LaughaLaughi

You Create, We Nurture

I got a story to tell

হটাৎ পাঁচ বছর পর

রুপক সেই কখন থেকে বাসস্ট্যান্ডে দারিয়ে একটা বাসেরও দেখা নেই | বাসস্ট্যান্ডটাও ফাকা | লাস্ট বাসটায় দুলালদাও ইউনিটেক চলে গেছে |৯:৩০ টা বেজে গেল, আজকেও বসের কাছে ঝার নাচছে কপালে | তার মধ্যে এই জঘন্য বৃষ্টি, যেন আকাশের কোষ্টকাঠিন্য হয়েছে… সারাদিন ঝরে ঝিরঝির করে পরেই চলেছে | পড়লে ঝম-ঝমিয়ে পর না হলে পরিস না, এই ফেচফেচানি পোষায় না রুপকের | কি করে যে এই বৃষ্টি নিয়ে কাব্য লেখে লোকজন কে জানে বাবা…

বাসস্ট্যান্ডে দাড়িয়ে এই সব ভাবছে, হঠাৎ চিন্তায় খেদ পড়ল, কারণ একটা বাস ফুল স্পিডে সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় রুপককে আগাপাশতলা কাঁদাজলে স্নান করিয়ে দিয়ে গেল | মুখ থেকে কাচা খিস্তি বেরিয়ে যাচ্ছিল কি হঠাৎ একটা বাচ্চার খিলখিল হাসির আওয়াজে সে আটকে গেল | বাচ্চাটা তার দিকে তাকিয়েই হাসছে… রুপকের মাথা গরমই ছিল তার ওপর ওই অবস্থা,

-এই তুই হাসছিস কেন রে ? খুব মজা না ? যা ভাগ এখান থেকে…

– হে হে, (কোমরে হাত দিয়ে চোখ গোল গোল করে) না যাব না, কেন যাব?

– তাহলে হাসি বন্ধ কর, আমার এই অবস্থা করে দিল ওই বালে…বাসটা, আর এ হেসে মরছে…

– তা হবে না কেন? বৃষ্টির দিনে রাস্তায় দাড়িয়ে কেউ অরোম ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে পদ্য ভাবে নাকি ? বাসের কি দোষ ?

– এই এই বেশি কথা না তোর? আমি পদ্য ভাবছিলাম তোকে কে বলল ?

– বলবে কেন ? ওপারার তিনুকবি তো এভাবেই সারাদিন আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে.. আমি দেখেছি..

– হ্যা রে হ্যা তুই দেখেছিস না আরো কিছু.. অতিরিক্ত পাকা হয়েছ এই টুকু বয়সে..

– কে ওই টুকু? (চোখ গোল গোল করে) আমি বড় অনেক..

-(এবার হেসে ফেলল রুপক) হ্যা হ্যা তুমি অনেক বড়, বুড়ি ঠাকুমা একেবারে.. তা তোর নাম কি ?

– রানি…

নামটা শুনেই একগাদা স্মৃতির সাগরে ডুবে যাচ্ছিল, সম্বিত ফিরল রানির ডাকে।

– কি গো ? আবার পদ্য ভাবতে বসলে নাকি ?

বলেই আবার হাসতে লাগল রানি । এবার একটা ভালো জবাব দিতে হবে ভেবে কিছু বলতে যাবে কি …

সেক্টর ফাইভ, এস.ডি.এফ , কলেজ মোড়… বাস কন্ডাক্টরের হুংকার শোনা গেল | রুপক রানিকে ছেড়ে তাড়াতাড়ি বাসে উঠে বসল | এমনি দিনের চেয়ে আজ ভিড় অনেক কম তাই জানলার ধারে বসতেও পেয়ে গেল | বাসটা সবে ছেড়েছে জানলার বাইরে দেখে এক আকাশি নীল রঙা শাড়ি পরা এক মহিলা রানির সাথে কথা বলছে | রানি ছোট্ট হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে তাকে কিছু বলছে, হঠাৎ সে স্পষ্ট শুনতে পেল রানির গলা..

– মা দেখো, ওই যে কবিকাকুটা… মহিলা বাসের দিকে তাকালেন আর রুপক মহিলার মুখটা দেখতে পেল, পেয়েই যেন বিদ্যুৎ বয়ে গেল তার শরীরে | মহিলাটি বাসের এদিক ওদিক তাকায়িও ঠিক খুজে পেল না তাকে | বাস তখন গতি নিয়ে নিয়েছে | আসতে আসতে মিলিয়ে গেল রানি আর পরমা |

হ্যা ওটা পরমাই তো, এই মুখ সে হাজার ভিড়েও চিনে নেবে | আজ ৫ বছর আগের পরমা আর এই পরমার মধ্যে কোনই পার্থক্যই ঘটেনি, শুধু সময় আর প্রেক্ষাপটাই বদলে গেছে | ওকে যে সুখ রুপক দিতে পারেনি, যার জন্যে বিবাহের ২ বছরের মধ্যে বিচ্ছেদ অপরিহার্য হয়ে ওঠে, তাই হয়তো পেয়েছে আজ এত বছর পর | সুখ খুঁজে পেয়েছে আমাকে ছাড়াই, এতদিনে বোধহয় আমায় ভুলেই গেছে । আচ্ছা তাহলে মেয়ের নাম রানি কেন রাখল? এই নামটাই তো ওরা এক সাথে ঠিক করেছিল ৪ বছর আগের সেই সন্ধেটায়.. সেই ঝমঝমে বৃষ্টির সন্ধ্যায়, তারা যখন মিলিত হয়েছিল নতুন জীবনের আশায় | অবশ্য, তার এক বছরের মধ্যেই তো কত কিছু ঘটে গেল, বদলে গেল সব একে একে ।

আচ্ছা, পরমার কপালে সিন্দুর ছিল কি? না ! না তা তো ছিল না | তবে কি রানি….

-এস.ডি.এফ আসবেন, এস.ডি.এফ…

-হ্যা বাঁধবেন দাদা, নামব….

Facebook Comments Box
Editorial Team of LaughaLaughi