আমার শেষ কথার শ্রোতারা ,
” আমার শীত যোনিতে না ডুবিলে , আমার মৃত্যু শুনতে পাবে না ……….. আমার কথা শুনতে পাবে না… ” আমার কথা আমি নিজেই শুনতে পাইনি অনেকদিন । বিগত তেত্রিশদিন যাবৎ যখনই কথা বলতে চেয়েছি , বুকের ভেতর থেকে ভাঙাচোরা একটা চিৎকার বেরিয়ে আসত । সেই চিৎকার ঝড়ের মতো তীব্র নয় , ঝড়ের আগের আধো অন্ধকার , হওয়া বইছে কিন্তু থমথমে । কিন্তু আজ তেত্রিশটা না ঘুমানো কাচের রাতের পর আমার কলমের কালো কালি খসখসে কাগজে রিক্ত মনের চাপা কান্না ছাপানোর জন্য ছটফট করছে ।
আমি শর্বরী মন্ডল । না খবরের কাগজের কোনো দুর্গা , দামিনীর মতো মেকি নাম নয় । আমার বাপ মায়ের দেওয়া নাম শর্বরী । বছর তিনেক ধরে একটা সরকারি কোয়েড স্কুলে বায়োলজি পড়াই । একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকি একাই । প্রথম প্রথম স্কুলে শাড়ি পরে যেতাম । একদিন ব্ল্যাকবোর্ডে হৃদপিণ্ডের ছবি আঁকছিলাম , পেছন থেকে কে একটা বললো , ‘ আরে লাল ব্রা তো পুরো চমচম ‘ । কান্না পেয়ে গেছিলো সেদিন । তারপর থেকে যতদিন স্কুলে শাড়ি পরে গেছি , আঁচল দিয়ে পিঠটাকে যতটা পারি ঢেকে রাখি । এরকম অনেক কিছুই শুনতে হয়েছে স্কুলে । আগে গায়ে লাগতো , এখন আর লাগে না । গা সওয়া হয়ে গেছে এসব । আসলে প্রতিটা নারীকেই তার স্তন , নিতম্ব , শরীরী ভাঁজ – খাঁজ পুরুষের চোখের নিচে বাজারী হয়ে যাওয়াটাকে প্রতিদিন প্রতিটা মিনিটে গিলে ফেলতে শিখে নিতে হয় ।
ইয়ার এন্ডিংয়ে ট্যাক্স নিয়ে সেসময় বেশ ঝামেলার মধ্যে ছিলাম । স্কুলে হেডমাস্টারের সই লাগতো বেশ কিছু কাগজে । সেদিন হেডমাস্টার স্কুল থেকেই কোন একটা কাজে বেরিয়ে গেছিলো । আমি স্কুল ছুটির পর অপেক্ষা করছিলাম হেডের কেবিনে । সন্ধ্যে হয়ে যাওয়ার পরও আসছিল না ও । অত বড় স্কুলে আমি একা আর গেটে সিকিউরিটি গার্ডটা আছে । হরেনদা , মানে সিকিউরিটি গার্ড বছর পঞ্চাশ বয়স । খুব ভালো লোক । মা মা করে ডাকে আমায় ।
সন্ধে সাড়ে সাতটায় হেডমাস্টার স্কুলে ঢুকলো । পানের রঙে ঠোঁট লাল করে এসেছেন আর গা থেকে একটা বিশ্রী গন্ধ বের হচ্ছিল । সম্ভবত মদ আর পানের গন্ধ মিশে এমন একটা গা গোলানো গন্ধ হচ্ছিল । হেড এমনিতে হাসি খুশি লোক । সবার সাথেই ভালো সম্পর্ক । তবে তার চোখ দুটি একমাত্র কুকুরের মত । ছিঁড়ে খাওয়ার নজর সবসময় শরীরের দিকে । রোজকার মতো সেদিনও একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত মেপে নিয়ে বললো ,
– কি ব্যাপার শর্বরী ?
