বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা। এই মাতৃভাষা কে ভাবপ্রকাশের মাধ্যম করেই ছোট থেকে বড় হয়ে উঠি আমরা। বিশ্বের দরবারে অর্থাৎ বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ থেকে বহুদূরে এক ছোট্ট জনপদেও সযত্নে লালিত হচ্ছে ” বাংলা ভাষা”। নিজেদের মাতৃভূমি মাতৃভাষা বাংলা প্রায় বিপণ্ন কিন্তু পৃথিবীর এই ” সুইট” ল্যাঙ্গুয়েজ বাংলা ভাষাকে পশ্চিম আফ্রিকার বুকে আগলে রেখেছে এক লুপ্তপ্রায় জনজাতি। অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে আফ্রিকার উপকূলবর্তী সিয়েরায় বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তাই ভাষাদিবসের প্রাক্কালে ” মোদের গরব মোদের আশা , আ মরি বাংলা ভাষা ” গানে গলা মেলাবার জন্য সমগ্র বাঙালি জাতির সঙ্গে আফ্রিকার ছোট জনজাতি সিয়েরালিয়নের অধিবাসীরাও সামিল হওয়ার দাবি রাখে।
আফ্রিকায় অনেক উপজাতির বাস তার সিয়েরাও একটি। এই সিয়েরা জাতির জনসংখ্যা প্রায় সাতশো লক্ষের কাছাকাছি। শোনা যায় অন্য সব উপজাতির সঙ্গে বহুকাল ধরেই এরা গৃহযুদ্ধে লিপ্ত।১৯৬১ সালে সিয়েরা ব্রিটিশ দের থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দামামা , অস্থিরতা থেকে তাদের মুক্তি ঘটেনি। আফ্রিকার পশ্চিমের অন্যান্য দেশ গুলিতে এই অরাজকতা ছিলোনা । অন্যান্য দেশগুলি প্রতিবেশী সিয়েরাকে এই চরম সমস্যা থেকে মুক্ত করতে পারেনি।এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে প্রশান্তির ভাব ছড়িয়ে দিতে ত্রাতা হয়ে দেখা দিল জাতি সংঘ। তারা সিয়েরা কে সংঘর্ষের হাত থেকে বাঁচাতে বেশ কিছু সৈন্য ও মোতায়েন করেছিলো। সিয়েরাতে শান্তির পরিবেশ বজায় রাখতে বাংলাদেশের ৭৭৫ জন সৈন্যের উপর দায়িত্ব অর্পিত ছিলো।বল প্রয়োগে নয় সিয়েরার জনজাতি সাথে বিভিন্ন সামাজিক কার্যাবলী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে আত্মিক সম্পর্ক স্থাপনে উৎসাহী হয়ে পড়ে সেনা বাহিনীর দল।ফলে ঐতিহ্যমন্ডিত বাংলাদেশিও সংগীত নৃত্যের সাথে পরিচিত হতে শুরু করে সিয়েরাবাসী। বাংলাদেশের সেনাদের এই আন্তরিক প্রচেষ্টায় সিয়েরাতে বাংলা ভাষা জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। অবশেষে ২০০২ সালে বহু হানাহানি রক্তারক্তি অতিক্রম করে শান্তির মুখ দর্শন করে সিয়েরা।বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অক্লান্ত শ্রমের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০২ সালের ১২ই ডিসেম্বর সিয়েরার রাষ্ট্রপতি তাজন কাব্বা বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে ইংরেজি ও ক্রেওল এর পাশাপাশি ” বাংলা ” কেও সরকারি ভাষার মর্যাদা দান করেন।বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের পর পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে ” বাংলা” ভাষার স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে আপামর বাঙালি জাতির কাছে গৌরবের বিষয়।

Facebook Comments Box

By Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *