অ্যাঙ্কর তথা সাংবাদিক অর্কময় দত্ত মজুমদার

অর্কময়, ঠিক কবে সিদ্ধান্ত নিলেন আপনি একজন নিউজ অ্যাঙ্কার হবেন?

আসলে আমি ঠিক সিদ্ধান্ত নিইনি সেইভাবে। ভাবিওনি কখনও সেইভাবে অ্যাঙ্কারিং করব। যখন আগের চাকরি ছাড়ব ভাবছি, এদিক ওদিক চাকরির খোঁজ করতে করতে হঠাৎ ‘জি ২৪ ঘন্টা’ তে চাকরির সুযোগ এল। আমি একটু স্কেপটিক্যাল ছিলাম বিযয়টা নিয়ে। কারণ সাংবাদিকতার এই দিকটাকে পেশা হিসেবে বেছে নেব তা এর আগে কখনো ভাবিনি।

আমি চিরকালই রিপোর্টিং করে এসেছি। কয়েকদিন সময় নিই চিন্তাভাবনা করার জন্য। তবে এই সময় আমার উপর ভরসা রেখেছিলেন আমার এডিটর অনির্বাণ চৌধুরি ও প্রাক্তন ডেপুটি এডিটর ধ্রুবজ্যোতি প্রামাণিক।

আরেকজন যিনি আমাকে খুব বেশি করে সাহস জুগিয়েছিলেন তিনি আমার প্রাক্তন বস ও সাংবাদিকতায় আমার মেন্টর অনীক পাল। এরপর ইন্টারভিউ ও অডিশন দিই, সিলেকশন হয় আর ১০.০১.২০১৯ থেকে যাত্রা শুরু। তবে বর্তমানে আমি ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ জয়েন করেছি।

আপনি কী নিউজ অ্যাঙ্কার হিসেবেই মিডিয়া ইন্ডাসট্রিতে জার্নি শুরু করেছিলেন? অন ক্যামেরা আপনার প্রথম কাজের অভিজ্ঞতা যদি একটু শেয়ার করেন।

যেমনটা আগেই বললাম, আমি রিপোর্টার হিসেবেই কাজ শুরু করেছিলাম। ইনফ্যাক্ট আমি এখনও বাংলা সংবাদ মাধ্যামের সেই বিরলতম দু’জন মানুষের মধ্যে একজন যে নিয়মিত রিপোর্টিং ও অ্যাঙ্কারিং দুটোই করেছে । এক্ষেত্রে আমার একমাত্র পূর্বসুরি মৌপিয়া নন্দী।

প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম এস.আর.এফ.টি.আইয়ের একটি শর্ট ফিল্মের জন্য। তবে আপনার প্রশ্ন বোধহয় সাংবাদিকতার ক্ষেত্র নিয়ে। সেকথা যদি বলি… তখন আর.প্লাস-এ চাকরি করতাম।

আবহাওয়া সংক্রান্ত স্টোরির জন্য পি.টি.সি দিয়েছিলাম। সেই প্রথম। তার আগে যেখানে ইন্টার্ণশিপ করতাম সেখানকার বস, সৌগত মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে শিখেছিলাম পি.টি.সি-তে কী বলব তা আগে থেকে ভেবে নিতে হয়, প্রয়োজনে এক জায়গায় লিখে রাখতে হবে। সেইমতই পি.টি.সি’র সারমর্ম হাতে লিখে রেখেছিলাম।

এরপর বাকিটা সামলে দেন অরূপ আচার্য্য, অর্থাৎ সেইদিন আমার সঙ্গে যে চিত্রসাংবাদিক দাদা বেরিয়েছিলেন তিনি। কিভাবে দাঁড়াব, কোনদিকে তাকাব, পুরোটাই অরূপদা বলে দেন। আমি খালি দাঁড়িয়ে বকবক করেছিলাম।

আপনার ছাত্রজীবন কোথায় কেটেছে?