– স্যার আসলে আপনার কিছু সই লাগতো ট্যাক্স এর কাগজে । একটু তাড়াতাড়ি করে দিননা , রাত হয়ে গেছে ।
– আরে অত তাড়া কিসের ! একটা কথা বলি শর্বরী , রাগ করবে না তো ?
– বলুন ।
– তোমায় আজ দারুন লাগছে ।
– ওহ থ্যাংক ইউ স্যার ।
– শাড়িতেই তোমাকে সেরা লাগে । তুমি এখন থেকে শাড়ি পড়েই স্কুলে আসবে , কেমন ।
– স্যার সইটা করে দিননা । বাড়ি যাবো । অনেক রাত হলো ।
– আরে তুমি না বড্ডো ছটফট করো… ( চেয়ার থেকে উঠে , আমার পাশে এসে ) কি একটা নেই মনে হচ্ছে ! কি একটা ! কি একটা ! ( ঠোঁটের পাশে একবার আঙ্গুলটা ঘষে , সেটা আমার কপালে ঠেকিয়ে ) টিপ…টিপ…
– স্যার আমি উঠি । কাল সই করবেন । আজ উঠি …
– ( আমার কোমরে হাত দিয়ে ) এই শর্বরী । আজ তাড়াহুড়ো করো নাতো । শর্বরী… শর্বরী…
আমি প্রচন্ড টানে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করলাম নিজেকে । একটা দানবের মতো হাত খামচে ধরলো আমার স্তন । ততক্ষনে আমার শাড়ির আঁচল খুলে ফেলেছে ওই দানবটা । ঠোঁটটা কামড়ে ধরতে চাইছিল বারবার । আমার প্রচন্ড ছটফটানিতে ঠোঁট কেঁটে গিয়ে রক্ত ঝরছে । কুকুরটার জিভ আমার স্তন থেকে নাভি , কোমরের ওপর অনবরত পাক খাচ্ছিল । জ্বলে যাচ্ছিল আমার গোটা শরীরটা । তারপর যখন শক্ত কিছু একটা আমার যোনি দিয়ে শরীরের ভেতর ঢুকেছিল , তারপর আর কিছু মনে নেই আমার । কতক্ষন আমার যোনির ভেতর হেডমাস্টারের পুরুষত্ব ঢুকেছিলো , মনে নেই আমার । কোমরের নিচে একটা প্রচন্ড যন্ত্রনা সঙ্গে নিয়ে যখন আমার জ্ঞান ফিরলো , তখন সামনে দেখলাম হরেনদা দাঁড়িয়ে । আমি চোখ খুলে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম , এমন সময় হরেনদা আমার চুলের মুঠি ধরে বলল , ” জ্ঞান ফেরারই তো অপেক্ষা করছিলাম মাগী । ” বলতে বলতেই প্যান্ট খুলে হরেনদা আমার ওপরে শুয়ে পড়লো । বাঁধা দেওয়ার মতো জোর আমার মধ্যে ছিল না । ‘ মা মা ‘ বলে ডাকতো যেই হরেনদা , সেই আজ আমার যোনির লোভে আমায় নিয়ে খেলছে । এই একটা আবৃত ছিদ্রের কাছে পৃথিবীর সমস্ত সম্পর্ক কেমন এক নিমেশে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় ।
