রোজ সকাল ৬টায় স্বপনদা দোকান খোলে, ধূপ দিয়ে চা বসায়, চায়ের কেটলি থেকে ধোয়া বেরোলে রেডিওটা চালু করে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনে | তবে আজ মেজাজটা একটু খিচড়ে থাকলেও এর অন্যথা হয়নি, তাকের ওপর রাখা গণেশের পায়ে পেন্নাম ঠুকে সবে বসতে যাবে একটা বাচ্চা ছেলে দোকানের সামনে এসে দাঁড়াল | গায়ে জামাকাপড় বলতে একটা হাফ প্যান্ট ও একটা ছেড়া গেঞ্জি, বোঝাই যাচ্ছে হত দরিদ্র ঘরের ছেলে | স্বপনদা ওকে দেখেই খিচিয়ে উঠল,

 

-বাবা! এতক্ষণে আসার সময় হল তোর, বল্টু? কি রাজকার্য করছিলি শুনি..

-মায়ের যে খুব জ্বর.. তাই…

-তো আমি কি করব ? তোর মায়ের জ্বর বলে দোকান বন্ধ রাখব নাকি ? যতসব…

যা যা, মেলা বাসন পরে আছে, মাজ গে যা…

বল্টু মাথা নামিয়ে, দোকানের পাশে কলপাড়ে বাসন মাজতে বসল | স্বপনদা চায়ের কাপ গুলো সাজাতে লাগল | আসতে আসতে লোক বাড়ছে দোকানে | এক বয়স্ক লোক লাঠির ওপর ভর করে আস্তে আস্তে এসে সামনের বেঞ্চে বসল, আর তারপরেই ঢুকল ৫ টা ছেলে |

মৈনাক বেঞ্চে বসে ১টা সিগারেট ধরিয়ে বলল,

-দাদা, পাঁচটা চা দিন তো |

-হ্যাঁ বসো বাবা, দিচ্ছি |

মৈনাক,রোহান, জয়, ঋজু আর সুমন, এরা কালকেই মোহিনীপুরে এসেছে, কটা দিন ছুটি কাটাতে | সবাই এক কলেজে পড়ে কলকাতায়, আর সাথী সমাজসেবী সংস্থার সাথে প্রায় ১ বছর ধরে যুক্ত | সেখান থেকেই তাদের বন্ধুত্ব | আজ সকালে উঠে হাটতে বেড়িয়ে চায়ের দোকান দেখে সবাই চলে এসেছে |

-তা রোহান , কাল স্টেশনে আসতে দেরি করলি কেন ? কতক্ষণ আমরা দাড়িয়ে ছিলাম জানিস ?

-আরে, মা ঝামেলা করছিল, বলে কি দরকার এসব করে ? যত বাজে ঝামেলাতে নিজেকে জড়াচ্ছিস…

এই শুনে জয় বলল, “আরে আমারো বাড়িতে সেম কেস.. রোজ শোনায় এসব..”

ঋজু ফুট কাটল মাঝে, “আরে বলবি তো সমাজের সেবা করছি | জীবে প্রেম করে যেজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর…”

ওর বলার ভঙিতেই সবাই হেসে উঠল | সুমন হাসতে হাসতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল, হঠাৎ তার নজর পরল বল্টুর ওপর | বল্টু তখন মাজা প্লেট নিয়ে দোকানে রাখতে যাচ্ছে |

 

সুমন যেন একটু গলা চড়িয়েই সবাইকে জিজ্ঞাসা করল, “এই বালগুলো, আমাদের Project Child Labour টা কতদূর রে ?”

তরুণ চা নিতে উঠছিল, তবে ততক্ষণে বল্টু প্লেটে ৫টা কাপ নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো | একে একে চা নীল সবাই, বল্টু ফাকা প্লেটটা নিয়ে চলেই যাচ্ছিল,সুমন ডাকল তাকে |

-এই ভাই, শোন এদিকে |

বল্টু একবার স্বপনদার দিকে তাকাল, তারপর ভয়ে ভয়ে এগিয়ে এলো |

-বলুন..

-তোর নাম কি ?

-বল্টু…

-আমি সুমন, তা তোর বয়স কত রে ?

-১২ বছর

-হুম..তুই এখানে কাজ করিস ? উনি কেউ হন তোর ?

