনে হয়, ডায়লগগুলো ঠিকঠাক বলতে পারবো তো? আবার সিনেমাতেও যখন ডিরেক্টর অ্যাকশন বলেন, তখনও একটা ভয় কাজ করে। আসলে এই চাপ বা ভয় যতদিন আছে ততদিন আমি নিজের সেরাটা দিতে পারবো।

■ থিয়েটারের দর্শকদের সঙ্গে সিনেমার দর্শকদের কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন?

◆ আমি সেরকম কোনো পার্থক্যের মধ্যে কোনোদিনই যেতে চাই না। আমি দর্শকের থেকেও সেই মানুষটার ওপর বেশি জোর দিই। আসলে মানুষ বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্নরকম আচরণ করে। তারা থিয়েটারে যেমন আচরণ করেন, সিনেমা হলে সেরকম করেন না। তাই মানুষের দেখার চাহিদাটা ক্ষেত্রবিশেষে পরিবর্তন হয়, তবে আসল মানুষটা একই থাকে।

■ আপনার স্বপ্নের কোনো চরিত্র আছে যেটা আপনি করতে চান?

◆ হ্যামলেট।

■ ভবিষ্যতে আপনাকে কি টেলিভিশনে দেখা যেতে পারে?

◆ টেলিভিশনে যদি কখনো কাজ করি, তবে সেটার প্রথম কারণ হবে অবশ্যই অর্থ। আর তাছাড়াও আমার যদি মনে হয়, অভিনেতা হিসাবে নিজেকে আরো এক্সপ্লোর করা দরকার তাহলে আমি যাত্রাতেও কাজ করতে পারি। কিন্তু এখনও অবধি সেরকম কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে উড়িয়েও দিচ্ছি না।

■ আমাদের পাঠকদের উদ্দ্যেশ্যে যদি কিছু বলেন।

◆ LaughaLaughi-র পাঠকদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, তোমরা পুজো খুব ভালো করে কাটাও। মজা করো, আনন্দ করো তবে অন্যের নিরানন্দের কারণ যাতে না হও সেই দিকটাও খেয়াল রাখো। আর অতি অবশ্যই সিনেমা হলে গিয়ে ‘হইচই আনলিমিটেড’ দেখো। ১২ তারিখ রিলিজ। আর LaughaLaughi-তে যে সমস্ত ইন্টারভিউ, লেখা বেরোচ্ছে সেগুলো ফলো করতে থাকো। মনে করে LaughaLaughi-র ইউটিউব চ্যানেলটা সাবস্ক্রাইব করে ফেলো। কারণ আমি মনে করি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মই আগামী দিনে আমাদের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠবে। তাই এই কাজের সঙ্গে যে বা যারা যুক্ত আছো, আমার তরফ থেকে তাদের অনেকটা ভালোবাসা জানাই।

ধন্যবাদ স্যার। আপনার ব্যস্ত শিডিউল থেকে সময় বের করে আমাদের সাথে যোগ দেওয়ায় আমরা খুবই খুশি। আমাদের টিম LaughaLaughi-র পক্ষ থেকে আপনার আগামী ছবির জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।

  • প্রসূন চন্দ
Facebook Comments Box
Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Recent Posts

SVF Music Unveils April Edition of “Banglar Gaan Indies”

Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…

4 months ago

Mimi Chakraborty and Nabila to Star Alongside Shakib Khan in ‘Toofan’

Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…

5 months ago

Why Does a Rich Chicago Law Firm Keep Suing Indian Tribes?

This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…

9 months ago

Anupam Roy’s ‘Aami Sei Manushta Aar Nei’ is a Musical Masterpiece

In a spectacular celebration coinciding with the birthday of the iconic actor Prosenjit Chatterjee, the…

10 months ago

অনুষ্কা পাত্রর কণ্ঠে শোনা যাবে দে দে পাল তুলে দে

হিমেশ রেশামিয়ার পর সুরাশা মেলোডিজ থেকে অনুষ্কা পাত্রর নতুন গান পুজো আসছে মানেই বাঙালির নতুন…

10 months ago

Srijit Mukherji’s Dawshom Awbotaar is On a Roller Coaster!

The highly awaited trailer of grand Puja release, "Dawshom Awbotaar", produced by Jio Studios and…

10 months ago