কলকাতায়। আমি আগাগোড়া এই শহরেই থেকেছি। স্কুল ছিল সল্টলেকের হরিয়াণা বিদ্যা মন্দির এবং কলেজ ছিল শ্যামবাজারের রাজা মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজ। মাস্টার্স করেছি রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তবে সাংবাদিকতা আমার মূল বিষয় ছিল না কখনোই।

আপনি জানালেন যে আপনি রবীন্দ্রভারতীর ছাএ, তবে সাম্প্রতিক কালে সেখানে যে কুৎসিত ঘটনা ঘটেছে, তা সম্পর্কে আপনার কি মতামত?

রবীন্দ্রনাথের লেখাকে বিকৃত করার সমর্থন যেমন আমি করিনা। ঠিক তেমনই এই ঘটনায় তাঁর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে শুনলে হাসি পায়। তিনি এই সমস্ত কিছুর অনেক উর্ধ্বে। আমাদের চারপাশে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নজর এড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের উচিত সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা।

যতদূর জানি আপনি অ্যাক্টিং করতেন, তবে অভিনয় ছেড়ে অ্যাঙ্কারিংকে কেন পেশা হিসেবে বেছে নিলেন?

হ্যাঁ, আমি অভিনয় করতাম ঠিকই। তবে সেটা পেশাগতভাবে নয়। আউট অফ প্যাশন ফর সিনেমা। কয়েকটা শর্ট ফিল্ম করেছি, যার মধ্যে একটা সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যাণ্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটের এক ছাত্রের জন্য।

আর দু’বছর কলকাতার এক প্রখ্যাত নাট্যদলে কাজ করেছি। নিজেরা বন্ধু-বান্ধব মিলে কিছু ডকুমেন্ট্রি ও শর্টফিল্মও বানিয়েছি। সুতরাং অভিনয় ‘ছাড়ার’ মত কিছু হয়নি।
আমি সাংবাদাকিতাকে পেশা হিসেবে বেছেছি, শুধু অ্যাঙ্কারিংকে নয়।

অ্যাঙ্কারিং যখন পেশা হিসাবে বেছে নিলেন তখন পরিবারের সবার রিঅ্যাকশন কেমন ছিল? সবাই কী সাপোর্ট করেছিল?

আবারও বলি অ্যাঙ্কারিং নয়, আমি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছেছিলাম। আর আমার পরিবার বলতে আমার মা ও বোন। আমার পেশাগত কোনও সিদ্ধান্তেরই তারা বিরোধিতা করেননি।

ইনফ্যাক্ট যখন রিপোর্টিং থেকে অ্যাঙ্কারিংয়ের দিকে আসি মা আমাকে সবথেকে বেশি উৎসাহ দেন। এখানে একটু বলে রাখতে চাই, আমার মা আমার শিরদাঁড়া। উনি আছেন তাই আমি শক্ত সামর্থ দাঁড়িয়ে আছি।

আপনি তো সাহিত্যের ছাত্র, ইনফ্যাক্ট দারুণ ব্লগ লেখেন.. এই বিষয়ে কোনো ফিউচার প্ল্যান আছে?

শিক্ষকতা বা রিসার্চ আমার দ্বারা হত না। আর আমার অনুসন্ধিৎসু মন সাংবাদিকতার দিকেই ঝুঁকেছিল।

সমস্ত অ্যাস্পায়ারিং সাংবাদিকদের বলতে চাই জার্নালিজম আর মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়া অ্যাডেড অ্যাডভান্টেজ বটেই তবে যেকোনও স্ট্রিম থেকে এসেই সাংবাদিকতা করা যায়, কারণ এখানে আসল পড়াশুনো ফিল্ডে হয়, ক্লাসরুমে না।
হয়তো দারুণ ব্লগ লিখি না। তবে লিখি। আমার থেকে অনেক ভালো লেখেন আমার বন্ধু অরিত্রিক ভট্টাচার্য্য।

আমার লেখাগুলি নিয়ে ভবিষ্যতে নিজে থেকে কিছু করে হয়ে ওঠা হবে বলে মনে হয় না। এ’ব্যাপারে আমি বড্ড খামখেয়ালি।

এখন মিডিয়া পারসনসদের স্ট্যাটাস সেলিব্রিটিদের থেকে কম কিছু নয়, এই রূপলী জগতে তো অনেক রকম ইনসিকিওরিটি কাজ করে।আপনি কখনও কোন কারণে ইনসিকিওর ফিল করেছেন?