-হ্যাঁ কাজ করি.. না কেউ হয় না, আমরা এক পাড়ায় থাকি…

-আচ্ছা তুই স্কুলে যাস না ?

– না… মানে..

স্বপনদা এতক্ষণে বিরক্ত হয়ে ডেকেই নীল বল্টুকে | –এই বল্টু এদিকে আয় তো একবার..

বল্টু সুমনের দিকে ফিরে বলল, “আমি যাই এখন.. হ্যাঁ ?”

-হ্যাঁ যা যা.. (বলে সুমন গালটা টিপে দিল বল্টুর)

বল্টু চলে যেতেই মৈনাক বলল, “এই চল এবার উঠি, দেরি হয়ে যাচ্ছে.. ও দাদা টাকাটা নেবেন..”

-হ্যাঁ.. নিচ্ছি.. এই বল্টু যা ২৫টাকা নিয়ে আয় তো |

বল্টু আসতে, সুমন পকেট থেকে ২৫ টাকা আর আলাদা করে ১০টাকা বার করল, ২৫ টাকাটা বল্টুর হাতে দিল, আর হাফ প্যান্টের পকেটে ১০টাকা গুজে দিল |

সুমন নিচু গলায় বলল, “টাকাটা রাখ, আমি পরে আসবক্ষন..”

বল্টু ঘাড় নেড়ে চলে যেতে, ওরা ৫ জন উঠে পরল |

দুপুরের দিকে সুমন একটা কাজ সেরে আবার এলো, এসে দেখে চায়ের দোকানের ঝাঁপ বন্ধ, বেঞ্চগুলো পাতা আছে, তবে জনমানুষ নেই আশেপাশে | ঘণ্টি বাজাতে বাজাতে একটা রিক্সা চলে গেল |

সুমন ঘড়ি দেখল, ৪টে বেজে গেছে দেখে বলল,

-এ বাবা ! বড্ড দেরি হয়ে গেল | ট্রেনটা এত লেট করল না… কখন পৌঁছে যাবার কথা |

উফ, বল্টুর সাথে আজ দেখা হওয়াটা যে খুব দরকার|

বেঞ্চে বসল এসে | একটা সিগারেট জ্বালিয়ে, পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে একটা ফোন করল |

– হ্যালো, জয় ? কোথায় আছিস ?

– আমরা তো এখন রঘুরামঘাটে, তোকে রুমে পেলাম না, তাই আরকি… তুই কোথায় ? চায়ের দোকানে ?

-হ্যাঁ, এসেছি তো | ওখানেই বসে |

-কি বল্টুর খোজে নাকি ?

-না, সেটার জন্যেই তো এলাম | তবে দোকান তো বন্ধ|

-যাহ.. তাহলে ? অন্যভাবে কন্টাক্ট করার রাস্তা নেই ?

-ধুর, আর কিভাবে কন্টাক্ট করব ?

-তাহলে আরকি, একটু বোস, নয়তো বিকেলে একবার ট্রাই করিস, আমাদেরও তো ফিরতে ওরমি হবে |

-না রে, বিকেলে তো আমায় আবার ওই হোমটায় যেতে হবে..

-ওহ, ওই যেটার কথা বিহানদা বলল পরশু ? তাহলে একটু বসেই দেখ | দোকানটা খুলুক..

– হুম.. তাই করি | আচ্ছা.. রাখছি..

ফোনটা কেটে পকেটে ঢোকাল | সিগারেটটা শেষ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে সবে উঠতে যাবে, হঠাৎ দেখে সকালের ওই বয়স্ক ভদ্রলোকটি  আসতে আসতে হেটে আসছে দোকানের দিকে, এসে পাশে বসল তার |

সুমন দোনোমনা করলেও শেষে জিজ্ঞাসা করেই ফেলল,

-আচ্ছা দাদু, আপনি কি এখানে রোজ আসেন ?

-হ্যাঁ, তা আজ প্রায় দশ বছর তো হলই..

-ওহ, কিছু যদি মনে না করেন, একটা প্রশ্ন করব ?

-আরে ধুর মনে কেন করব ? বল বল..

-বলছি কি, এই যে সকালে যে ছেলেটিকে দেখলাম দোকানে, ও কি এপাড়ারই ছেলে ?

-কে বলো তো… ওহ আচ্ছা, বল্টু ?