প্ৰায় ভোর রাতের দিকে হরেনদা এসে আমাকে আমার ফ্ল্যাটে ফেলে রেখে যায় । আমার ব্যাগ থেকেই হয়তো চাবিটাবি পেয়েছিল । মেঝের ওপরেই পড়ে ছিলাম । দুপুরের দিকে যখন ঘুম ভাঙে , তখন দেখলাম শরীরে শুধু শাড়িটা জড়ানো । অন্তর্বাস বলতে কিছুই নেই । দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ারের নীচে দাঁড়ালাম । নিজের নগ্ন শরীরটাকে এই প্রথমবার নিজেরই ঘেন্না লাগছে । কোমরের নিচের ব্যাথাটা আরো বেড়েছে তখন । ঘন্টাখানেক শাওয়ারের নীচে দাঁড়াবার পরও নোংরা মনে হচ্চিলো নিজেকে । এই দাগ কিছুতেই ধুয়ে যাচ্ছিল না । তারপর থেকে কতদিন কোনো জামাকাপড় পড়তে পারিনি আমি । শরীরে কোনো আবরণ দিয়ে লজ্জা ঢাকতে পারছিলাম না আমি । আর সবথেকে অদ্ভুত ভাবে সেই রাতের পর থেকে আমার চোখ থেকে এক ফোটাও জল বের হয়নি । কান্না গুলো কেমন যেন চেপে যাচ্ছিলো বুকের ভেতর । প্রতি রাতে আমি আমার শরীরের ওপর ওই দানব গুলোকে তান্ডব নৃত্য করতে দেখেছি । ওদের পুরুষাঙ্গ যখনই চোখের সামনে ভেসে উঠেছে , তখনই তীব্র বেদনায় চিৎকার করেছে আমার যোনি ।
কাউকে বলিনি । বলার সাহস পাইনি বললে ভুল হবে ! আমি কারো সামনে বের হওয়ার সাহস পাইনি বিগত তেত্রিশ দিনে । সবসময়ই মনে হয় যে এই কাপড়ের টুকরো কি ঢাকতে পারবে আমার লজ্জা । আজ আমার পেটে একটি শিশুর ভ্রূণ বেড়ে উঠছে । কিন্তু এটা কার সন্তান ? ওই বজ্জাত হেডমাস্টারটার নাকি আমায় ‘মা’ বলে সম্বোধন করা হরেনদার ? আমি জানি না , জানতেও চাইনা । আমি নিজের ভেতরে এই ভয়ঙ্কর যন্ত্রণার-লজ্জার ফসল বয়ে বেড়াতে চাইনা । আসলে আমি নিজেকে বয়ে বেড়াতে চাইনা আর । আমি আমার এই লজ্জা নিয়ে বাঁচতে পারছি না । আমি আমার পুরোনো আমিকে খুঁজে পাইনা আর ।
আমি বিচার চাই । কিন্তু লজ্জা চাইনা আর । আমি কোন সাহসে যাবো আইনের কাছে । না আমি আর সেই ঘটনার কথা আদালতের সামনে বলতে পারবো না ! না আমি আমার চরিত্রের পবিত্রতার কোনো প্রমাণ দিতে পারব না ! না আমি পিঠ ঢাকা ব্লাউজ কেন পড়িনি , তার কৈফিয়ত দিতে পারব না ! না আমি আমার এতদিনের নীরবতার কারণ দর্শাতে পারবো না ! না আমি আইনের টু ফিঙ্গার টেস্টের সামনে নিজের যন্ত্রণার দলিল পেশ করতে পারবো না !
দশদিন ধরে রক্তের দাগের সেই কালো শাড়িটা সিলিংয়ের থেকে ঝুলছে । আর দেরি নয় , আজই নিজের সাথে নিজের ভেতরের এই প্রানটাকে মুক্তি দেব । আর লজ্জা বইতে হবে না আমার । এই শেষ চিঠি , আমার শেষ শব্দ , শেষ কয়েকটা চিৎকার । কাল পড়বেন হয়তো খবরের কাগজে । আরেকটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলবেন । এভাবেই আরেকটা ধর্ষণের খবর , খবর হয়েই পুরোনো কাগজের স্তূপের ওপর পড়ে পড়ে কালের গর্ভে নিক্ষেপিত হবে । কিন্তু আমার লজ্জা আজ মুছবে । মুক্তি পাবে আজ ……….
ইতি,
‘ আরে ওই রেপড্ মালটা ’