আমার মনে হয় এইটা কোনও সাংবাদিক যেদিন বিশ্বাস করতে শুরু করবে সেদিন থেকে সে আর যাই থাকুক, তিনি সাংবাদিক থাকবেন না। সংবাদ মাধ্যম রূপালী পর্দা নয়। প্রতিনিয়ত, প্রতিমূহুর্তে সজাগ থাকতে হয়।

কিচ্ছু স্ক্রিপ্টেড থাকেনা। সব বদলাতে থাকে। কোনো রিটেক থাকে না। মাথার ঘাম মাটিতে ফেলতে হয়, তবেই সফল হওয়া যায়।
আর ইনসিকিওরিটি? হ্যাঁ, আছে। তবে সেটা খবর মিস করার। অ্যাঙ্কারিংয়ের সময় গতকালের থেকে বেটার না করতে পারার। নিজের কাছে হেরে যাওয়ার। ব্যস।

নানা বিষয়ে বাকবিতন্ডা খুব স্বাভাবিক ভাবেই মানুষকে এক্সাইটেড করে তোলে। এই ছোট্ট ফর্মুলা ব্যবহার করে কম বেশি প্রত্যেক নিউজ চ্যানেলের টক শো গুলো উত্তেজনায় ঠাসা। অ্যাঙ্কার পার্সনকে অনেক সময় অ্যাগ্রেসিভ রোল প্লে করতে দেখা যায়। এই বিষয়ে আপনার কী মত?

প্যানেলে বাকবিতন্ডা এখন ইস এ পার্ট অফ টেলিভিশন জার্নালিজম। সেখানে অ্যাঙ্কারের কাজ হল সবার মাধ্যমে সত্যিটা বের করে আনা। তার জন্য প্রয়োজনে অ্যাগ্রেসিভ হতে হলে, হতে হবে। এটা আমাদের পার্ট অফ দ্য জব।

২৪ ঘন্টা এক্সক্লুসিভ নিউজ পরিবেশনের প্রতিযোগীতায় অনেক সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ খবর দৃষ্টিগোচর হয় না। এটা কী আপনি বিশ্বাস করেন? যদি করেন তবে এর থেকে মুক্তির উপায় কী?

দেখুন চ্যানেলে এয়ারটাইমের ব্যাপার থাকে। খবর তো অনেক থাকে, কিন্তু গুরুত্ব বিচার করে কোনটা কখন দেখানো হবে তা নির্ধারিত হয়। হয়তো কিছু খবর মিস হয়ে যায় ঠিকই।

কিন্তু সব খবর মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে রাজ্যের সব জেলায় সব কোণায় আমাদের সহকর্মীরা প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন।
তবে এটা ঠিক যে সংখ্যায় বেশি খবর প্রেজেন্ট করার ক্ষেত্রে খবরের কাগজের একটা অ্যাডভান্টেজ আছে। কারণ তাদের জায়গা অনেক।

প্রায়শই দেখা যাচ্ছে রিপোর্টাররা ফিজিক্যালি অ্যাবিউস্ট হচ্ছেন, প্রাণ সংশয় দেখা দিচ্ছে। এই বিষয়ে আপনার কী মনে হয় কী স্টেপ নেওয়া উচিত? কারাই বা এই বিপদতাড়ন করতে পারেন?