-হ্যাঁ হ্যাঁ , ওই…

-না না , এপাড়ার হবে কেন ? ওই যে, খালপাড়ের বস্তিতে থাকে | কেন বলত?

-না, মানে… এমনি.. আচ্ছা এই দোকান আবার কখন খোলে ?

-এই তো খুলবে এবার.. ৫টা বাজুক |

একটু থেমে ভদ্রলোকটি আবার বললেন

-তা তুমি কিন্তু বললে না যে তোমাদের বল্টুর সাথে কি দরকার ?

-আসলে, আমি একটি NGOর সাথে যুক্ত | আমরা শিশুশ্রম দূরীকরণ নিয়ে কাজ করছি | এখানে…

-…এসেছ বল্টুকে উদ্ধার করতে | হা হা, হাহা

সুমন হাসি শুনে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করল,

-হাসছেন কেন ? আপনি জানেন না শিশুশ্রম দণ্ডনীয় অপরাধ ? Its punishable under IPC 374. According to the new ammendment to the existing Child Labour (Protection and Regulation) Act, 1986 it is punishable by law to employ children below 14 years… মানে..

-থাক আর মানে বোঝাতে হবে না | ইংলিশ আমিও বুঝি, তবে ওইসব আই পি সি তিসি নিজের কাছে রাখো তো বাবা | ঠাণ্ডা ঘরে বসে রুল বানিয়ে, বড় বড় বুলি আওড়াতে খুব ভালো লাগে | আসল জীবন তো দেখনি, খুব তো সমাজ সেবা কর, কখনো আসল কারণটা খোজার চেষ্টা করেছ ?

সুমন, ভদ্রলোকের উত্তরে জম্পেশ জবাব দিতে যাবে, হঠাৎ এক দঙ্গল মেয়ে বউ তাদের পিছন দিয়ে নিজেদের মধ্যে কি একটা বলতে বলতে চলে গেল , শুধু শোনা গেল কাটা কাটা কয়েকটা কথা | তার মধ্যে বল্টু নামটা শুনে সুমন থেমে গেল |

-আচ্ছা ওরা বল্টু নিয়ে কিছু বলল না ? শুনলেন আপনি ?

-না বাবা, ওসব মেয়েলি কথায় কানপাতা আমার স্বভাব না |

অন্য সময় হলে ভালো একটা উত্তর দিত সুমন তবে এখন তার এনাকে লাগবে, তাই কথা ঘুরিয়ে দিল সে,

-আচ্ছা এখানে কি আর কোন চায়ের দোকান নেই ?

-আছে তো | ওই বস্তিটার একটু আগে |

-তাহলে চলুন না ওখানে যাই, ৫টা তো বেজে গেল, আজ বোধহয় আর এটা খুলবে না… যাবেন ?

-যাব ? আচ্ছা চল তাহলে, অল্প হাটা আছে কিন্তু..

-হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছে, চলুন চলুন..

মনে মনে ভাবল, এই সুবর্ণ সুযোগ, বল্টুকে খুঁজে বার করার , এটাকে কাজে লাগাতেই হবে |

দুজনে হাটতে হাটতে এগিয়ে চলল খালপাড়ের বস্তির দিকে | কাছাকাছি এসে দেখে একটা টিনের চালের বাড়ির সামনে জটলা অনেক লোকের | ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজও আসছে অল্প অল্প | ভিড় দেখে তারা একে ওপরের মুখের দিকে তাকাল,

-কি হয়েছে বলুন তো ? এত ভিড় কেন ?

-কে জানে ? বস্তির মধ্যে এসব না হরদম লেগেই আছে, ছাড়ো তো | চায়ের দোকানটা কিন্তু ওই দিকে, চল চল…

-না, আপনি যান, আমি দেখি কি হল এখানে…

-যা ভালো বোঝো করো | আমি চললাম তবে….

সুমন ভিড়ের দিকে এগিয়ে গেল , ভদ্রলোকটি ধীর গতিতে হেটে ভিড় কাটিয়ে চলে গেল অন্যদিকে  |

সুমন ভিড়ের মধ্যে একজনকে জিজ্ঞাসা করল,

-দাদা এখানে কি হয়েছে ? এত ভিড় কেন ?

কেউ উত্তর দিল না দেখে, সুমন ভিড় ঠেলে ঢুকল ভেতরে | গিয়ে দেখে এক মৃতদেহ শায়িত, আর তার সামনে বসে বল্টু কাঁদছে | সুমন ভাবতে পারেনি এভাবে দেখতে হবে বলটুকে | আঁতকে উঠল সে,

-একি, বল্টু… তুই এখানে ? কি হয়েছে ?

বল্টু চোখ তুলে সুমনকে দেখল | কিছু না বলে মাথা নিচু করে আবার কাঁদতে লাগল | পাশ থেকে কেউ একজন বলল, “ওর মা এই কিছুক্ষণ হল মারা গেছে|”

সুমন বল্টুর দিকে তাকাতে পারছিল না, এই সকালেই যাকে একভাবে দেখল তাকে হঠাৎ এই অবস্থায় দেখবে কল্পনাই করতে পারেনি | হঠাৎ দেখল, একটু দূরে একটা পঙ্গু লোক বসে রয়েছে একা মাথায় হাত দিয়ে | তার দিকেই এগিয়ে গেল সে |

– দাদা শুনছেন ?

– হ্যাঁ বলুন…

– আপনি কি বল্টুর বাবা ?

– হ্যাঁ, কেন বলুন তো ?

– আমি সুমন | আমি একটা সমাজসেবী সংস্থার সাথে যুক্ত…

– আমি বিমল, বিমল লোহার | তা আপনি বল্টুকে চিনলেন কি করে ?

– সকালে চায়ের দোকানে আলাপ হল ওর সাথে, বলেছিলাম বিকেলে আসব | এসে তো যা দেখলাম…

উত্তরে বিমল দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল শুধু | সুমন আবার জিজ্ঞাসা করল,

– আচ্ছা এসব হল কি করে ?

– আসলে কাল রাত থেকে মালার জ্বর | বল্টু সারারাত জেগে সেবা করেছে , সকালের দিকে জ্বর কমতে ও কাজে বেরল ,আমার কাছে মালাকে রেখে | দুপুরের দিকে হঠাৎ আবার জ্বরটা বাড়ায় আমি লোক দিয়ে বলটুকে ডেকে পাঠাই দোকান থেকে | বল্টু বাড়ি ফিরেই ওষুধ আনতে ছুটল, তবে ওষুধ নিয়ে ফিরতে ফিরতেই সব শেষ….

– হুম…কি আর করা যাবে বলুন.. সত্যি ভগবান মাঝে মাঝে এক অদ্ভুত খেলা খেলেন আমাদের সাথে..

আচ্ছা, বল্টু স্কুলে যেত না, না ?

-না…

-কেন ?

-যার বাপ পঙ্গু, মা বোবা তার স্কুলে যাওয়াটা বিলাসিতা..

-কিন্তু ওর তো স্কুলে যেতে পয়সা লাগবে না.. সরকার তো নিখরচায় শিক্ষা দেয় |

– ও স্কুল গেলে, পড়াশুনা শিখলে কি বাড়িতে তিনটে পেট চলবে ? আমি আজ ৫ বছর পঙ্গু হয়ে বসে আছি বাড়িতে | জুট মিলে কাজ করতাম, এক্সিডেন্টে হাতটা চলে গেল, চাকরি হারালাম | আর আপনার ওই সরকার আমার সব কটা টাকা মেরে দিল, এক পয়সা পাইনি | বউটা আমার জন্ম বোবা, অশিক্ষিত | ঠিকে কাজের চেষ্টাও করেছিল, তবে বোবা লোককে কেউ কাজ দেয়না যে |

তারপর একদিন স্বপনদা এসে বলল ওনার চায়ের দোকানে লোক লাগবে, বলটুকে তার পছন্দ | পেটের টান প্রবল তখন, তাই অগত্যা তারপর থেকেই ওখানে যাওয়া শুরু হল ওর |

-কিন্তু ও যে শিশু | ওর কাজ করা আইন মতে নিষিদ্ধ, ধরা পরলে স্বপন বাবুর জেল হতে পারে…

-স্বপনদা চাকরি দিয়ে আমাদের সংসার বাঁচিয়ে দিয়েছে | ওনাকে ধরিয়ে দেওয়ার কোন ইচ্ছা কারুর নেই | বল্টুই যে আমাদের মুখে খাবার তুলে দেয় | তখন ওকে ছাড়া আমাদের গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না …