আমার মনে হয় আজকের যে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তাতে গোটা দেশ বা গোটা বিশ্বজুড়ে এই ধরণের ঘটনা ঘটছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে। কারণ যেই পক্ষের বিরুদ্ধে কথা বলা হবে সেই পক্ষই হামলা করবে।

এটা কোনও এক পক্ষের সমস্যা নয়। তবে যত আঘাত হানা হবে, আমরা কাজ করতে তত বেশি অঙ্গীকারবদ্ধ হব। প্রয়োজনে আগেও রাস্তায় নেমেছি আবারও নামব। পথেই তো পথ চিনতে হয়। বাকি কাজ তো পুলিস করবে।

এত জনপ্রিয়তা থাকার সত্বেও ক্যামেরা থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ

জনপ্রিয়তা ছিল কিনা জানি না। তবে আমি রাস্তা ঘাটে দৌড়ে, খবর সংগ্রহ করে রিপোর্টিং করতেই বেশি পছন্দ করি। খবরের কাগজের বাই লাইনের একটা মোহ আছে। সঞ্চালনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি কার্যক্ষেত্রে রিপোর্টিং আমার প্রথম ভালোবাসা হয়ে থাকবে চিরকাল।

ভবিষ্যতে যারা এই ফিল্ডে কাজ করতে চান, তাদের জন্য আপনি কী মেসেজ দেবেন?

বলব চটজলদি গ্ল্যামার ও খ্যাতি চাইলে এই প্রফেশনে না আসাই ভালো। টিভিতে মুখ দেখিয়ে নাম কামাতে হলে এই প্রফেশনে আসা উচিত নয়। খবরকে ভালোবাসলে এবং প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস থাকলে তবেই এস। প্রতিনিয়ত শিখে যেতে হবে।

আমি আজও শিখছি এবং অনেক কিছু শিখেছি মৌপিয়া নন্দী বা পিউ রায় বা শর্মিষ্ঠা গোস্বামী চ্যাটার্জি’র মত সিনিয়র বা রুমেলা চক্রবর্তী’র মত সহকর্মীদের কাছ থেকে। এদের প্রত্যেকের সাফল্যের পিছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম। সেইটাই একমাত্র রোড টু সাকসেস।

কোনো একদিনের জন্য যদি সুপার পাওয়ার পান, তাহলে কী করতে চাইবেন?

সত্যজিৎ রায়ের অরণ্যের দিনরাত্রি বা মার্টিন স্কর্সেসের ট্যাক্সি ড্রাইভারের মধ্যে একটি ছবির অভিনেতা হতে চাইব।

জীবনের সেরা মুহূর্ত?

অন্যতম সেরা মুহুর্ত বলতে মনে পড়ছে যেদিন মিন্ট খবরের কাগজে প্রকাশিত আমার একটি স্টোরি নিয়ে আলোচনা মুম্বইয়ের বাণিজ্য মহলে হচ্ছে বলে জানতে পেরেছিলাম। আর যেদিন মায়ের জন্য নিজে একটা রেফ্রিজারেটর কিনতে পেরেছিলাম।

অবসরে কী করেন?

সাধারণত প্রচুর ছবি দেখার চেষ্টা করি, গান শুনি। আর সুযোগ পেলেই ঘুরে বেড়াই।

আমাদের লাফালাফি টিমের জন্য কী বার্তা দেবেন?

অন্যরকম কাজ করছেন। সাহস দেখিয়েছেন। খুব ভালো। নিজস্ব আমেজ হারিয়ে ফেলবেন না। আরও কিভাবে পপুলরাইজ করা যায় সেইটা ভাবুন। আমাকে নিজের কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল।

Facebook Comments Box
Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Recent Posts

পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের CPIM সরকার

হলদিয়াতে পেট্রোকেমিক্যাল কারখানা শুরু হওয়া থেকে সিঙ্গুর থেকে টাটাদের চলে যাওয়া। বান্তলা থেকে ধান্তলা, ওদিকে…

2 months ago

The Legend Rides Again – Official Poster of Raghu Dakat Unveiled

A storm is brewing this Puja. The poster of Raghu Dakat has been revealed, and…

3 months ago

Kolkata to Witness B Praak’s Mesmerizing Performance at ‘Kolkata Odyssey’ on October 20th

The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…

1 year ago

Celebrating Friendship and Togetherness with Pujo Pujo Gondho

In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…

1 year ago

Frustration Turned To Calmness, Thanks To These Websites

The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…

1 year ago

SVF Music Unveils April Edition of “Banglar Gaan Indies”

Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…

2 years ago