সুমন একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল,” আচ্ছা… আমি আজ উঠি তবে | পকেট থেকে ১০০ টাকা বার করে বিমলের হাতে দিল,

-এই টাকাটা রাখুন , বল্টুকে বলে দেবেন.. আমি আসলাম |

একবার বল্টুর দিকে তাকিয়ে, সুমন উঠে হন হন করে বেরিয়ে গেল |

সুমন ওখান থেকে সোজা রুমে চলে এলো, এসেই আলো নিভিয়ে শুয়ে পরল, চোখটা একটু লেগেই গেছিল প্রায়, তন্দ্রা কাটল ফোনের আওয়াজে,

-হ্যাঁ বলো বিহানদা..

-কি রে? ওই ছেলেটাকে Rescue করলি?

-না, বল্টুকে আর খুঁজে পাইনি..

-পাসনি, না খোজার চেষ্টাই করিসনি ?

-না, তা না, সত্যি পায়নি গো |

-হুম.. আচ্ছা শোন কাল বর্ধমানের দিকে একটা কারখানায় শিশু শ্রমিকের কথা শোনা গেছে, তুই….

-বিহানদা, শোন না, আমি আর এই প্রজেক্টয় থাকতে পারব না গো | এমনিও সামনে চাকরির কয়েকটা পরীক্ষা আসছে…

-যাহ বাড়া, আগে বলিসনি তো… তোর কিছু হয়েছে রে সুমন ?

-কিছু না গো… এমনি.. রাখি তবে এখন ?

-হ্যাঁ রাখ.. কাল একবার দেখা করিস তো…

-আচ্ছা |

ফোনটা কেটে বিছানার সাইডে রাখল | একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বারান্দায় গেল সে | আজকের দিনটা কিছু কাটল তার, একটা ছোট্ট ঘটনা কত কিছু শিখিয়ে দিল তাকে | হঠাৎ ঘরে ফোন বাজার আওয়াজ পেল, সিগারেট নিভিয়ে ঘরে এসে ফোনটা তুলল,

-বল..

-কি রে বাড়া, বিহানদা বলছে তুই নাকি রিজাইন করছিস ?

-হ্যাঁ..

-কেন? হঠাৎ..

-কিছু না এমনি…

-এমনি আবার কি ? বল্টুর কেসটায় কি হল বলতো তোর ?

-কি আবার হবে ? আসল দুনিয়াটা চিনলাম | আমরা কতটা ভুল সেটা বুঝলাম |

-মানে? কিসব বলছিস ভাই?

-সরকারের বানানো ল নিয়ে আমরা কাজ করছি, শাস্তি দিচ্ছি, তবে এর Alternativeটা কি কেউ ভেবেছে কেউ ?

-কি বলছিস এসব ?

-বলছি, Child Labour Act prohibits children below 14 years to be employed, if found guilty law punishes the defaulter.. তাই তো?

-হ্যাঁ.. তাতে কি? ১৪ বছরের নিচে কাজ কেন করবে ? পড়াশুনা তো বেশী জরুরি, নাকি ?

-আচ্ছা রোহান, তাহলে বল তো কোনটা বেশি জরুরি ? বাঁচা না শিক্ষিত হওয়া ? সরকার ল বানিয়েছে শিশুশ্রম বন্ধ করতে | কিন্তু গরিবের পেট চালানোর ল আছে কি ? আগে alternative  খুঁজতে হবে, তবেই এই সিস্টেমটা বন্ধ করা সম্ভব , নয়তো কোন লাভ নেই এসবে |

-সেটাই রে, পেটের টান যে সবার ওপরে , তারপর সব…. আচ্ছা শোন আমার একটা ফোন আসছে, এখন রাখলাম, কাল দেখা হবে |

-হ্যাঁ, ওকে |

ফোনটা কেটে, একেবারে বন্ধই করে দিল সে | আর ভালো লাগছে না কিছু | আজ একটা ঘটনা, একটা বাক্যালাপ তাকে বুঝিয়ে দিল, তাকে ভাবতে বাধ্য করল, শিশুশ্রম দণ্ডনীয় অপরাধ হলে, দণ্ডটা কে পায় ? আর সত্যিকারের অপরাধীটাই বা কে ?

Facebook Comments Box

By Staff Writer

Editorial Team of LaughaLaughi